ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এইচআরডব্লিউর ডেপুটি ডিরেক্টরের বিবৃতি

ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চলছে

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ২৫ আগস্ট ২০১৮

 ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চলছে

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে বাংলাদেশে আশ্রুয় নেয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের অনেকেই দেশে ফেরার পর ফের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থার এশিয়া অঞ্চলের ডেপুটি ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, দেশে ফেরা শরণার্থীদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি মিয়ানমার সরকার দিয়েছিল, ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নির্যাতন সেই প্রতিশ্রুতিকে মিথ্যায় পর্যবসিত করেছে। এজন্য রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের আগে বিষয়টিতে জাতিসংঘের নজরদারিসহ আন্তর্জাতিকভাবে তাদের সুরক্ষার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। খবর ওয়েবসাইট। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরা নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ হবে বলে নিশ্চয়তা দেয়া হলেও ফিরে যাওয়া নাগরিকরা এখনও হয়রানি এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে বিবৃতিতে বলেছেন রবার্টসন। তিনি বলেন, যারা বিশ্বাস করেন মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিরাপদ প্রত্যাবাসনে প্রস্তুত, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে এই আচরণ তাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। স্বেচ্ছায়, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি প্রতিষ্ঠার আগে মিয়ানমারকে আরও বহুদূর পথ পাড়ি দিতে হবে। বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত বছরের ২৩ নবেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সম্মতিপত্রে সই করে। এর ভিত্তিতে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয় এবং ১৬ জানুয়ারি ওই গ্রুপের প্রথম বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিভিন্ন বিষয় ঠিক করে ‘ফিজিক্যাল এ্যারেঞ্জমেন্ট’ স্বাক্ষরিত হয়। এরপর প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারকে আট হাজারের মতো রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেয়া হলেও কেউ এখনও রাখাইনে ফিরতে পারেনি। তবে সীমান্তের শূন্য রেখায় আশ্রয় নেয়া কিছু রোহিঙ্গা রাখাইনে ফিরেছেন বলে খবর এসেছে গণমাধ্যমে। এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘জাতিগত নিধনের’ মুখে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া ছয় রোহিঙ্গা নাগরিক সম্প্রতি রাখাইনে ফেরার পর কয়েকদফা দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) হাতে আটক হন। এসব রোহিঙ্গার উদ্দেশ্য ছিল কিছু অর্থ জোগাড়ের পর আবার বাংলাদেশে ফিরবে তারা। নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর তাদেরকে নির্যাতন করা হয় এবং পরবর্তীতে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের অপরাধে প্রত্যেককে চার বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এক মাস কারাভোগের পর ওই ছয় জনসহ আরও কয়েক ডজন রোহিঙ্গাকে ক্ষমা করে দেয় সরকার। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তাদের প্রত্যাবাসন নিরাপদ, তা প্রমাণের জন্য মুক্তি পাওয়া এসব নাগরিককে মিয়ানমার সফররত সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। ওই ঘটনার পর ছয় রোহিঙ্গা ফের বাংলাদেশে পাড়ি জমান। দেশে ফিরে নির্যাতনের শিকার ওই ছয় রোহিঙ্গা পুরুষ এবং কিশোর এইচআরডব্লিউকে জানিয়েছেন, বিজিপির কর্মকর্তারা বারবার বন্দুকের মুখে জঙ্গীগোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা’র বিষয়ে জানতে চেয়েছে। তাদেরকে মংডুর বিভিন্ন কাস্টডিতে বিভিন্ন সময়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলেও জানান তারা। নির্যতিত রোহিঙ্গারা জানান, আরসার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করতে বিজিপি কর্মকর্তারা তাদের কিলঘুসি ছাড়া লাঠি ও রড দিয়ে পেটায়, আগুন দিয়ে ঝলসে দেয়া এবং বৈদ্যুতিক শক দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। আটকাবস্থায় বিশুদ্ধ, পয়ঃনিষ্কাশন, পর্যাপ্ত খাবার, কোন আইনী সহায়তা এবং বার্মিজ দোভাষীর সহায়তাও তাদের দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। বিজিপির নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ১৭ বছর বয়সী কিশোর রহমত (ছদ্মনাম) বলেন, তারা প্লাস্টিকের ব্যাগ আগুনে গলিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে সেই তরল আমার শরীরে ফেলা হয়েছে। লোহার রড গরম করে দুই পায়ে ছ্যাঁকাও দিয়েছে, কখনও কখনও জলন্ত সিগারেট শরীরে চেপে ধরেছে, জ্বলন্ত মোম শরীরে ঢেলেছে, ব্লেড দিয়ে শরীরে আঁচড় কেটেছে, লাঠি আর রড দিয়ে পিটিয়েছে। রহমতের সমবয়সী আহমেদ (ছদ্মনাম) জানান, তাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে পেটানো হতো।
×