ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সান্তোস চলে যাচ্ছে, শেয়ার কিনছে ওপি এনার্জি

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৫ আগস্ট ২০১৮

  সান্তোস চলে যাচ্ছে, শেয়ার কিনছে ওপি এনার্জি

রশিদ মামুন ॥ বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক বহুজাতিক তেল গ্যাস কোম্পানি সান্তোস এনার্জি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওপির এনার্জির কাছে অগভীর সমুদ্রে ব্লক ১১ এর শেয়ার বিক্রি করছে কোম্পানিটি। পেট্রোবাংলার কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব জমা না দিলেও ইতোমধ্যে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছে সান্তোস। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার মোট আয়তন এক লাখ ১১ হাজার ১২৬ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে অগভীর সমুদ্র রয়েছে ৫৮ হাজার ৭২৯ বর্গকিলোমিটার আর গভীর সমুদ্র রয়েছে ৫২ হাজার ৩৯৭ বর্গকিলোমিটার। পেট্রোবাংলা সমুদ্র এলাকাকে ২৬টি ব্লকে ভাগ করেছে। এর মধ্যে ১১টি অগভীর আর ১৫টি পড়েছে গভীর সমুদ্রে। তবে সাগরের আয়তনের তুলনায় খুব কম জায়গাতে এখনও পর্যন্ত অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়েছে। পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, শুধু বাংলাদেশ নয় গোটা এশিয়া থেকে সান্তোস ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়াতে সান্তোস শেয়ার বিক্রি করেছে। একই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, থাইল্যান্ডে থাকা শেয়ারও তারা বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এতে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে কোন সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন না এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সান্তোস চলে গেলে একই কাজ করবে ওপির এনার্জি। এতে করে কাজের কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। এর আগে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আরেক কোম্পানি কেয়ার্ন এর কাছ থেকে তাদের সব শেয়ার কিনে নেয় সান্তোস এনার্জি। তবে সাঙ্গুতে নতুন কূপ খনন করে সফলতা পায়নি সান্তোস। এরপর সাগরের একটি ব্লকে কাজ পায় তারা। গতবছর বাংলাদেশের স্থলভাগে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শেভরন সরকারের অনুমোদন না নিয়েই তাদের সব শেয়ার বিক্রি করে দেয়। চীনের হিমালয় এনার্জির কাছে সব শেয়ার বিক্রির প্রাথমিক চুক্তি করার বিষয়টিও জানায় তারা। তবে শেষ পর্যন্ত পেট্রোবাংলার অনুমোদন না পাওয়াতে চূড়ান্ত চুক্তি করতে পারেনি কোম্পানিটি। পেট্রোবাংলা নতুন করে শেভরন পরিচালিত গ্যাস ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার সুযোগ দিতে না চাইলে শেভরন বাংলাদেশ ছাড়ার ঘোষণা দেয়। তবে এরপর শেভরন এবং পেট্রোবাংলার মধ্যে হওয়া সমঝোতর বিষয়ে উভয় পক্ষের কেউই সংবাদ মাধ্যমকে কিছু জানায়নি। কঠোর গোপনীয়তায় শেভরনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক হয় পেট্রোবাংলার শীর্ষ ব্যক্তিদের। ওই সময় জ্বালানি বিভাগও এই সমঝোতা সৃষ্টিতে উদ্যোগ নেয়। ওই বৈঠকের পর এশিয়ার অন্যদেশগুলো থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিলেও বাংলাদেশ ছেড়ে যায়নি শেভরন। এর আগেও কনোকো ফিলিপস বঙ্গোপসাগরের দুটি ব্লকে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তির (পিএসসি) বাইরে গিয়ে গ্যাসের দাম নির্ধারণের জন্য সরকারকে চাপ দেয়। তবে বিষয়টি আইনসঙ্গত না হওয়াতে সরকার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়নি। এর ফলে সাগরে দুটি ব্লক ফেলে রেখে কনোকো ফিলিপস বাংলাদেশে ত্যাগ করে। পেট্রোবাংলার অপর এক কর্মকর্তা বলেন, কনোকো ফিলিপস এর সঙ্গে সান্তোসের পার্থক্য হচ্ছে তারা ব্লকগুলো ফেলে রেখে যাচ্ছে না। তাদের অংশের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে করে অন্য কেউ এসে এখানে বিনিয়োগ করবে। ফলে ব্লকটি পড়ে থাকবে না। বিগত ২০১৪ সালের ১২ মার্চ অগভীর সমুদ্রে ১১ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য পিএসসি সই করে পেট্রোবাংলা। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক কোম্পানি সান্তোস সাঙ্গু ফিল্ড লিমিটেড (এসএসএফএল) এর সঙ্গে চুক্তিটি সই হয়। চুক্তিতে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কোম্পানি বাপেক্সকে ১০ শতাংশ শেয়ার দেয়া হয়। এ শেয়ারের অংশ হিসেবে কেবলমাত্র তেল গ্যাস পাওয়া গেলেই বাপেক্সকে বিনিয়োগ করতে হবে। সম্পাদিত চুক্তির আওতায় ব্লক ১১-এর মধ্যে চার হাজার ৪৭৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তেল গ্যাস অনুসন্ধান করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিডিং রাউন্ড ২০১২ আহ্বান করা হলে দরপত্রের মাধ্যমে কাজ পায় সান্তোস। যদিও এর মধ্যে সাগরবক্ষের ১৬ নম্বর ব্লকের মগনামা-২-এ যথেষ্ট সম্ভাবনা না থাকলে কূপ খনন করে সান্তোস। মাগনামা-২ এর ৪৯ শতাংশ অংশীদার ছিল বাপেক্স। গ্যাস পাওয়া না গেলেও সেখানে বাপেক্সের ২৩০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে আন্তঃসংস্থার কাছ থেকে বাপেক্সের মধ্যে ১২৯ কোটি টাকা পরিশোধও করেছে। প্রসঙ্গত এখন পর্যন্ত সাগরে মোট ৪টি কূপ খনন করার পরিকল্পনা এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি এসএস-০৪ এবং এসএস-০৯ ব্লকে তিনটি কূপ খনন করবে। অন্যদিকে সান্তোসের এসএস-১১ নম্বর ব্লকে একটি কূপ খনন করার কথা ছিল। এছাড়া ডিএস-১২ নম্বর ব্লকে পেসকো দাইয়ু ২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় ত্রিমাত্রিক জরিপের কাজ শুরু করবে চলতি বছরের শেষ নাগাদ। এই জরিপের কাজের পর পরই তারাও একটি কূপ খননের কাজে হাত দেবে। তবে ওএনজিসি এবং সান্তোসের জরিপে আশা করার মতো কিছু ছিল বলে মনে করে পেট্রোবাংলা।
×