ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণিতে বিশ্বজয় অগ্নিজের

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২১ আগস্ট ২০১৮

গণিতে বিশ্বজয় অগ্নিজের

১৭-তেই ‘বিশ্বজয়’ করলেন অগ্নিজ বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড (ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথমেটিক্স অলিম্পিয়াড বা ‘আইএমও’)-এ পারফেক্ট স্কোর করে হলেন প্রথম। পেলেন স্বর্ণপদক। সাড়ে ৪ ঘণ্টার প্রতিযোগিতায় (কার্যত, পরীক্ষা) মোট ৪২ নম্বরের মধ্যে ৪২ পেলেন অগ্নিজ। আধ নম্বরও কাটা সম্ভব হলো না পরীক্ষকদের! হাইস্কুল স্তরের ১০৪টি দেশের ৫৯৪টি গণিত-প্রতিভাকে নিয়ে এ বছর ৫৯তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের প্রতিযোগিতা হয়েছিল রোমানিয়ার ক্লু-ন্যাপোকায়। অগ্নিজ সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন। এই নিয়ে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে ‘পারফেক্ট স্কোর’ করলেন দুই প্রতিযোগী। অগ্নিজের জন্ম কলকাতায়। এখন ডান্ডির গ্রুভ একাডেমির ঝকঝকে ছাত্র অগ্নিজ। ২৪ বছর পর আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অগ্নিজই ব্রিটেনের প্রথম প্রতিযোগী, যিনি ‘পারফেক্ট স্কোর’ করার গৌরব অর্জন করলেন। নাগরিকত্বের দিক থেকে অগ্নিজ স্কটিশ হলেও, এ বার আন্তর্জাতিক অঙ্ক অলিম্পিয়াডে ব্রিটেনের ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদলের অগ্নিজই ছিলেন মধ্যমণি। জন্মসূত্রে কলকাতার আর নাগরিকত্বে স্কটিশ সেই অগ্নিজই রোমানিয়া থেকে কিশোর গণিত-প্রতিভার ‘বৈদুর্যমণি’ এনে দিলেন ব্রিটেনের ঘরে। ব্রিটেনের আর কোন প্রতিযোগী এ বার স্বর্ণ পাননি আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে গণিতশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করতে চান অগ্নিজ। সেটাই তাঁর ‘নেক্সট ইনিংস’। অগ্নিজের বাবা স্কটল্যান্ডের এ্যাবার্ডিন মেটারনিটি হসপিটালের কনসালট্যান্ট চিকিৎসক শুভায়ু বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘অগ্নিজ বরাবরই খুব পরিশ্রমী। তবে ওর এই সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে ওর স্কুল গ্রুভ একাডেমির।’ একটি ভাই রয়েছে অগ্নিজের। তার নাম- আরিয়ান। বয়স ১২। অগ্নিজের বাবা জানিয়েছেন, গণিতের দিকে দারুণ ঝোঁক রয়েছে আরিয়ানেরও। অগ্নিজের স্কুলের গোড়ার দিকের দিনগুলোর কথা স্মরণ করতে গিয়ে তাঁর বাবা বলেছেন, ‘প্রাইমারি স্কুলে পা দেয়ার আগেই ওর মধ্যে আমরা গণিতের বিরল প্রতিভার হদিস পেয়েছিলাম। ওকে আমরা ভর্তি করিয়েছিলাম গ্লাসগোর বিশপসব্রিজে উডহিল প্রাইমারি স্কুলে। ওই সময় উডহিল স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমার স্ত্রীকে বলেছিলেন, অগ্নিজের মধ্যে রয়েছে ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা।’ অগ্নিজের স্মরণশক্তি বহু বার তাক লাগিয়ে দিয়েছে অনেককে। অগ্নিজের বাবা জানিয়েছেন, গণিতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অগ্নিজের একের পর এক কৌতূহল মেটাতে পারছিলেন না ডান্ডিতে ফোর্টহিল প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকারা। এতে খুব বিরক্ত বোধ করছিল অগ্নিজ। তাই গ্রীষ্মাবকাশে যখন স্কুল ছুটি থাকে সেই সময় ডেভিড ডার্লিংয়ের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেছিলেন অগ্নিজের মা, বাবা। পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতক, বিজ্ঞান-লেখক ডার্লিং পিএইচডি করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানে। মা, বাবার দৌলতে তার পর থেকে গণিত ও পদার্থবিদ্যা সম্পর্কে প্রাইমারি স্কুলে পড়া অগ্নিজ তার যাবতীয় কৌতূহল মেটাতে শুরু করেন ডার্লিংয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই। ওই ডার্লিংয়ের সঙ্গেই তাঁর প্রথম বইটি লেখেন অগ্নিজ, প্রাইমারি স্কুল শেষ হওয়ার সময়। বইটির নাম- ‘ওয়্যার্ড ম্যাথ্স’। ইতোমধ্যেই যার স্বত্ব কিনেছে ৬টি দেশ। আমেরিকা, স্পেন, জাপান, চিন, ইতালি ও রাশিয়া। অগ্নিজের দ্বিতীয় বইটি প্রুফ সংশোধনের পর এখন ছাপাখানায়। আপাতত ঠিক হয়ে রয়েছে, অগ্নিজের তৃতীয় বইটি বেরুবে আর দুই বছর পরে, ২০২০ তে। ডান্ডি সিটি কাউন্সিলের চিফ এডুকেশন অফিসার অড্রে মে বলেছেন, ‘অগ্নিজের এই সাফল্য সত্যিই চমকপ্রদ। অগ্নিজের জন্য আমরা সকলেই গর্বিত।’ সূত্র : আনন্দবাজার
×