ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাত পোহালেই ঈদ

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ২১ আগস্ট ২০১৮

 রাত পোহালেই ঈদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ত্যাগের মহিমা নিয়ে বছর ঘুরে মুসলমানদের ঘরে আবার এসেছে ঈদ-উল- আজহা। আগামীকাল বুধবার দেশব্যাপী পালিত হবে পবিত্র এই উৎসব। ত্যাগের উৎসবে শামিল হতে সবাই ব্যস্ত এখন কোরবানির পশু কেনাকাটায়। পাশাপাশি প্রিয়জনদের সঙ্গে উৎসবে শরিক হতে রাজধানীবাসী এখন ঘরমুখো। বিশ্বের মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানও এটি। দিনটিকে ঘিরে ইতোমধ্যে সারাদেশে শুরু হয়েছে আনন্দ ও উৎসবের বন্যা। আল্লাহ পাকের প্রতি অপার আনুগত্য এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে প্রতিটি ঘরে। বুধবার ঈদের নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নামে পশু কোরবানিতে মেতে উঠবেন। এজন্য সারাদেশে ১ কোটি ১৬ লাখ গবাদি পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। কোরবানির পাশাপাশি ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। ঈদের নামাজ শেষেই কোরবানির বিধান রয়েছে। তাই দলে দলে মুসল্লিরা আগে ঈদের নামাজে শরিক হবেন। অন্যবারের ন্যায় এবারও দেশের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। প্রধান জামাতে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নামাজ আদায় করবেন। তাদের বসার জন্য পৃথকস্থান নির্ধারিত করা হয়েছে। এদিকে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি মুসলিম উম্মার সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। এছাড়া প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো পক্ষ থেকে ঈদ উপলক্ষে দেশবাসীর শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে যার যাকাত দেয়ার সামর্থ রয়েছে তার ওপর ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে পশু কোরবানি করাও ওয়াজিব (ধর্মীয় বিধান)। ঈদ-উল-আজহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুই দিন পর্যন্ত পশু কোরবানির জন্য নির্ধারিত। ঈদ-উল-আজহার নামাজ শেষে কোরবানির করতে হবে। বাংলাদেশের মুসলিমরা সাধারণত গরু খাসি বেশি কোরবানি দিয়ে থাকেন। বিধান অনুযায়ী এক ব্যক্তি একটি গরু, মহিষ বা খাসি কোরবানি করতে পারবেন। তবে গরু মহিষের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ ভাগেও কোরবানি করা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন কোরবানির জন্য খাসির বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। আর গরু মহিষের ক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। কোরবানির ত্যাগের মহিমা প্রকাশ করতে গিয়ে তাইতো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন ‘ওরে হত্যা নয়, ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন! দুর্বল ! ভীরু ! চুপ রহো, ওহো খামখা ক্ষুব্ধ মন! ধ্বনি উঠে রণি’ দূর বাণীর, আজিকার এ খুন কোরবানির। ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে সরকারী ছুটি। তবে ঈদের ছুটি সাপ্তহিক ছুটি এবং শোক দিবসের ছুটি পাশাপাশি হওয়ায় গত ১৪ আগস্ট বিকেল থেকে মানুষ বাড়ির পানে ছুটতে শুরু করেছে। সড়ক, নৌ, রেলপথগুলো এখন ঘরে ফেরা মানুষের পদচারণায় মুখরিত। যদিও ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি শেষ নেই। ইসলামের পরিভাষায় কোরবানি হলো নির্দিষ্ট পশুকে একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে তারই নামে জবেহ করা। ঈদ-উল-আজহার অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে, মনের পশু অর্থাৎ কু-প্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করা। কোরবানির ইতিহাস অতি প্রাচীন। মহান আল্লাহ ইব্রাহীম (আ) কে তাঁর শেষ বয়সে প্রিয়তম পুত্র ইসমাইল (আ)কে কোরবানি করার নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় ছেলেকে কোরবানি দেয়া তাঁর এক কঠিন পরীক্ষা। কিন্তু তিনি তাঁর মহান রবের হুকুমে নত হলেন। নিষ্পাপ পুত্র ইসমাইল (আ) ও নিজেকে আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। এক পর্যায়ে পিতা তাঁর পুত্রকে জবাই করতে যখন উদ্যত ঠিক তখনই মহান আল্লাহর কাছে ঈমানের কঠিন পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হলেন। আল-কোরআনে এই মহিমান্বিত ত্যাগের ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘অতঃপর সে (ইসমাইল) যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো তখন ইব্রাহীম (আ) তাকে বললেন, হে বৎস্য ! আমি স্বপ্ন দেখেছি তোমাকে কোরবানি করছি। এখন তোমার অভিমত কী ? সে বলল, হে পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তাই করুন। যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলেন এবং ইব্রাহীম (আ) তাকে জবাই করার জন্য শায়িত করলেন তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহীম ! