ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মারিয়াদের পাড়ি দিতে হবে আরও অনেক পথ, থিম্পু থেকে সোমবার ফিরল ছোটনের শিষ্যারা

এক হারেই সব শেষ নয়

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২১ আগস্ট ২০১৮

 এক হারেই সব শেষ নয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শনিবারের রাতটা যেন আসলেই ‘শনি’ময় ছিল বাংলার বাঘিণীদের জন্য! সবচেয়ে বেশি গোল (২২) করে এবং সবচেয়ে কম গোল (১) খেয়েও শিরোপা জেতা হলো না গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যাদের! তবে তারাই সাফ অ-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে সুন্দর ফুটবল খেলেছে, সবার মন জয় করেছে। তবে শিরোপা খোয়ানোর আক্ষেপ নিয়ে তারা সোমবার সকালে বিমানযোগে দেশে ফিরেছে। বিমানবন্দরে তাদের ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ঈদের জন্য আপাতত মেয়েদের ছুটি সাত দিনের। তারপর আবারও শুরু হবে তাদের নিয়মিত অনুশীলন। ভুটানের থিম্পুতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় এই আসরের ফাইনালে বাংলাদেশ ০-১ গোলে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়। আট মাস আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আসরে এই ভারতেই একই ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ দল। ফাইনালে হারের ব্যর্থতা ভুলে আগামী মাসে ভুটানে অ-১৮ সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ভাল করতে চায় মেয়েরা। শনিবারের ফাইনালে তিনটি গোল করার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশের মেয়েরা। এর মধ্যে দুটি শট পোস্টে লাগে। এই হতাশাজনক হারের পর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামের মাঠেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তাদের এই কান্না ছুঁয়ে গেছে দেশের সব ফুটবলপ্রেমীকে। তারা সেই আবেগ ছড়িয়ে দিয়েছেন ফেসবুকে। একজন লিখেছেন, ‘একটা হারেই সব অর্জন ম্লান হয়ে যেতে পারে না। বাংলার এই বাঘিণীরা আরও বহুদূর যাবে।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘বাংলার বাঘিণীরা, হয়ো না হতাশ, পরের বার ঠিকই দেবে ভারতকে বাঁশ!’ অন্য একজন লেখেন, ‘রানার্সআপ আর ফেয়ার প্লে ট্রফি হাতে নিয়ে কি মন ভরে? আর তাইতো বিষণœচিত্তে অধিনায়ক মারিয়া মান্দা। এই কষ্ট হৃদয়ে গেঁথে নাও। শোককে পরিণত কর শক্তিতে। আর সেই নবশক্তিতে বলীয়ান হয়ে আগামীতে ছিনিয়ে আনো আরও অনেক সাফল্য।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘কেঁদো না তহুরা! কেঁদো না আঁখি! মুছে ফেল তোমাদের আঁখির নোনা জল। এই এক হারেই তোমাদের সব স্বপ্ন, সব সাফল্য শেষ হয়ে যায়নি। সব ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে তোমাদের পাড়ি দিতে হবে আরও অনেক লম্বা পথ। ছিনিয়ে আনতে হবে আরও অনেক সাফল্য!’ আরেকজন লিখেছেন, ‘গোলাম রব্বানী ছোটন অল্পের জন্য পারলেন না কোচ হিসেবে ষষ্ঠ সাফল্যটি কুড়িয়ে নিতে!’ দেশে ফিরে বিমানবন্দরের লাউঞ্জে কোচ ছোটন বলেন, ‘ভারতের কাছে হেরে যাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও ভাল খেলে দর্শকদের মন জয় করেছে কিশোরীরা।’ ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের আরও পরিণত করার প্রতিজ্ঞা করেছে ফুটবলাররা। আর তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বাফুফে কর্মকর্তারাও। ঘরে ফিরল মেয়েরা। তবে আরও বীরদর্পে ফেরা যেত। হতে পারত আরও রাজসিক। কিন্তু যা হয়েছে তাও কোন অংশে কম নয়। লড়াই করে মেয়েরা হেরেছে ভারতের কাছে। কিন্তু তাদের ফুটবলশৈলী, অফুরন্ত দম, অদম্য মানসিকতা দেখেছে দর্শকরা। হেরে গেলে খারাপ লাগে। খুব খারাপ। কিন্তু কিছু হেরে যাওয়ার মধ্যেও থাকে ভাল লাগা, ভালবাসা। তাই দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি বলেন, ‘উদযাপন করা উচিত বাংলাদেশের।’ কোচ ছোটন ফাইনালে হারার জন্য ভাগ্যকেই দায়ী করেছেন। তবে মেয়েদের উন্নতিতে তিনি সন্তুষ্ট। কিশোরীদের নিয়ে পরিকল্পনার শেষ নেই বাফুফের। ঈদের পর আসতে পারে সংবর্ধনা আর আর্থিক পুরস্কারের ঘোষণা। এমনটাই জানিয়েছেন বাফুফের নারী উইং চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। ঢাকায় আসার আগেরদিন থিম্পুতে মারিয়াদের সংবর্ধনা দিয়েছে ভুটান সরকার। বাংলাদেশের নারী ফুটবল অনেক এগিয়েছে। ফাইনালে মেয়েরা হারলেও তাদের খেলা সবার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে বলে জানান ভুটানের মন্ত্রিপরিষদ সচিব দাসু কেসাং ওয়াংদি। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে ওরা একদিন বিশ্বকাপ খেলবে বলেও জানান তিনি। ফাইনালে হারার পর পুরোটা রাত দু’চোখ এক করতে পারেনি তহুরা-মারিয়ারা। ম্যাচে বেশ কিছু সুযোগ নষ্ট করেছে তহুরা। এজন্য নিজেকে কোনভাবেই ক্ষমা করতে পারছে না সে, ‘আমি নিজেই আমার ভুলটা মেনে নিতে পারিনি, অন্যেরা কিভাবে মানবে?’ অধিনায়ক মারিয়া মান্দার ভাষ্য, ‘পরেরবার আমরা যখন খেলব, তখন অবশ্যই জিতব।’
×