ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বুড়িগঙ্গার খাল ও শাখা খাল ভূমিদস্যুর কবলে

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৬ আগস্ট ২০১৮

বুড়িগঙ্গার খাল ও শাখা খাল ভূমিদস্যুর কবলে

সালাহ্উদ্দিন মিয়া, কেরানীগঞ্জ ॥ কেরানীগঞ্জে ছোট বড় ৬৫টি খাল ছিল যা এখন দূষণ ও দখলের শিকার। এক সময় ভারতের সঙ্গে নৌপথে সংযোগ রক্ষা করা হতো। বর্তমানে খালগুলো একটি ময়লা ও আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদী দখলের পাশাপাশি কেরানীগঞ্জের শাখা খালগুলো ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। ফলে অনেক খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব এলাকার কিছু খাল সম্পূর্ণ ভরাট করে ফেলেছে ভূমিদস্যুরা। আবার কিছু খাল অর্ধেক ভরাট করে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। বাকি খালগুলো ধীরে ধীরে দখলের পাঁয়তারা চলছে। বুড়িগঙ্গার এসব শাখা খাল বেশিরভাগই বয়ে গেছে কেরানীগঞ্জের ভেতর দিয়ে। সর্বত্র ভরাটের ফলে ঐতিহ্যবাহী কেরানীগঞ্জ মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কবলে পড়েছে। খালগুলো এমনভাবে ভরাট করা হয়েছে বর্ষায় এসব খালের পানি উপচে পড়ে। আবার সামান্য বৃষ্টি হলেই দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা থেকে পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে এলাকাবাসী। বর্তমানে ভূমি দস্যুদের কালো থাবায় পড়েছে কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গার পটকাজুড় খালে। এ খালটির উৎপত্তিস্থল হচ্ছে বুড়িগঙ্গা নদীর পটকাজুড় এলাকা থেকে, পটকাজুড় এলাকা দিয়ে ব্রাহ্মণক্ষিত্তা, নেকরোজবাগ দিয়ে, রাজাবাড়ী হয়ে সিংহ নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটরি, যার পুরোটাই দখল ও দূষণের শিকার। আগে পরে কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন খালে প্রশাসনের নজরদারি পড়লেও পটকাজুড় খালে এখনও কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় লোকজনের মতে, খালটির দৈর্ঘ্য ছোট হওয়াতে এবং স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর দখলদারিত্বের কারণেই এই পটকাজুড় খালটিতে কখনোই উচ্ছেদ অভিযান, খনন বা খাল পুনরুদ্ধার কাজ করা হয়নি। অথচ নদ-নদীর নাব্য রক্ষা ও গতিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে গঠিত জলবায়ুর পরিবর্তন ট্রাস্টের এক সভায় শুভাঢ্যার খাল দখলমুক্ত করার জন্য শীঘ্রই অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পানি উন্নয়ন বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ। এ উপলক্ষে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট শুভাঢ্যার খাল খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ইতোমধ্যে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট। অবশ্য এ খনন কাজের টাকা বা কাজ করার মূলে যাবতীয় সহযোগিতা করেছেন ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও রিহ্যাবের সভাপতি নসরুল হামিদ বিপু। প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসে উচ্ছেদ চালানো হবে। তবে সীমানা চিহ্নিতকরণের অজুহাতে শুভাঢ্যার খালে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রাখা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ওই খাল খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। ওই তালিকায় কেরানীগঞ্জের অর্ধশতাধিক খাল ও শাখা খাল চিহ্নিত করা হয়ে ছিল। এবার উপজেলা প্রসাশনের উদ্যোগে শক্তভাবে এর কাজ শুরু হয়েছে। তাদের দাবি এবার তারা খালগুলোকে স্থায়ীভাবে পুনরুদ্ধার করেই ছাড়বে। যার পরিপ্রেক্ষিতে খালের বর্জ্য ময়লা ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজও শুরু হয়েছে। গত ১ জুলাই আবার শুভাঢ্যা খালের কাজ শুরু করে উপজেলা প্রশাসন, আর এবার এর ব্যয় ধরা হয়েছে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা । আর এ প্রকল্পে থাকবে খালের দুপাশে হাঁটার রাস্তা, থাকবে বিশ্রামাগার, মসজিদ ও সৌন্দর্যবর্ধনে নানান কিছু। ইতোমধ্যে শুভাঢ্যা খালের একটি থ্রিডি নক্সাও তৈরি করা হয়েছে অনেকটা হাতির ঝিলের মতো মিল রেখে এবং এবার উপজেলা প্রশাসনের একটাই কথা- খাল পুনরুদ্ধার না করে ঘরে ফিরছি না। বুড়িগঙ্গার কেরানীগঞ্জ এলাকার হাজারীবাগ, বেয়ারা, পানগাঁও, ঢাকা জুট মিল, পাড় গেন্ডারিয়া, মৌলভীর পুকুর পাড়, গেন্ডারিয়া, গোলাম বাজার, চন্ডীতলা, নজরগঞ্জ, মনু ব্যাপারীর ঢাল, নেকরোজবাগ, রোহিতপুর ও হযরতপুর ইউনিয়নের শাখা খালগুলো অধিকাংশই দখল আর দূষণের শিকারে পরিণত হয়েছে। গত তিন যুগ ধরে ভূমিদস্যুরা ডোবানালা ও খালগুলো ভরাট করে গড়ে তুলেছে অবৈধ স্থাপনা। প্রশাসনের নীরবতার সুযোগ নিচ্ছে এসব ভূমিদস্যুরা । মাটি ভরাট কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যক্তিগত মিনি ড্রেজার। ভূমির অবকাঠামোর পরিবর্তন করা বেআইনী হলেও ভূমিদস্যুরা সেদিকে তোয়াক্কা না করে দিনরাত মাটি ভরাটের কাজ করে যাচ্ছে ধলেশ্বরী নদীসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। অবৈধ দখল আর দূষণের কারণে এলাকার সিংহ নদীও পরিণত হয়েছে মরা খালে। তিন দশকে নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকা দখল করে গড়ে তোলা হয়ছে শতাধিক ভবন ও মার্কেট। জানা গেছে, নদী ভরাট ও দখলের সঙ্গে জড়িত রয়েছে উপজেলা ভূমি ও রাজস্ব বিভাগের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। ভুয়া জাল কাগজপত্র তৈরি করে আবার কেউ রাজনৈতিক ছত্র-ছায়ায় থেকে দখল করে নিচ্ছে নদী ও খালের এসব জায়গা। অথচ এ শাখা নদী দিয়ে লোকজন নৌকাযোগে বুড়িগঙ্গা ধলেশ্বরীতে সিংহ নদীতে নিয়মিত যাতায়াত করত। ব্যবসায়ীরা এ নদী দিয়ে রাজেন্দ্রপুর, বিক্রমপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বারিশাল, খুলনা এমনকি ভারতের সঙ্গে যোগাযেগের ক্ষেত্রে ব্যবহর করত।
×