চাকরির দুষ্প্রপাপ্যতা, বেকারত্ব দূরীকরণসহ পুষ্টির চাহিদা মেটাতে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সমন্বিত খামার। চাষ করা হচ্ছে দেশী-বিদেশী নানা ধরনের পশু-পাখি। সরকারী সহযোগিতা এবং প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের সহযোগিতা পেলে খামারিরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা শহরের খোরশেদ আলম, দেশীয় মুরগি, টার্কি মুরগি, দেশীয় ছাগল, কয়েল পাখি, কবুতরসহ গড়ে তুলেছে সমন্বিত খামার। এখানে শুধু টার্কি মুরগির খামার নয় মেহেরপুর জেলায় একমাত্র টার্কির বাচ্চা উৎপাদন খামারটিও তার।
আর তার এ কাজে সহযোগিতা করেছেন তার বড় ভাই আনারুল ইসলাম বাবু। এক সময়ে বেকারত্বের অভাব ঘুচাতে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল তিনি। সেখানে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কয়েক বছরের মধ্যে তিনি দেশে ফিরে আসেন। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শিক্ষিত বেকার যুবক আনারুল ইসলাম বাবু মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। পরে তিনি চাকরির পিছু না ছুটে ডিসের লাইন্সেস নিয়ে ব্যবসা শুরু করে। সেখানেও নানা প্রতিযোগিতা ও প্রতিহিংসার মধ্যে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ছোট ভাই খোরশেদ আলমের পরিকল্পনা ও পরামর্শে সে এখানে অল্পকিছু অর্থ দেয় আর বাকি অর্থ খরচ করে খোরশেদ আলম। আর তাদের দুই ভাইয়ের প্রচেষ্টায় শহরের ঠিক মাঝেই তাদের নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন সমন্বিত খামার।
তবে তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের পক্ষে থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, টার্কি মুরগি অনেক বড় ওজনও অনেক বেশি তাই মুরগিগুলো খামার থেকে তুলে উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ পর্যন্ত নিয়ে যেতে অনেক কষ্ট হয়। তারপরেও তাদের অফিসে নিয়ে যেতে হয়। তাদেরকে খবর দিলে তারা খামারে এসে চিকিৎসা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে।
তার এই খামারে রয়েছে টার্কি মুরগি, দেশীয় মুরগি, দেশীয় ও বিদেশী জাতের ছাগল, কয়েল পাখি, দেশীয় ও বিদেশী জাতের কবুতর, টার্কির বাচ্চা, বিদেশী পাখি ও সবজি চাষ। তার খামারে রয়েছে মোট ৩০০ টার্কি, ৪৫টি বড় টার্কি রয়েছে এর মধ্যে ডিম দেয় ২০টি। আর বাচ্চা টার্কি ৬ মাস বয়স হলেই ডিম দিতে শুরু করবে। এক একটি টার্কি বছরে ১২০ থেকে ১৫০টি ডিম দেয়। প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ১০০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায়। ১ দিনের একটি টার্কির বাচ্চা বিক্রি হয় ২৫০ টাকায় আর কয়েকদিন বয়স হলেই এরদাম বেড়ে হয়ে যায় প্রায় ৮০০ টাকা। এদিকে ৪০০ টাকা কেজি দরে টার্কি মুরগির মাংস বিক্রি হয়। এক একটি টার্কি মুরগি ৩০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। টার্কির পাশের ঘরে রয়েছে কয়েল পাখি। কয়েল রয়েছে ৩০০টি। তার মধ্যে ২০০টি ডিম দেয়। স্থানীয় বাজারে ২ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হয় এ ডিম। এ খামারে ছাগল রয়েছে ৭০টি। এর মধ্যে যমুনা পাড়ি, রামছাগল ও ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল রয়েছে। যমুনা পাড়ি জাতের ছাগলের বাচ্চা হলেই ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়।
এখানে পরীক্ষামূলকভাবে দেশীয় মুরগির খামারও গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে শতাধিক মুরগি ও কবুতর রয়েছে ৭৫ জোড়া। পাশাপাশি সবজি আবাদও করছেন তিনি। এছাড়াও তিনি মেহেরপুর জেলায় এই প্রথম বিভিন্ন মেশিনপত্র ক্রয় করে নিজেই টার্কি মুরগির ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করছেন। প্রতি মাসে ৩০০ পিস বাচ্চা উৎপাদন করছেন। সমন্বিত এ খামার থেকে তার প্রতি মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।
গাংনী উপজেলার ছোট খামারী মশিউর রহমান জানান, আমরা এখান থেকে কয়েল পাখি, টার্কি মুরগি ক্রয় করি। এখানে সব থেকে বেশি সুবিধা একের ভিতর সব। টার্কি, টার্কির বাচ্চা অথবা ডিম সবই এখানে পাওয়া যায়। ফলে সমন্বিত খামারে আসলেই সব কিছুই এখানে পাওয়ায় আমাদের হয়রানি হতে হয় না।
রাইপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সুজনের নেতা মিজানুর রহমান জানান, শিক্ষিত বেকার যুবকদের চোখ খুলে দিয়েছে গাংনীর খোরশেদ। আমাদের দেশ আয়তনে ছোট এবং জনসংখ্যায় বেশি। অল্প জায়গায় খোরশেদের মতো অনেক খামার দেশের বিভিন্ন জায়গায় যদি গড়ে উঠে তাহলে দেশের পুষ্টি ঘাটতি কমার সঙ্গে সঙ্গে আমিষের চাহিদাও পূরণ হতো।
-রমিজ আহসান, মেহেরপুর থেকে
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: