ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়নের খবর জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৫ আগস্ট ২০১৮

  উন্নয়নের খবর জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শোকের ব্যথা বুকে নিয়েও দেশের সমৃদ্ধি আর মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। দেশের মানুষকে ভাল রাখাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। জনগণ যেন শান্তি এবং উন্নত জীবন লাভ করতে পারে সেটাই আমার কামনা। গত সাড়ে নয় বছরে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের যে উন্নয়ন করেছে, তার খবর মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নেতাকর্মীদের যার যার এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। পবিত্র ঈদ-উল-আজহার দিন বুধবার সকালে গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে আমরা ক্ষমতায় যাব। তারা খুশি হলে ভোট দেবে, না দিলে নাই। কোন অসুবিধা নেই। তবে উন্নয়ন কর্মকান্ডে জনগণ সন্তুষ্ট হয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিলে, আবারও নৌকা ক্ষমতায় আসবে। বরাবরের মতো এবারও ঈদের দিন গণভবনের এ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতাসহ সর্বস্তরের নাগরিক এবং ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও উচ্চ আদালতের বিচারকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশবাসীকে ঈদ-উল-আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঈদ মহান ত্যাগের বার্তা নিয়ে এসেছে। ঈদ সকলের জন্য আনন্দ ও খুশি বয়ে আনুক। গণভবনে উপস্থিত সবার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা আজকে গণভবনে এসেছেন, গণভবন আজ ধন্য।’ জাতির পিতাকে হারানোর শোকের এই মাসে পরিবারের সবার জন্য দোয়া চেয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট আমরা মা-বাবা, ভাই-বোন সকলকে হারিয়েছি। আমরা দুটি বোন বেঁচে আছি। আপনারা ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্টের শহীদদের জন্য দোয়া করবেন। আমাদের দুই বোনের জন্য দোয়া করবেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য দোয়া করবেন। তিনি বলেন, আমরা সব শোক-ব্যথা বুকে নিয়েও জনগণের আনন্দ উৎসব যাতে থাকে তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ‘অক্লান্ত পরিশ্রম’ করে যাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেশের মানুষ যেন ভাল থাকে, তাদের যেন উন্নতি হয়। সুন্দর জীবন পায়। শিক্ষা চিকিৎসা বাসস্থান পায়। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে উপস্থিত নেতা-কর্মীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ধরলে শেখ হাসিনা তাদের থামতে বলেন। এরপর তিনি বলেন, এখানে থেকে সেøাগান না দিয়ে এলাকায় যান। আমরা কী কী কাজ করেছি; জনগণকে তো তা জানাতে হবে। প্রতি বছর দুই ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে সামনে পাওয়া যায় বলে অনেকেই এ সময় বিভিন্ন অভাব অভিযোগের কথা তার কাছে তুলে ধরেন। তাতে সময়ক্ষেপণ হয় বলে এবারের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের অনুষ্ঠানে আলাদা টেবিলের ব্যবস্থা করা হয় অভাব অভিযোগ শোনার জন্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও কোন অভিযোগ থাকলে ওই অভিযোগ নেয়ার জন্য আলাদা টেবিলের ব্যবস্থা আছে, সেখানে আমাদের অফিসাররা আছে, দলের লোকরা আছে। তারা এগুলো নিয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে আমরা সেগুলো দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে নিজেদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উদ্যাপন করতে পারে সে জন্য তার সরকার সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন ঘটিয়েছি যাতে করে যারা গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন তারা যেন ভালভাবে নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছতে পারেন এবং পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে আবার সহি সালামতে ফেরত আসতে পারেন। সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ, র‌্যাব থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যেকেই অক্লান্ত পরিশ্রম করছে, যাতে আপনারা নির্বিঘেœ ঈদ উদযাপন করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় মহৎ কিছু অর্জনের জন্য দলের নেতা-কর্মীদের ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, পবিত্র ঈদ-উল আজহা আমাদের সেই ত্যাগেরই শিক্ষা দেয়। মহৎ কিছু অর্জনের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন’ বঙ্গবন্ধুর এই উদ্ধৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি সবসময়ই বঙ্গবন্ধুর এই দর্শনকে সঠিক বলে মনে করি। তিনি বলেন, এ বছর শোকের মাস আগস্টেই পবিত্র ঈদ-উল-আজহা এসেছে। এ মাসেই বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগসহ অনেক মহান আত্মত্যাগের স্মৃতি আমাদের রয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ থেকে কেবল আমরা দুই বোন বেঁচে গেছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। কাজেই আমাদের জন্য আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনারা দোয়া করবেন। দলীয় নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর প্রধান বিচারপতিসহ উচ্চ আদালতের বিচারক এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবনের এই অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় সেমাই, মিষ্টি, পনিরের সমুচা ও আপেল দিয়ে। শুরুতে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ এবং মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধাগণ, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার এবং ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ভিক্ষুক ও হতদরিদ্র মানুষসহ সাধারণ জনগণকে এদিন প্রধানমন্ত্রী ঈদের শুভেচ্ছা জানান। বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রধানগণ, দলের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×