ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভাসমান শিশুই জড়িয়ে পড়ছে অপরাধ চক্রের সঙ্গে

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ২৫ আগস্ট ২০১৮

 ভাসমান শিশুই জড়িয়ে পড়ছে অপরাধ চক্রের সঙ্গে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্ষুধা শব্দের প্রয়োজন হয় না আলাদা কোন ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণের। এই অধিকারটি মূল্যের কাছে কখনো কখনো জীবনও তুচ্ছ মনে হয় কমলাপুর রেল স্টেশনের ভাসমান শিশু-কিশোরদের কাছে। এখানের অনেক শিশুই জড়িয়ে পড়ছে অপরাধ চক্রের সঙ্গে। যা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি বলে মনে করেন অপরাধ বিজ্ঞানীরা। অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া কমলাপুর রেলস্টেশনের এক কিশোর নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানতে গিয়ে বলছিল, কোন কাজ পেলে খুব আগ্রহের সঙ্গেই সেটা করতে চাই। অনেক সময় দেখা মালিক না করে দেন কিংবা কাজ থাকে না। কাজ না থাকলে কয়দিন আর না খেয়ে থাকা যায়? এক সময় বাধ্য হয়েই খারাপ কাজে জড়াতে হয়। ক্ষুধা, মানে না কোন ন্যায়-অন্যায় বা লাভ-ক্ষতির অংক। খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতার দেশে, কমলাপুর রেল স্টেশন যেন বাইরের কোন পৃথিবী। প্ল্যাটফরমে হেঁটে বেড়ানো ছোট ছোট পায়ের গল্পগুলো এখানে আলাদা। এক পকেটমার বলছিল, অনেক সময় দেখা যায় কাজ করতে গেলে অনেকেই কাজে নেন না। কিন্তু আমি তো আর না খেয়ে থাকতে পারব না। তাই পেটের জ্বালায় পকেট মারতে হয়। মৌলিক অধিকারের প্রথম এই প্রয়োজনটি যখন চ্যালেঞ্জের, তখন এই অধিকার আদায়ের নিশ্চয়তা পেতে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে এখানকার ভাসমান শিশুরা। অনেক সময় ফেরার উপায় থাকে না তা দৃশ্যমান। এক কিশোর বলছিল, আমরা একা কেউ এ কাজ করতে পারি না। আমাদের সঙ্গে বড় ভাইয়েরা আছেন। তাদের নির্দেশ মতোই কাজ করতে হয়। বড় অংশটাই তারা নিয়ে নেন। এই পথ ছাড়তে চাইলে নানা হুমকি দেয়া হয়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর বক্তব্যও গতানুগতিক। রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, তাদের জন্য কিশোর আদালত রয়েছে। আমরা নিয়মিতভাবে তাদের আটকের পর মামলা ও চার্জশীট দিয়ে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পথশিশু প্রকল্পের পরিচালক ড. আবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে। তাদের এ্যাগ্রেসিভ না করে ভাল পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসা।’ অন্যদিকে অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব শিশু কিশোরদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার ক্ষেত্রে সমাজ ও রাষ্ট্রের দুটি প্রতিষ্ঠানেরই দায় রয়েছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, কিশোর অপরাধ সংশোধন কেন্দ্রগুলোর অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। ওই জায়গা থেকে বের হয়ে আসার পর কে তার মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাবে সেটারও একটা প্রশ্ন থেকে যায়। রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়েরই এ বিষয়ে দায় রয়েছে।
×