ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নির্যাতিত শিশু রোকছানা নড়াইল হাসপাতালে

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ২৩ আগস্ট ২০১৮

নির্যাতিত শিশু রোকছানা নড়াইল হাসপাতালে

নিজস্ব সংবাদদাতা, নড়াইল ॥ ঢাকায় বাসাবাড়িতে কাজে নিয়ে রোকছানা নামে নড়াইলের ১০বছরের একটি শিশুর উপর মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালানো হয়েছে। যৌন নিপিড়ন থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৮মাস যাবত হেন নির্যাতন নেই যা করা হয়নি শিশুটির উপর। নির্মম নির্যাতনের ফলে মৃত্যু পথযাত্রি শিশুটিকে নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নির্যাতিতার স্বজনরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছে। এ ব্যাপারে রোকছানার পিতা রাসেল শেখ বাদি হয়ে গৃহকর্তাসহ ৪ জনের নামে লোহাগড়া থানায় মামলা করেছে। জীবন মৃত্যুর দোলাচলে নিস্তেজ কঙ্কালসার দেহটি হাসপাতালের বেডে লেপ্টে আছে। সারা শরীরের আঘাতের নতুন পুরাতন কালো দাগ, দগদগে ক্ষতও রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বাতাস, খাদ্য গ্রহনের শক্তিটুকু নিঃশেষ হয়ে গেছে, তাইতো এসবই চলছে কৃত্তিম উপায়ে। হতদরিদ্র পরিবারে একটু স্বচ্ছলতা ফেরাতে ঢাকায় গৃহ পরিচারিকার কাজে গিয়ে সেদিনের উচ্চল চঞ্চল গ্রাম্য বালিকা রোকছানার আজ এই করুন পরিনতি। রোকছানা লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের বাহিরপাড়া গ্রামের রাসেল শেখের মেয়ে। জানাগেছে, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার বাহিরপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র দীন মজুর রাসেল শেখ। নিজের কোন জায়গা জমি না থাকায় অন্যের জমির ওপর ঘর বেঁধে পাঁচ সদস্য নিয়ে বসবাস করেন। অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করে দুবেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে কোন রকম বেঁচে আছেন। রোখসানার মা রত্ম বেগম জানান, মাঝে মধ্যে মোবাইলে তার মেয়ের সাথে কথা বলতো। তবে কথাবার্তায় কখনো ভাল মনে হয়নি। রোখসানার পুরো শরীর জুড়ে শুধু আঘাতের চিহ্ন। হাসপাতালে কঙ্কালের মতো শুয়ে আছে। বাড়ির মালিক আছাদুল্লাহ ও তার স্ত্রী সোনিয়া বেগমসহ পরিবারের সদস্য নির্মমভাবে তার মেয়ের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। তিনি মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পাশাপাশি ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করেছেন। মামলার বিবরনে বলা হয়েছে, বাসাবাড়ির ঝিয়ের দালাল লোহাগড়া উপজেলার বাহিরপাড়া গ্রামের সালেহা নানা প্রলোভনে তার প্রতিবেশি হতদরিদ্র পরিবারের শিশু রোকছানাকে আট মাস আগে ঢাকায় নিয়ে যায়। ঢাকায় নিয়ে সালেহা তাকে ওয়ারি এলাকায় এক বাসায় কাজে দেয়। আট মাস ঐ বাসায় অবস্থান কালে রোকছনার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। এ সময় প্রায়ই অভূক্ত রাখা হয়েছে তাকে। এভাবে দীর্ঘ নির্যাতনের এক পর্যায়ে রোকসানা মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে তাকে ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রোকছানার স্বজনদের খবর দিয়ে নিয়ে গত ১৭ আগষ্ট রাতে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় রোকছানা কে। ঢাকা থেকে এনে মরনাপন্ন রোকসানাকে ১৯আগষ্ট নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। নড়াইল সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মশিউর রহমান বাবু জানান, শিশুট ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি ছিল। সেখান থেকে নড়াইল সদর হাসপাতালে রেফার্ড হিসেবে ভর্তি হয়েছে। সেখান থেকে যে ডায়গনিষ্টক করা হয়েছে সে এন্টি ভ্যালাইটিস। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সঠিক কারন গোপন করা হয়েছে। আমরা নড়াইল সদর হাসপাতালে খুব আশংকাজন অবস্থায় ভর্তি করেছি। তাকে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন করা হয়েছে এবং শরীর জুড়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। পোড়ানোর চিহ্ন রয়েছে। হাড় ভাঙ্গা রয়েছে। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। যৌন নির্যাতন হয়েছে কিনা সে ব্যাপারেও পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। তবে শিশুটি মোটেও আশংকামুক্ত নয়। এ ব্যাপারে লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান, শিশু রোকসানাকে নির্যাতনের ঘটনায় তার পিতা রাসেল শেখ বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামী করে থানায় মামলা করেছে। আসামীদেরকে গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে।
×