ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোন্দল মেটাতে পারলে পাঁচ আসনেই জয়ী হবে আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২১ আগস্ট ২০১৮

    কোন্দল মেটাতে পারলে পাঁচ আসনেই জয়ী হবে আওয়ামী লীগ

সৈয়দ হুমায়েদ শাহীন, মৌলভীবাজার ॥ দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ পর্যটন জেলা হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজার জেলা। এ জেলায় রয়েছে সমতল ভূমি, উঁচু-নিচু পাহাড়, হাওড় আর অসংখ্য নদ-নদী। জেলায় রয়েছে ৯৫টি চা বাগান। তাছাড়া রয়েছে হিন্দু-মুসলিমের পাশাপাশি মণিপুরী, খাসিয়া, খ্রীস্টান, গারো, টিপরাসহ অনেক জাতি গোষ্ঠীর বসবাস। আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজার জেলার চারটি আসনে আওয়ামী লীগ বরাবরই ভাল ফল করে আসছে। গত নির্বাচনে ৪টি আসনের মধ্যে সবকটি আসনেই আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চাইছে আওয়ামী লীগের দুর্গ ভাঙ্গতে আর আওয়ামী লীগ চাইছে তাদের বিজয়ের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তারপরও নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা। চুলচেরা বিশ্লেষণ আর হিসাব নিকাশ চলছে দুই শিবিরে। আগামী নির্বাচন নিয়ে এখানকার ভোটার ও প্রার্থীদেরও কৌতূহলের শেষ নেই। সব আলোচনার শেষাংশে থাকছে স্থানীয় সংসদীয় আসনের প্রার্থী নিয়ে। কোন দলের প্রার্থী কে হচ্ছেন? কার যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা কেমন? নির্বাচনে জয়ী হলে এলাকার উন্নয়নে কে কি ভূমিকা রাখতে পারবেন? আগে যারা নির্বাচিত হয়েছেন এলাকার উন্নয়নে কার কি অবদান ছিল? কে কতটুকু সৎ। এমন নানা আলোচনা সমালোচনায় জমে উঠেছে জেলার চারটি আসনের নির্বাচনী রাজনীতি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বর্তমান ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি, খেলাফত মজলিস, জামায়াত, কমিউনিস্ট পার্টিসহ ২০ দলীয় ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের একাধিক নতুন প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। কিন্তু কোন দল থেকে কে পাবেন দলীয় প্রতীক এবং নির্বাচিত হবেন এটা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে ভোটারদের মধ্যে। মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ী) ॥ হাওড়, পাহাড় ও চা বাগান বেষ্টিত সীমান্তবর্তী এ আসন বড়লেখা উপজেলার ১টি পৌরসভা, ১০টি ইউনিয়ন, এবং জুড়ী উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ নির্বাচনী আসনে রয়েছে ১৮ চা বাগান, অসংখ্য আগর বাগান, রাবার বাগান, হাকালুকি হাওড়, মাধবকুন্ড জলপ্রপাতসহ নানা পর্যটন স্পট। দশম নির্বাচনে অনান্য দল অংশগ্রহণ না করায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ শাহাব উদ্দিন পুনর্বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এনিয়ে তিনি ধারাবাহিকভাবে দুইবার এবং সবমিলিয়ে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এই সংসদীয় আসনটিতে চালকের আসনে রয়েছে আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি বর্তমানে জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্বপালন করছেন। এনিয়ে এ আসন থেকে ৩ বারের এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এলাকাতে একজন ভাল মানুষ হিসেবে তাঁর আলাদা একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আগামী নির্বাচনেও তাঁর মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত বলে দাবী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের লড়াই জমে উঠবে দুই শিবিরেই। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ২০০৮ সালের নির্বাচনে হাতছাড়া হওয়া আসনটি পুনরুদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালাবে। প্রবাসী অধ্যুষিত এ আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পেতে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা এখন থেকেই নিজ দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নিরবে চালাচ্ছেন জোর লবিং। বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শিল্পপতি নাসির উদ্দিন মিঠু, বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দারাদ আহমদ, সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফখরুল ইসলাম ও কাতার প্রবাসী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা শরীফুল হক সাজু। জামায়াতে ইসলামী থেকে সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী হচ্ছেন আমিনুল ইসলাম। জাতীয় পার্টি থেকে রয়েছেন বড়লেখা উপজেলা আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট আফজল হোসেন, জেলা জাতীয় পার্টির নেতা এ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম শামীম ও কেন্দ্রীয় সদস্য আহমদ রিয়াজ। মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ আংশিক) ॥ ২০টি চা বাগান, অর্ধশতাধিক রাবার বাগান আর দেশের সবচেয়ে বড় হাওড় হাকালুকি হাওড় অধ্যুষিত এই সংসদীয় আসন। চা বাগান অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় ভোটের মাঠে বরাবরই অনেকটা এগিয়ে থাকে আওয়ামী লীগ। এ আসনটি জেলার মধ্যে অন্যতম রাজনৈতিক সচেতন। সর্বশেষ নির্বাচনে এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আবদুল মতিন। দীর্ঘ প্রায় একযুগ থেকেই ঝিমিয়ে পড়েছে কুলাউড়ার রাজনীতি অঙ্গন। দলীয় রাজনীতির এমন বেহাল দশা কাটাতে অনেকেই হাল ধরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কিছুতেই যেন তা পূরণ হচ্ছে না। সংসদীয় আসনটির স্থানীয় রাজনীতিতে চলছে চরম নেতৃত্ব সংকট। এমন অবস্থায় বড় দুটি দলের নেতাকর্মীরা যেমন হতাশ, তেমনি দক্ষ, যোগ্য নেতৃত্ব শূন্যতায় অনেকটা অভিভাবকহীন স্থানীয় জনগণ। ডাকসুর সাবেক ভিপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এবং জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি, ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি এম এম শাহীন বর্তমানে দলীয় ও স্থানীয় রাজনীতিতে অনেকটাই নিষ্প্রভ। আদর্শিকভাবে তাঁরা রাজনীতি না ছাড়লেও রয়েছেন দলীয় রাজনীতির বাহিরে। এই দুই সাবেক এমপি ছাড়াও স্থানীয় রাজনীতিতে একই অবস্থা আরেক সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা নওয়াব আলী আব্বাছ খানেরও। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদকে কৌশলে দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখায় এবং এম এম শাহীন দলীয় রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ায় আর এ্যাডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাছ খান নতুন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সঙ্গে যোগ দিয়ে ২০ দলীয় সিদ্ধান্তনুযায়ী ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে দলীয় রাজনীতিতে নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে রেখেছেন। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে স্থানীয় আ’লীগ ও বিএনপিতে দলীয় কোন্দলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে দলীয় কোন প্রভাবশালী নেতাকে প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সাংসদ আব্দুল মতিন দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হন। ডাকসুর সাবেক ভিপি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ আসনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হোন। তাঁর নেতৃত্বে কুলাউড়াসহ পুরো সিলেট অঞ্চলে আ’লীগের দলীয় কর্মকান্ড ও নিজ এলাকার উন্নয়ন বেশ পরিলক্ষিত ছিল। পরবর্তীতে ২০০১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিএনপির বিদ্রোহী) এম এম শাহীনের কাছে পরাজিত হলেও স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বেশ সরব ছিলেন তিনি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায়ও আহত হন তিনি। তবে ওয়ান ইলেভেনের পর সংস্কারপন্থী ইস্যুতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। অন্যদিকে নানা কারণে জেলাজুড়ে আলোচিত আরেক নেতা জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এম এম শাহীন। নব্বই দশকের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে স্থানীয় বিএনপিকে বেশ সুসংগঠিত করেছিলেন তিনি। ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের গ্যাড়াকলে পড়ে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সুলতান মোহম্মদ মনসুরকে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেন। কিন্তু সে সময় দলীয় সিদ্ধান্ত না মানায় দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। আর সংস্কারপন্থী অজুহাতে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন তিনি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠে এ পর্যন্ত যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাঁরা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল মতিন, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক এমপি সুলতান মোঃ মনসুর আহমদ, সাবেক এমপি ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম শাহীন, সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাছ খান, পুলিশের সাবেক এআইজি ও আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ বজলুল করিম (বিপিএম), জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ একেএম শফি আহমদ সলমান, কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আ স ম কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান শামীম, বিএমএ এর সিলেট জেলা শাখার সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক ডাঃ রুকন উদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ডাঃ মিফতাহুল ইসলাম সুইট ও কুলাউড়া উপজেলা জাতীয় পার্টি (এরশাদ) সাধারণ সম্পাদক এএসএম সিদ্দিক আহমদ লোকমান। মৌলভীবাজার-৩ (মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর) ॥ হযরত শাহ মোস্তফা (র:) স্মৃতিবিজড়িত প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা সদরের এই আসনটিকে মর্যাদা ও গুরুত্বপূর্ণ বলে সকল দল এ আসনে জয়লাভের চেষ্টা করে। অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে নিজেদের পক্ষে এলাকাবাসীর দোয়া ও আশীর্বাদ চেয়ে প্রচার শুরু করেছেন। সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থীর সমর্থকরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়ে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যানার ও ফেস্টুন সাঁটাতে দেখা যায়। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন প্রয়াত সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর সহধর্মিণী সৈয়দা সায়রা মহসিন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি, খেলাফত মজলিশ, জামায়াত, কমিউনিস্ট পার্টিসহ ২০ দলীয় ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের একাধিক নতুন প্রার্থী প্রচার শুরু করেছেন। এরকম প্রায় ডজন খানেক প্রার্থীর নাম আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছে। কিন্তু কোন দল থেকে কে পাবেন দলীয় প্রতীক এবং মনোনয়ন পেলে কার কার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে ভোটারদের মাঝেও। তবে মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলেই রয়েছে ব্যাপক অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্ব। স্থানীয়দের মতে- দ্রুত কোন্দল মেটাতে না পারলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অনেকটাই ভুগতে হবে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন- বর্তমান এমপি সৈয়দা সায়রা মহসিন, মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ ফিরোজ, পুলিশের সাবেক এআইজি বজলুল করিম (বিপিএম), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী নেছার আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সমাজসেবী মসুদ আহমদ, ব্রিটিশ সাবেক কাউন্সিলর ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম এ রহিম শহিদ (সিআইপি), জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের সাবেক সভাপতি পৌর মেয়র ফজলুর রহমান ফজলু, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ, এনবিআর ব্যাংকের চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আ’লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেম্বার সভাপতি মোঃ কামাল হোসেন ও মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক তরফদার সুয়েব। বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন- সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের পুত্র সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি এম নাসের রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালেদা রব্বানী, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মোঃ ফয়জুল করিম ময়ূন ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান। জাতীয় পার্টির থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন- জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ সাহাবউদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল হক। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ থেকে মাওলানা জামিল আহমদ আনসারী ও শরিফ খালেদ সাইফুল্লাহ দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে নিজেদের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আহমদ বিলাল কেন্দ্রের অনুমতি সাপেক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছেন। মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ আংশিক) ॥ এ আসনে প্রার্থী নয়, ফ্যাক্টর দলীয় প্রতীক। ব্যক্তির চাইতে দলীয় ইমেজই গুরুত্ব পায় এ আসনে। এ সংসদীয় আসনটিতে বিগত ৫টি নির্বাচনের পরিসংখ্যান এমনটিই জানান দেয়। আদিবাসী ও চা বাগান অধ্যুষিত শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের একাংশ নিয়ে মৌলভীবাজার-৪ আসন। এই নির্বাচনী আসনে চা বাগানের সংখ্যা ৩৫টি। এর মধ্যে ২১টি শ্রীমঙ্গলে আর কমলগঞ্জে ১৪টি। এই ৩৫টি বাগানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৮৫-৯০ হাজার। এই ভোটগুলোই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ আসনে প্রতীকেই জয়-পরাজয় নিশ্চিত হয়। নৌকাই এ আসনে বড় ফ্যাক্টর। এ আসনে দীর্ঘ পাঁচবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ। জেলার ৪টি সংসদীয় আসনের মধ্যে এটিই একমাত্র ব্যতিক্রম। যেখানে দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। বিগত সব জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীই বিজয়ী হয়েছেন। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও ভোটারদের কাছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দলের ভেতরে ও বাহিরে বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুস শহীদকে নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা। দলের নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘ সময় ধরে তিনি সংসদ সদস্য থাকায় নিজের পরিবারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন। তাঁর বলয়ের পছন্দের লোক পেয়েছেন দলীয় পদ পদবি। দলের নিবেদিত প্রাণ ত্যাগী নেতাকর্মীরা হয়েছেন পদ পদবি বঞ্চিত। তবে এসকল অভিযোগ মানতে নারাজ আব্দুস শহীদের রাজনৈতিক ঘনিষ্টজনরা। তাদের দাবি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাই তাঁর বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছে। ২০১৭ সালের শেষের দিকে নতুন জেলা কমিটি গঠিত হওয়ার পর প্রাণচাঞ্চল্য আসে দলের সাংগঠনিক কাজে। দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ভিন্ন দৃশ্যপট বিরাজ করছে এই আসনটিতে। চা বাগান ও আদিবাসী অধ্যুষিত আসনে ৫ বারের সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুস শহীদের একক আধিপত্য খর্ব হয়েছে। তাঁর শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজ দলের অন্তত ৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থী নৌকা প্রতীকের লড়াইয়ে মাঠে রয়েছেন সক্রিয়। অপরদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরীর বিপরীতে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায়ও অনেকেরই নাম শোনা যাচ্ছে। তারা সকলেই নানা কৌশলে মাঠে চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচার। ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত মৌলভীবাজার-৪ আসনে একাধারে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক চিফ হুইপ ও মৌলভীবাজার জেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি মোঃ আব্দুস শহীদ। তিনি ১৯৯৬ সালে হুইপ, ২০০১ সালে বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন দলীয় চীফ হুইপ ও ২০০৬ থেকে ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত জেলা আ’লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তাঁর নির্বাচনি এলাকার আওয়ামী লীগে রয়েছে ব্যাপক প্রভাব প্রতিপত্তি। এবারেও তিনি সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাঁরা হলেন- কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান। তাঁর ব্যক্তিত্বের কারনে নির্বাচনী এলাকায় স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগ সদস্য রণধীর কুমার দেব, ডা. হরিপদ রায়, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান সাপ্তাহিক শ্রীভূমি পত্রিকার সম্পাদক আব্দুর রহিম ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষানুরাগী অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হকের নামও শোনা যাচ্ছে। দলের একাধিক নেতাকর্মীদের অভিযোগ, উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আ’লীগের নিবেদীত প্রাণ নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করে তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন পদ-পদবি পাইয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের মতে- কেন্দ্রীয় আ’লীগ সদস্য অধ্যাপক রফিকুর রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের মন জয় করেই মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে সকলের কাছে রয়েছে তাঁর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা। তিনি দুইবার কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। শ্রীমঙ্গল উপজেলা আ’লীগ সদস্য রণধীর কুমার দেব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পরবর্তীতে শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। চা বাগান সংশ্লিষ্ট সংখ্যালঘুদের নেতা হিসেবে সব মহলে তাঁর রয়েছে পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা। এছাড়া চা শ্রমিকদের জোরালো দাবি এই আসনে বঙ্গবন্ধুর পরিবার থেকে কাউকে প্রার্থী হিসেবে দেয়ার। এদিকে এই আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থীর নামও শোনা যাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব), শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা মহসিন মিয়া মধু, শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপি সভাপতি আতাউর রহমান (লাল হাজী), যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি নেতা জালাল উদ্দিন জীপু ও বিএনপি নেতা মোঃ ইয়াকুব আলী। জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় নাম শোনা যাচ্ছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামাল হোসেন ও কমলগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোঃ দুরুদ আলী।
×