ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা মিয়ানমারের, বসেছে ১৬০ পুলিশ চৌকি

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৫ আগস্ট ২০১৮

 সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা মিয়ানমারের, বসেছে ১৬০ পুলিশ চৌকি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবস্থা জারি করেছে মিয়ানমার। বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর রাখাইন অভ্যন্তরে ১৬০টিরও বেশি পুলিশ আউটপোস্ট বসানো হয়েছে। ওসব আউটপোস্টে মোতায়েন করা হয়েছে এক হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য। আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে সন্ত্রাসীরা ফের হামলে পড়তে পারে সন্দেহে মিয়ানমার এ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ সীমান্তে কোন ধরনের আতঙ্ক ও উত্তেজনা নেই। সূত্র জানায়, গত বছরের ২৫ আগস্ট উত্তর মংডুর ৩০টি পুলিশ পোস্টে একযুগে হামলা চালায় সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সংগঠন আরসা। মংডু, বুচিদং ও রাচিদং এলাকায় স্থাপিত ৩০টি পুলিশ আউটপোস্টে অন্তত ১২জন নিরাপত্তারক্ষী পুলিশ নিহত হয়েছে বলে দাবি মিয়ানমারের। এ ঘটনার জের ধরে রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। ওই হামলার প্রথম বার্ষিকী আজ ২৫ আগস্ট। ওপারের একটি সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসা সীমান্ত বরাবর ফের হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে বলে গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছে। আরসার সন্ত্রাসীরা দলে লোক জড়ো করে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও খাদ্য জমা করেছে। ২০১৬ সালে ৯ অক্টোবরের হামলার পরও এ ধরনের পরিকল্পনা এবং হামলে পড়েছিল সন্ত্রাসীরা। এ জন্য সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তের একাধিক সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, রাখাইনে রাত ১০টা থেকে পরদিন ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ রয়েছে। মংডু এবং বুচিদং অঞ্চলে আরও দুইমাস কারফিউর মেয়াদ বাড়িয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। কারফিউতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কেউই ঘর থেকে বের হতে এবং উন্মুক্ত এলাকায় ৫ জন জড়ো হতে পারবে না। গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে কারফিউ জারি রেখেছে সেনাবাহিনী। ঘোষণায় বলা হয়েছে, কারফিউর নতুন মেয়াদ দুই মাস বাড়িয়ে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল রাখা হয়েছে। রাত দশটায় শুরু হয়ে কারফিউ জারি থাকবে ভোর ৫টা পর্যন্ত। নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কারফিউর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে মংডু ও বুচিদং এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, ওই অঞ্চলে এখনও অনেক বিষয়ে অগ্রগতি প্রয়োজন। নির্ধারিত সময়ে পাঁচজনের বেশি মানুষ একত্রিত হতে এবং বাইরে বের হতে পারবে না। জানা গেছে, গত শুক্রবার হতে মিয়ানমার সীমান্তে সৈন্য বাড়ানো হয়েছে। শনিবার (১৮ আগস্ট) থেকে সীমান্ত পুলিশের সঙ্গে সেনা সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছে। তমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থান করা রোহিঙ্গা বস্তির সন্নিকটে এসে সেনাবাহিনী টহল দেয়ায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৬ হাজার রোহিঙ্গা। ওই রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যের আরও ভেতরে নিয়ে যাবার কথা দিয়েও কথা রাখেনি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। সচেতন মহল বলেন, সীমান্তের জিরো লাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে জানে বিশ্বব্যাপী। ওই ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে বাদ দিয়েই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী নতুন ও পুরনো রোহিঙ্গাদের তালিকা প্রস্তুত সম্পন্ন করা হয়েছে ইতোমধ্যে। যেহেতু ওসব রোহিঙ্গার আশ্রয়স্থল মিয়ানমার অংশে, তাই বাংলাদেশ কোনভাবেই তাদের তালিকা করতে পারে না। গত ২০ ফেব্রুয়ারি দু’দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যরা সরেজমিনে তুমব্রু এলাকায় গিয়ে পরিদর্শন করেছেন ওসব আশ্রয়স্থল। মিয়ানমারও কথা দিয়েছিল শিগগিরই তাদের স্থানান্তর করে নেয়া হবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতির ৬ মাস পার হয়ে গেলেও কথা রাখেনি মিয়ানমার। শুধু বৈশ্বিক চাপের কাছেই সাড়া দেয় মিয়ানমার। বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি, বৈঠক, সভা ও প্রতিশ্রুতি সব দিয়ে থাকে মিয়ানমার। তবে বাস্তবে তা পূরণ করে না তারা। তারা আরও বলেন, জিরো লাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা যদি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে, তাহলে তারা আর কখনও তাদের দেশে ফিরে যেতে পারবে না। মিয়ানমার সরকার তখন বলতে পারে, নোম্যান্সল্যান্ডে বসবাসকারীদের মিয়ানমার আরও ভেতরে নিয়ে যাবার কথা দিয়েছিল। কিন্তু তাদেরও বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা বর্তমানে যেখানে বসবাস করছে, সেখান থেকে তাদের ঘরবাড়ি ও জমিজমা দেখা যায়।
×