ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতে জবানবন্দীতে স্বীকারোক্তি মিলেছে শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টার অজানা অনেক তথ্য

পাকি জঙ্গী ইউসুফ ভাট ॥ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ছক বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিয়েছিল

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৫ আগস্ট ২০১৮

পাকি জঙ্গী ইউসুফ ভাট ॥ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ছক বাস্তবায়নে  নেতৃত্ব দিয়েছিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার নেতৃত্বদানকারী পাকিস্তানী জঙ্গী আবু ইউসুফ ভাট। তার সাংগঠনিক নাম আব্দুল মাজেট ভাট ওরফে আব্দুল মজিদ। বাংলাদেশে সুদূরপ্রসারী জঙ্গী কর্মকাণ্ড পরিচালনার ‘এ্যাসাইনমেন্ট’ নিয়ে আসে সে। বিয়ে করে বাংলাদেশে। বাংলা ভাষা বলা ও লেখাও শিখে নেয়। এর পরই আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায় ইউসুফ ভাট। সেদিন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে যান। ওই হামলায় ২৪ জন নিহত হন। ধর্মভিত্তিক জঙ্গী গোষ্ঠীর ওই হামলা সফল হলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীসহ দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের প্রায় সব নেতা মারা যেতেন। ২০০৭ সালের জুন মাসে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি ইউসুফ ভাট গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ইউসুফ ভাট জন্মসূত্রে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ইসলামাবাদ জেলার কুলগাঁওয়ের তেরিগাঁওয়ের বাসিন্দা। বাবার নাম আব্দুর রহমান ভাট। চার ভাইবোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। স্থানীয় বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা শেষে ১৯৮৯ সালে ইসলামাবাদ সরকারী ডিগ্রী কলেজ থেকে বায়োলজিতে অনার্স করে সে। নব্বই দশকের শুরুর দিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ছাড়ার পর পাকিস্তানের নাগরিকত্ব পাওয়া এই জঙ্গী পাকিস্তান জামাতের সামরিক শাখা হিজবুল মুজাহিদিনের শীর্ষ পর্যায়ের সংগঠকের দায়িত্ব পায়। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স-আইএসআইর মদদে ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয় হিজবুল মুজাহিদিন। ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর ইউসুফ ভাট আদালতে ১৪ পৃষ্ঠার যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়; সেখানে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সক্রিয় জঙ্গীদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের উল্লেখ আছে। সূত্রমতে, আদালতে জবানবন্দীতে ইউসুফ ভাট জানায়, ২০০৪ সালের আগস্টের প্রথমদিকে একদিন মাওলানা তাইজউদ্দিন আমাকে জোহরের নামাজের সময় মোহাম্মদপুরের সাত মসজিদে থাকতে বলেন। আমি জোহরের নামাজের সময় সাত মসজিদে গিয়ে মাওলানা তাইজউদ্দিন, মাওলানা আব্দুস সালাম ও মুফতি হান্নানকে সেখানে পাই। আমরা সেখানে একসঙ্গে নামাজ আদায় করি। নামাজ শেষে মসজিদের ভেতর বসি। তখন মাওলানা তাইজউদ্দিন বলে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ ও ভারতে সংগঠনের কার্যক্রম চালানো সমস্যা হয়। যদি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করা যায়, তাহলে আওয়ামী লীগ টুকরা টুকরা হয়ে যাবে। তারা আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ফলে বাংলাদেশ ও ভারতে কার্যক্রম চালাতে সুবিধা হবে। কাজেই শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলতে হবে। মাওলানা আব্দুস সালাম জানতে চান, এই কাজ কীভাবে করা যাবে? তখন তাইজউদ্দিন বলে, তার কাছে যে গ্রেনেড আছে, সেটা দিয়ে এই কাজ করা সম্ভব। তাইজউদ্দিন আরও বলে, তার ভাই মন্ত্রী আব্দুল সালাম পিন্টু সরকারী সহযোগিতা প্রদান করবে। সে আরও বলে, এখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায়। পরে ক্ষমতায় নাও থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এই কাজ করা আর সম্ভব হবে না। একপর্যায়ে মাওলানা আব্দুস সালাম বলে, বিষয়টি আরও গভীরভাবে চিন্তা করা প্রয়োজন। তখন মাওলানা তাইজউদ্দিন বলে, চিন্তা করার কিছু নেই। সরকারের সহযোগিতা পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। ইউসুফ ভাট জবানবন্দীতে বলে, মাওলানা তাইজউদ্দিনকে গ্রেনেড ও গুলি (পাকিস্তান থেকে ঢাকায় আসা) ভারতে পাঠানোর যে দায়িত্ব দেয়া হয়; তার জন্য বিভিন্ন সময় তাকে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ৬/৭ লাখ টাকা দেয়া হয়। কিন্তু সেসব গ্রেনেড ও গুলি সে পাঠায়নি। একপর্যায়ে সে জানায়, ভারত সীমান্তে যে লোক গ্রেনেড