ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার চলছেই

নগরবাসী সচেতন হবে কবে?

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০১৮

নগরবাসী সচেতন হবে কবে?

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি রাজধানীর একটি কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহতের পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারাদেশে ছাত্র-ছাত্রীদের তুমুল বিক্ষোভ হলেও রাস্তার অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। এরপরও বেপরোয়া চালকদের কারণে দেশের বিভিন্ন সড়কে ঝড়ছে তাজা প্রাণ। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনার পরও চালক-পথচারীরা সচেতন হননি। দেখা গেছে বিভিন্ন জায়গায় ফুটওভারব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং থাকার পরও আইন না মেনে রাস্তা পার হচ্ছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। অনেকে উঠতেই চান না ফুটওভারব্রিজে। এমনকি জেব্রা ক্রসিংয়ের নিয়মও মানেন না পথচারীদের বড় একটা অংশ। সরজমিনে গেল শনিবার দুপুর একটার দিকে দেখা যায়, রাজধানীর বাংলামোটরের ফুটওভার ব্রিজের উপর দিয়ে পারাপারের জন্য পুলিশ ও রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা মাইকিং করেও পথচারীদের অবৈধভাবে রাস্তা পারাপার থেকে বিরত রাখতে পারছেন না। এমনকি পথচারীরা এক ধরনের জোর জবরদস্তি করেই রাস্তা পার হচ্ছেন। এ সময় দেখা গেছে, রেড ক্রিসেন্টের এক নারী সদস্য বারবার মাইকিং করে পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে রাস্তা পার হতে নিষেধ করছেন। কিন্তু অনেকেই এই নিষেধ শুনছেন না বরং অনেককেই দেখা গেছে, কিভাবে ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে রাস্তা পার হওয়া যায়, এই ফন্দিফিকিরে ব্যস্ত। এমনি অবৈধভাবে রাস্তা পার হওয়া সুজন নামের এক পথচারী জানান, আমি জানি না ভাই, নিচ দিয়ে যে রাস্তা পার হওয়া যাবে না। প্রতিদিনেই পার হই, তাই আজও চলে এসেছি। মাইকিং করা হচ্ছে তাও শুনিনি। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন- আর এভাবে রাস্তা পার হব না। তার মতো আরও দুইজনকে দেখা গেলো হাতে ভারি ব্যাগ নিয়ে রাস্তা পার হতে। জানতে চাইলে তারা বলেন, এই ভারি ব্যাগ নিয়ে ফুটওভার ব্রিজ পার হওয়া অসম্ভব। তাই নিচ দিয়ে যাচ্ছি। তাদের নাম জানতে চাইলে তারা নাম বলতে রাজি হননি। এদিকে মাইকিং করার পরও অবৈধভাবে রাস্তা পার হওয়ায় আশপাশের লোকজনকে বেশ বিরক্ত হতে দেখা গেছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন পথচারীদের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে রাস্তা পারাপার দেখে। অনেকেই আবার হৈ হৈ করে রাস্তা পারাপারে বাধা দিচ্ছেন পুলিশ ও রেড ক্রিসেন্ট সদস্যদের সঙ্গে। এমনই একজন আবু হায়দার। তিনি বলেন, মাইকিং করার পরেও যারা ইচ্ছা করে রাস্তা পার হচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত। পাঠাও চালক সোহেল মিঞা বলেন, একটা দুর্ঘটনা হলে সবাইতো গাড়ির চালকদের দোষ দেয়। কিন্তু পথচারীদের জন্য যে দুর্ঘটনা ঘটে, এটা কেউ মানতে চায় না। নিউ ভিশন বাসের চালক ফয়সাল মিঞা বলেন, সবাইতো আমাগো দোষ দেয়। ভাই কিছুই বলার নাই। নিজের চোখেই দেইখা যান। ট্র্যাফিকের দায়িত্ব পালনকারী রেড ক্রিসেন্টের সদস্য ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিবিএর শিক্ষার্থী হাসি আক্তার বলেন, এইভাবে রাস্তা পার হওয়া মানুষের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। হঠাৎ করেই তো আর সবকিছু ঠিক হবে না। মানুষকে সচেতন করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি আস্তে আস্তে মানুষ আইন মেনে রাস্তা পার হবে। কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশ উত্তম মৈত্র বলেন, মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আইন না মেনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই হঠাৎ করেই সে আইন মানবে না। এজন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। যাতে করে মানুষ সচেতন হয়। এজন্য রাস্তায় বড় ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া যেতে পারে। এছাড়া গণমাধ্যমের লোকজনকেও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, অবৈধভাবে রাস্তা পার হলে দুইশ টাকা জরিমানা ও তিন দিন জেলের বিধান রয়েছে। কিন্তু আমি তো কাউকে জরিমানা করতে পারি না। এই দায়িত্ব ভ্রাম্যমাণ আদালতের। গত পরশু ভ্রাম্যমাণ আদালত এখানে (বাংলামোটর) পথচারীদের ২৮ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। তারপরও মানুষ আইন না মেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে।
×