ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাজার মূলধন কমেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৬ আগস্ট ২০১৮

বাজার মূলধন কমেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ টানা দরপতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কমছে বাজার মূলধন। গত আট মাসে দেশের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জটিতে বাজার মূলধন কমেছে ৩০ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা। মূলত বড় মূলধনী কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর পতনে বাজার মূলধন এতটা কমেছে। চলতি বছরের শুরুতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২৪৪ পয়েন্ট। গত ২০ আগস্ট সোমবার ঈদের ছুটির আগের কার্যদিবসে এই সূচকের অবস্থান দাঁড়ায় ৫ হাজার ৫৭১ পয়েন্ট। যা বছর শুরুর চেয়ে ৬৭৩ পয়েন্ট বা ১০.৭৫ শতাংশ কম। গত তিন মাসে বাজারে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও সবগুলোই স্বল্প মূলধনের কোম্পানি। এদের পরিশোধিত মূলধন ও শেয়ার সংখ্যা অনেক কম। স্বাভাবিক কারণে নিজ নিজ বাজার মূলধনও কম। তাই এসব কোম্পানির শেয়ারের দর পরিবর্তনে সামগ্রিক বাজারের মূলধনে তেমন প্রভাব ফেলে না। অন্যদিকে আলোচিত সময়ে ব্যাংকিং খাত, জ্বালানি ও বিদ্যুত খাত, ওষুধ খাতসহ বেশ কয়েকটি খাতে ব্যাপক দর পতন হয়েছে। যেসব খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ অনেক। মূল্যসূচক ও বাজার মূলধনে এসব কোম্পানির প্রভাব অনেক। তাই এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর পতনে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন কমেছে। আইডিএলসি সিকিউরিটিজের এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরে ব্যাংকিং খাতে বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ২৮ শতাংশ বা ২০ হাজার কোটি টাকা। বাজার মূলধনের দিক থেকে ব্যাংকিং খাত আমাদের বাজারের সবচেয়ে বড় খাত। তাই এই খাতে বাজার মূলধন যতটা কমেছে, তা অন্য অনেকগুলো খাত মিলেও পুষিয়ে নিতে পারেনি। বিশ্লেষকদের মতে, দুটি কারণে বড় কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমেছে। প্রথমত বেশ কিছুদিন ধরেই বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে বেশ নিষ্ক্রিয়। এ সময়ে তারা শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করেছে বেশি। আর দুটি কারণে এমনটি ঘটেছে। প্রথমত শেয়ার বিক্রি করে তারা মুনাফা তুলে নিয়ে নতুন বিনিয়োগের জন্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের পর্যবেক্ষণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিলÑ ব্যাংকিং খাতের প্রান্তিক প্রতিবেদন ও জাতীয় নির্বাচন। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এখন হয় তো বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তাদের মতো করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেবে। তবে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে তাদের ভেতর যে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে, সেটির কারণে আগামী জানুয়ারি মাসের আগে হয় তো তারা নতুন বিনিয়োগে ততটা সক্রিয় নাও হতে পারে। এদিকে ব্যাংকিং খাতের প্রান্তিক আর্থিক প্রতিবেদন সামগ্রিকভাবে সন্তুষজনক না হলেও বেশকিছু ব্যাংক আগের চেয়ে ভাল মুনাফা করেছে। সেগুলোর শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস বেড়েছে। তাছাড়া এখনও বেশিরভাগ ব্যাংকের পিই রেশিও বা মূল্য-আয় অনুপাত অন্যান্য খাতের শেয়ারের চেয়ে কম। অন্যদিকে দুর্বল মৌলের শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জ নড়েচড়ে বসেছে। ইতোমধ্যে দুটি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে। লেনদেন সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে ৩ কোম্পানির। স্পট লেনদেনে পাঠানো হয়েছে পাঁচ কোম্পানিকে। কয়েকটি কোম্পানির সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা আবার ব্যাংকসহ ভাল মৌলের কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর তেমনটি হলে সূচক ও বাজার মূলধন ফের বাড়বে এমনটি ধরেই নেয়া যায়।
×