ও গুলির সরবরাহ গ্রহণ করত সে বিএসএফের হাতে ধরা পড়ায় সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় যে গ্রেনেড হামলা হয়েছে, তাতে তাইজউদ্দিনের কাছে থাকা গ্রেনেড, যা মুজাফফর শাহ্ তাকে দিয়েছিল। পরে গ্রেনেডগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। জবানবন্দীতে ইউসুফ ভাট বলে, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা, ওই বছরের ২১ জুন সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা, ৭ আগস্ট সিলেটে তৎকালীন মেয়র বদরুদ্দিন আহমেদ কামরানের ওপর গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াকে হত্যায় ব্যবহার হওয়া গ্রেনেডের বিষয়েও তথ্য দিয়েছে ইউসুফ ভাট। সে আরও জানায়, বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিকল্পনা থেকে ২০০৩ সালের ৩ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের ধানবাড়িতে নিমতলার স্থায়ী বাসিন্দা নাহিদ লায়লা কাঁকনকে বিয়ে করে সে। সিরাজগঞ্জে বিয়ে হয় তাদের। রাজধানীর মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক কাঁকন আদালতকে জানিয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি আরিফ হাসান সুমনের সঙ্গে সংসদ ভবনের সামনে তার পরিচয় হয়। সে তখন মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের ছাত্রী। সুমনের মাধ্যমেই ইউসুফ ভাটের সঙ্গে পরিচয়। পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের সূত্র ধরে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদনও করে ইউসুফ ভাট। এমনকি মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্টও তৈরি করে সে। আরিফ হাসান সুমন মোহাম্মদপুরের সাত মসজিদ রোডের ৩/১১ আলী এ্যান্ড নূর রিয়েল এস্টেটের বাসিন্দা ছিলেন। তার আসল নাম আব্দুর রাজ্জাক। বাবার নাম সুলতান আহমেদ। ২১ আগস্ট মামলার আসামি হাফেজ মাওলানা ইদ্রিস তার ভগ্নিপতি। আর এই মামলার আরেক আসামি দক্ষিণ আফ্রিকায় পলাতক মাওলানা তাইজউদ্দিন সুমনদের বাড়িতে ভাড়াটিয়া ছিল। ইউসুফ ভাট ঢাকায় আসার পর মোহাম্মদপুর সাত মসজিদে সুমনের বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথমবারের মতো একমাসের ভিসায় ঢাকায় আসে ইউসুফ। পরে ভিসার মেয়াদ আরও পাঁচ মাস বাড়িয়ে ঢাকায় অবস্থান করে সে। আর ২০০৭ সালের জুনে গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও পাকিস্তান দুই দেশেই বসবাস করে সে। ইউসুফ ভাটের স্ত্রী নাহিদ লায়লা কাঁকন ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। সেখানে সে বলে, ২০০৭ সালের জুনে সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা সিরাজগঞ্জ থেকে ইউসুফকে আটক করে। এর পর দীর্ঘদিন ইউসুফের বিষয়ে কাঁকনের কাছে কোন তথ্য ছিল না। ২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি রাজধানীর উত্তরা থানার একটি অস্ত্র মামলায় শোন এ্যারেস্ট দেখানো হলে ইউসুফের বিষয়ে জানতে পারে। পরে কারাগারে দেখা করে ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তাকে ছাড়ানোর চেষ্টাও করে কাঁকন। তার (কাঁকন) জবানবন্দীতে ইউসুফ ভাটের সঙ্গে ২১ আগস্ট মামলার আসামিদের যোগাযোগ, পাকিস্তানী জঙ্গী নেতাদের বাংলাদেশে আসা-যাওয়া, অস্ত্র ও অর্থের জোগানসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে। সর্বশেষ তথ্য হচ্ছে, এই কাঁকনের সঙ্গে ইউসুফ ভাটের বিয়েবিচ্ছেদ হয়েছে। ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে ইউসুফ বলে, হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো আসে পাকিস্তান থেকে। এগুলো পাকিস্তান থেকে জাহাজে করে চট্টগ্রামে আসার পর ঢাকায় পাঠানো হয়। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন তেহরিক-ই-জিহাদি ইসলামি (টিজেআই) নেতা মুজাফফর শাহ এই দায়িত্ব পালন করে। পরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি মাওলানা তাইজউদ্দিনের কাছে গ্রেনেডগুলোর সঙ্গে কিছু বিস্ফোরকও ছিল। এসব গ্রেনেড ও বিস্ফোরক কিছুদিন ইউসুফের মোহাম্মদপুরের ভাড়া বাসায়ও রাখা হয়েছিল। ইউসুফ ভাটের জবানবন্দীতে হিজবুল মুজাহিদিন, তেহরিক-ই-জিহাদি ইসলামি-টিজেআই, লস্কর-ই-তৈয়বা, জয়েশ-ই-মোহাম্মদ, হরকত-উল-মুজাহিদিন, আল বদর, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামির মতো পাকিস্তানী ও আফগানিস্তানভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ও এর নেতাকর্মীদের বাংলাদেশে সক্রিয় থাকার বিষয়ে তথ্য রয়েছে। ইউসুফ জবানবন্দীতে আরও বলে, ১৯৮৭ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়। ১৯৯০ সালে জম্মু-কাশ্মীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ওই সংগ্রাম। ততদিনে ইউসুফ পাকিস্তানভিত্তিক হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় সংগঠন থেকে তার নাম দেয়া হয় মাজেদ ভাট ওরফে আব্দুল মজিদ। সংগঠন থেকে তাকে বলা হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে কাশ্মীর স্বাধীন করতে হবে। আর এজন্য তাকে অস্ত্র চালানো শিখতে হবে। এ সময় পিস্তল ও একে-৪৭ রাইফেল চালানো শেখে ইউসুফ। পরে তাকে ও তার সহকর্মীদের পাঠানো হয় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে। সেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ পায় সে ও তার সহযোগীরা। ১৯৯৩ সালের জুন পর্যন্ত মুজাফফরাবাদেই ছিল ইউসুফ। পরে তাকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ পাঠানো হয়। ১৯৯৪ সালের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত সেখানে হিজবুল মুজাহিদিনের সাব-অফিস পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। এ সময় বিভিন্ন দেশের (মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ) কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাস্তবতা তুলে ধরত ইউসুফ। পাশাপাশি সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহও করত। সংগ্রহ করা ওই অর্থ মুজাফফরাবাদের বায়তুল ইকরামে হিজবুল মুজাহিদিনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠাত। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান ও ভারতের কাশ্মীর অংশে যাতায়াত অব্যাহত রাখে ইউসুফ। এরপর হিজবুল মুজাহিদিন নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ ইউসুফ শাহ্ ওরফে সৈয়দ সালাউদ্দিনের নির্দেশে ২০০০ সালের জানুয়ারিতে জঙ্গী সহকর্মী সালাউদ্দিন শাহকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে আসে সে। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অস্ত্র সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশে আসে ইউসুফ ও তার সহকর্মী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী মাওলানা তাইজউদ্দিন ঢাকা বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানায় তাদের। পরে তাদের মোহাম্মদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশে কিছুদিন থাকার পর পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে চলে যায় তারা। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন হলে মাওলানা তাইজউদ্দিন বাংলাদেশে আসতে বলে তাদের। ২০০২ সালে ইউসুফ আবার ঢাকায় আসে। ২০০৬ সালের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশী পাসপোর্টে পাকিস্তানে যায়। আবারও ঢাকায় ফেরে নবেম্বরে। ইউসুফ ভাটের জবানবন্দীতে আরও অনেক তথ্যই রয়েছে। জবানবন্দীতে সে বলেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পাকিস্তানী জঙ্গীরা নির্বিঘেœ বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করত। বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারতে জঙ্গী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় জড়িত ইঞ্জিনিয়ার খান, কামরুল ইসলাম, গোলাম রসূল, মুফাজফর শাহ্, সেকান্দার, শাকিল শাহেদ, খুররম খৈয়াম ওরফে সেলিম, সাফি সামিউল্লাহ ওরফে মোস্তাকসহ অনেকের বিষয়েই তথ্য দিয়েছে ইউসুফ ভাট। শেখ হাসিনার ওপর হামলা বিষয়ে ইউসুফ ভাট তার জবানবন্দীতে স্পষ্ট করে বলেছেন, ভারতকে অস্থিতিশীল রাখতে হলে ধর্মভিত্তিক জঙ্গীদের পছন্দের সরকার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনাকে পছন্দ নয় তাদের, ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ায় শেখ হাসিনাকে ইসলামপন্থীদের শত্রু মনে করে জঙ্গীরা, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে ইসলামবিদ্বেষী বুদ্ধিজীবীরা প্রশ্রয় পায়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করা গেলে আওয়ামী লীগ টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। ফলে আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এতে বাংলাদেশ ও ভারতে জঙ্গী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সুবিধা হবে, পাকিস্তানের চিরশত্রু শেখ হাসিনা। ওই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, মূলধারার রাজনৈতিক দল ও ধর্মভিত্তিক জঙ্গী সংগঠনগুলো শেখ হাসিনাকে পছন্দ করে না, বাংলাদেশের জঙ্গীপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোও শেখ হাসিনার বিরোধী, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন হয়েছে বা ক্ষমতায় অংশীদারিত্ব করেছে, এমন কিছু রাজনৈতিক দলও শেখ হাসিনাকে অপছন্দ করে। তাদের স্বার্থ ও জঙ্গীদের স্বার্থ এক; ধর্মভিত্তিক জঙ্গীদের পাশাপাশি ভারতে সক্রিয় বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠীরও শত্রু শেখ হাসিনা।
×