ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ১-৩ উত্তর কোরিয়া

কোরিয়ায় থামল বাংলাদেশের রূপকথার অভিযান

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ২৫ আগস্ট ২০১৮

 কোরিয়ায় থামল বাংলাদেশের রূপকথার অভিযান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রত্যাশা ছিল যৎসামান্য। কিন্তু সেই প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে প্রাপ্তি ছিল আরেকটু বেশি এবং নির্র্দিষ্ট করে বললে ‘ঐতিহাসিক এবং স্মরণীয়’ প্রাপ্তি। সেটার আরেকটু উত্তরণ ঘটানোর সুযোগ ছিল শুক্রবার। কিন্তু সেটা আর করে দেখাতে পারলো না বাংলাদেশ জাতীয় যুব ফুটবল দল, এশিয়ান গেমসে। ইন্দোনেশিয়ার সিকারাংয়ের উইবাওয়া মুক্তি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলায় তারা হেরে গেছে শক্তিশালী উত্তর কোরিয়ার কাছে ১-৩ গোলে। এই হারে আর স্বপ্নের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা হলো না লাল-সবুজবাহিনীর। কোরিয়া থামালো বাংলাদেশের রূপকথার অভিযান। প্রথমার্ধে কোরিয়ানরাই বল নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে ছিল (৬১%-৩৯%)। পুরো ম্যাচেও তাই (৫৮%-৪২%)। পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার- পুরো ম্যাচে কোরিয়ার আধিপত্য থাকলেও বাংলাদেশও মন্দ খেলেনি। তারাও প্রায়ই আক্রমণ শানিয়েছে। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ফিনিশিংয়ের অভাবে গোল পায়নি। পক্ষান্তরে কোরিয়ানরা হাফ চান্সকে ‘ফুল’ চান্সে পরিণত করে আদায় করে নেয়। বাংলাদেশের হারের আরেকটা কারণ ছিল দুর্বল ও বাজে রেফারিং। বাইরাইনের রেফারি আম্মার মাহফুদের রেফারিং ছিল যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ এবং পক্ষপাতমূলক। বাংলাদেশের ফুটবলারদের চেয়ে বেশি ফাউল করে খেলে কোরিয়ানরাই। অথচ রেফারি বাংলাদেশের ফুটবলারদেরই বেশি হলুদ কার্ড (৫টি) দেখান। আর কোরিয়ানদের দেখান মাত্র একজনকে! ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের কোচ এবং ফুটবলাররা মাঠেই রেফারির সব সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তীব্র ক্ষোভ নিয়ে। প্রথমার্ধের ১৩ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায় কোরিয়া। ডি-বক্সের ভেতরে উড়ন্ত সেন্টার পেয়ে সেটার নিয়ন্ত্রণ নিতে সচেষ্ট হন কোরিয়ান ফরোয়ার্ড কিম-ইউ সং। কিন্তু তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন বাংলাদেশী ডিফেন্ডার সুশান্ত ত্রিপুরা। কিন্তু বল ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি তিনি। কিমকে নিয়ে পড়ে যান তিনি। অথচ রেফারি বিস্ময়করভাবে পেনাল্টির বাঁশি বাজালে হতভম্ভ হয়ে যায় বাংলাদেশ। স্পট কিক থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন কিম-ইউ সং (১-০)। ১৬ মিনিটে কিমের দ্বিতীয় গোলের প্রচেষ্টায় বাধা হয়ে দাঁড়ায় সাইড পোস্ট। ৩৮ মিনিটে হান ইয়ং-থাইয়েরে গোলে ব্যবধান বাড়ায় কোরিয়া (২-০)। বক্সের ভেতর ফাঁকায় বল পেয়ে উঁচু জোরালো শটে পরাস্ত হন বাংলাদেশের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা (২-০)। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশের যুবারা। তবে ৬৯ মিনিটে আবারও পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ দল। এবার গোল করেন কোরিয়ার কাং কুক-চল (৩-০)। ইনজুরি টাইমে (৯০+১ মিনিটে) জামাল ভুঁইয়ার উড়ন্ত সেন্টারের বল কোরিয়ান গোলরক্ষক বিপদমুক্ত করতে পারেননি। সেই বল চলে যায় সাদউদ্দিনের কাছে। জটলার মধ্যে সেই বল জোরালো শটে জালে পাঠিয়ে ব্যবধান কমান সাদ (১-৩)। তবে গোলটি ছিল সান্ত¡নার। কেননা একটু পরেই রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজান। আর তাই এবারের মতো এশিয়ান গেমসের সাফল্যটা শেষ ১৬তেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকলো লাল-সবুজদের জন্য। এশিয়ান গেমস ফুটবলে এবারই প্রথম শেষ ১৬তে ঠাঁই করে নিয়ে এক নতুন ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশের যুবারা। শুক্রবার উত্তর কোরিয়াকে হারাতে পারলে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ইতিহাসটাকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারতেন জামাল-সুফিলরা। এশিয়ান গেমস ফুটবলে বাংলাদেশ খেলছে ১৯৭৮ ব্যাংকক এশিয়ান গেমস থেকে। মাঝে দুটি আসর (১৯৯৪ ও ১৯৯৮) ছাড়া এই আসরে নিয়মিতই অংশ নিয়ে আসছে। গেমস ফুটবলে এ পর্যন্ত ২৪ ম্যাচ খেলে মাত্র ৩টিতে জিতেছে বাংলাদেশ। বাকি ২১টিতেই হেরেছে। সর্বশেষ জয় গত ২০১৪ এশিয়ান গেমসে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১-০ গোলে। এবারও বাংলাদেশের এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ মূলত ঘরের মাঠে সাফ ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের প্রস্তুতি হিসেবেই। এই দুই টুর্নামেন্টের আগে এশিয়ান গেমসে দলকে পরখ করার সুযোগ পাচ্ছেন নতুন ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে। ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে উজবেকিস্তানের কাছে ৩-০ গোলে হার দিয়ে শুরু করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচে এগিয়ে গিয়েও ১-১ গোলে দুর্ভাগ্যের ড্র করে শক্তিশালী থাইল্যান্ডের সঙ্গে। শেষ গ্রুপ ম্যাচে তারা শক্তিশালী কাতারকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে। তবে কোরিয়ার কাছে হেরে সেই ইতিহাসকে আর সমৃদ্ধ করা হলো না তাদের।
×