ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিমলায় মাদক বিক্রেতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৬ আগস্ট ২০১৮

 ডিমলায় মাদক বিক্রেতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে ডিমলা উপজেলায় ছোটখাটো কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও ডিমলা উপজেলায় মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের গডফাদাররা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিশেষ করে মাদক বিক্রেতাদের সহযোগী হিসেবে তদবিরবাজ হিসেবে কিছু জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে মাদক বিক্রেতারা দিনে দিনে ক্ষমতাসীন হয়ে উঠছে। একশ্রেণীর যুবক ও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে কিছু নামধারী নেতাকর্মী এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে ডিমলা থানার ওসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এলাকার সাধারণ মানুষজন ওসির অপসারণ দাবি করেছে। এলাকাবাসী জানায়, শুক্রবার রাত আটটার দিকে ডিমলা থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে উপজেলার সুটিবাড়ি বাজার হতে গাঁজা বিক্রেতা তিনজনকে আটক করে। এই তিন জন হলো উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নের আতিয়ার রহমানের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৪৫), একই এলাকার মৃত জাহেদ আলীর ছেলে লিটন মিয়া (৪৫) ও একই এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে শাহিনুর (৩০)। এ সময় তাদের কাছে তিন পুরিয়ায় তিন শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া যায়। পুলিশ তাদের গাঁজাসহ থানায় নিয়ে আসে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই তিন মাদক বিক্রেতাকে ছাড়িয়ে নিতে ডিমলা থানায় তদবির করতে ছুটে আসে আনোয়ার,মুন,রাসেল ও সহর আলী। তারা ওসিকে ৫০ হাজার টাকায় ম্যানেজ করে মাদকের মামলার বদলে তাদের ১৫১ ধারায় আটক দেখানোর চেষ্টা করে। শনিবার সকালে ডিমলা থানার প্রেরিত প্রতিবেদনে জেলা পুলিশ অফিসে ওই তিনজনকে ১৫১ ধারায় আটকের কথা বলা হয়। পাশাপাশি ১৫১ ধারায় তাদের শনিবার আদালতে প্রেরণের জন্য তোড়জোড় করা হয়। তবে বিধিবাম। ঘটনাটি ফাঁস হয়ে পড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওই তোলপাড়ে ডিমলা থানার ওসি মফিজ উদ্দিন শেখ বাধ্য হয়ে ১৫১ ধারা বাতিল করে নিয়মিত মাদক মামলা দায়ের করে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে। মামলার বাদী হয় ডিমলা থানার এসআই মাসুদ মিয়া। মামলা নম্বর ১৯ এ বলা হয় ওই তিনজনকে ২৫ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয়। এ ব্যাপারে ডিমলা থানার ওসি মফিজ উদ্দিন শেখের সঙ্গে জনকণ্ঠের এই প্রতিনিধি কথা বললে তিনি বলেন ওই তিনজনের কাছে তিন পুরিয়া গাঁজা পাওয়া গেছে। তাহলে কেন ১৫১ ধারায় আদালতে চালানের চেষ্টা করছিলেন এমন প্রশ্নে তিনি এটি ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করে বলেন ওই তিনজন মাদক বিক্রেতা না তবে মাদকখোর। ডিমলা উপজেলায় অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন হাট-বাজার ও উপজেলা শহরের বিভিন্ন ¯পটে রয়েছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। এসব এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। ছেয়ে গেছে মাদকের ছোবল। উপজেলার বাইসপুকুর চরে ফেনসিডিলের ব্যবসায় করছে নজরুল ইসলাম। সেখানে প্রতিদিন হাজার বোতল ফেনসিডিল কেনাবেচা হয়। ওই এলাকার সাধারণ মানুষ অভিযোগ করে জানায়Ñ আমরা বিষয়টি ডিমলা থানায় বার বার অভিযোগ করার পরও পুলিশ নজরুলকে আটক করে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এলাকার প্রভাবশালী নেতা শিমুলের ছত্রছায়ায় নজরুল দিব্বি ফেনসিডিল বিক্রি করে যাচ্ছে। অপরদিকে এলাকাবাসী জানায় ডিমলার সুটিবাড়িহাট ও টুনিরহাট এলাকাটি মাদকের আখড়া। এলাকাবাসীর অভিযোগ টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়িতে ফেনসিডিলের মূল ব্যবসা করে রফিকুল ইসলাম। তিনি এক প্রভাশালী নেতার নিকটাত্মীয়। গত ১৩ আগস্ট রফিকুল ইসলামের দুই সহযোগী আবেদীন ও আসাদুল মোটরসাইকেলযোগে ৪০ বোতল ফেনসিডিল সুটিবাড়ি নিয়ে আসার পথে তিস্তা ব্যারাজের পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশরা ধাওয়া করে। এতে তারা ৪০ বোতল ফেনসিডল ফেলে দিয়ে পালিয়ে আসে। এ ঘটনায় লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা হয়। তারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। মজার বিষয়, ডিমলা থানার রাইটার হিসেবে পরিচিত রাসেল আলী ওরফে রনি(২৮) ও তার পার্টনার অপর মাদক বিক্রেতা আব্দুল রাজ্জাক(৩০) ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয় জেলা ডিবি পুলিশের হাতে। ২ আগস্ট রাতে মাদক বিক্রিকালে ডিমলা উপজেলা হাসপাতাল এলাকা হতে ১০ ইয়াবা ট্যাবলেটসহ তাদের গ্রেফতারের ঘটনাটি ডিমলায় এখনও তোলপাড় করে রেখেছে। কারণ, রনি ডিমলা থানার ওসির অতিপ্রিয়ভাজন ছিল। রনি গ্রেফতারের পর ডিমলা থানার ওসির মাদকবিরোধী অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এলাকাবাসীর কাছে। তাই এলাকাবাসী ডিমলা উপজেলাকে মাদকমুক্ত করতে বর্তমান ওসির অপসারণ দাবি করেছে।
×