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে জবাই করার জন্য দিলাম এক জন্তু।’ হযরত ইব্রাহীম (আ) এর অনুপম ত্যাগের অনুসরণে বিশ্ব মুসলমানরা কোরবানি করে আসছেন। তারই নিদর্শনস্বরূপ প্রতিবছর হজ পালনকারীরা পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। প্রায় ৪ হাজার বছর আগে হযরত ইব্রাহিম (আ) পুত্র কোরবানির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় প্রতিবছরই পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহপাকের আনুগত্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)ও এই আদর্শ অনুসরণ ও বহাল রাখতে আদিষ্ট হন। তিনিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন এবং তার উম্মতদের জন্য এই আদর্শ ও প্রথা অনুসরণের কঠোর নির্দেশ দিয়ে গেছেন। জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত সকাল ৮টায় ॥ প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ-উল-আজহার প্রধান জামাত হবে জাতীয় ঈদগাহে সকাল ৮টায়। তবে আবহাওয়ার প্রতিকূল হলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নামাজে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতী মাওলানা মুহাম্মদ এহ্সানুল হক। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন ঢাকার মিরপুরস্থ জামেয়া আরাবিয়া আশরাফিয়ার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ॥ এখানে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টা, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টা, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টা এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০.৪৫ মিনিটে। ইমামতি করবেন- প্রথম জামাত বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী, দ্বিতীয় জামাত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ড. মাওলানা মুশতাক আহমাদ, তৃতীয় জামাত মহাখালী হোসাইনিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা নজরুল ইসলাম আল মারুফ, চতুর্থ জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতী মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রব মিয়া আল বাগদাদী। জাতীয় সংসদ প্লাজায় ঈদ জামাত ॥ এদিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঈদ-উল- আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। এই জামাতে জাতীয় সংসদের হুইপরা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবেন। রাজধানীর কখন কোথায় ঈদের জামাত ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল মাঠে সকাল ৮টায়, এলিফেন্ট রোডস্থ এরোপ্লেন মসজিদের ঈদের জামাত সকাল সাড়ে ৭টায়, পুরান ঢাকাস্থ লক্ষীবাজার নূরানী জামে মসজিদে সকাল ৮টায়, পুরান ঢাকাস্থ ঐতিহ্যবাহী মিয়া সাহেবের ময়দান খান্কা শরীফ জামে মসজিদে সোয়া ৭টায়, পল্লীমা সংসদ ময়দানে ঈদ-উল- আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। এখানে মহিলাদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৮টায়, দ্বিতীয় জামাত সাড়ে ৯টায় এবং তৃতীয় জামাত ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। পল্লবী থানাধীন মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের এ ব্লকস্থ হারুণ মোল্লাহ ঈদগাহ, পার্ক এবং খেলার মাঠে সকাল সাড়ে ৭টায়, মীরবাড়ি আদি (মাদবর বাড়ী) জামে মসজিদে সকাল ৭টায়, কল্যাণপুর হাউসিং এস্টেট জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায়, ধানমন্ডি ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদ-উল- আজহার ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়।
×