ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসাধনী চর্চা কেন ঝুঁকিপূর্ণ?

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২১ আগস্ট ২০১৮

 প্রসাধনী চর্চা কেন ঝুঁকিপূর্ণ?

হয়ত মানব জাতির সৃষ্টির শুরু থেকেই নারী জাতির প্রসাধনীর চর্চা চলে আসছে। একজন রমণীর রূপের পূর্ণতা কিছুতেই যেন আর আসে না এই প্রসাধনী ছাড়া। তাই নারীর জীবন আর যৌবন, স্বপ্ন আর কল্পনা এর সব কিছুতেই আছে যেন প্রসাধনীর ছোঁয়া। প্রসাধনীর ছোঁয়াতে আমেজ যতটুকু তার চেয়েও বেশি হচ্ছে তার চমকের ছোঁয়া। কিন্তু সেই প্রসাধনী ব্যবহারেরও আছে নানান সমস্যা। আজ সেই নিয়ে কিছু কথা। বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী পাওয়া যায় তা থেকে সৃষ্টি হতে পারে ত্বকের প্রদাহ, হতে পারে এলার্জি। আর এই প্রসাধনীজনিত প্রদাহকে মূলত ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন (ক) প্রাথমিক উত্তেজনা সৃষ্টিকারী (খ) সালোকসংবেদনজনিত (গ) এলার্জিজনিত। প্রথমেই আসা যাক নেলপলিশের কাথায়। এই নেলপলিশ ব্যবহার করে না এমন একজন মহিলাও খুঁজে বের করা মহা দুরূহ ব্যাপার। অথচ এই নেলপলিশে থাকে সালফোনোমাইড, থাকে ফরমালডিহাইড রেজিন যা ব্যবহারের ফলে গলায় এমন কি চোখের পাতায়ও প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। আবার অনেকেরই অভ্যাস আছে নেলপলিশ বার বার তুলে নতুন নেলপলিশ লাগানোর। এই তোলার জন্য যে পদার্থ ব্যবহার করা হয় তাতে থাকে অ্যাসিটোন যার থেকে নখের ক্ষয়ও হতে পারে। চুল পাকলে অনেকেই আবার কলপ ব্যবহার করেন। চুলের কলপে থাকে প্যারাফিনাইল ডাইঅ্যামাইন তা থেকে অনেকের ক্ষেত্রেই দেখবেন ব্যবহারের পরই মাথায় কিংবা গোফ বা দাড়িতে এলার্জির সৃষ্টি হয়। তাই এই ধরনের কলপ আপানার ত্বকে এলার্জির সৃষ্টি করবে কি না তা কানের লতির পিছনে ২৪ ঘণ্টা লাগিয়ে রাখতে পারেন। যদি সেখানে এলার্জির সৃষ্টি করে তবে তা আপনি যেখানেই ব্যবহার করবেন সেখানেই এলার্জির সৃষ্টি করবে। তাই অবশ্যই তা ব্যবহার না করাই উচিত। ইউরোপের মেয়েরা আবার মাথার চুলের রং সাদা বানাতেও পছন্দ করে। চুলের রং সাদা বানাতে যে কেমিক্যাল যেমন পারসাইড ও অ্যামোনিয়া ব্যবহার করা হয় তা প্রায়ই প্রাথমিক উত্তেজনাজনিত প্রদাহ বা এলার্জির সৃষ্টি করে। চুল কোঁচকানো বা সোজা করা বর্তমান যুগের একটি অন্যতম ফ্যাশন -এর জন্য যে পদার্থগুলো ব্যবহার করা হয় তার থেকে সাধারণত কোন বিক্রিয়া বা প্রদাহ বা এলার্জির সৃষ্টি হয় না সত্য কিন্তু তার থেকে চুল ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে। চুলে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন স্প্রে এখন বাজারে ভরা। আমরা প্রতিনিয়ত তার ব্যবহার করে চলছি। যাতে থাকে ল্যানোলিন যা এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে। বাজারে আবার বিভিন্ন হেয়ার লোশন বা টনিকও পাওয়া যায় সিনকোনার টিংচার তার থেকে এলার্জির সৃষ্টি হতে পারে। আবার সুগন্ধি পদার্থ ব্যবহারের অভ্যাস আমাদের অনেকেরই। এই সুগন্ধি পদার্থের ব্যবহার সামগ্রীও আপনার ত্বকে এলার্জি করতে পারে। কারণ তাতে থাকতে পারে রিসর্সিন, কুইনাইন সালফেট ইত্যাদি। নারীর জীবনে লিপস্টিকের ব্যবহার হয় না এটা যেন কল্পনাও করা যায় না। এই লিপস্টিক যে রঞ্জক পদার্থ থাকে তার থেকে কিন্তু অনেক মহিলার ঠোঁটেই এলার্জির সৃষ্টি হয়ে থাকে। কারণ এতে ডাই এবং ট্রেট্টা ব্রোমোফ্লোরোসিন ব্যবহার করা হয়ে তাকে। কাজেই যারা ঠোঁটের সমস্যায় ভোগেন; তারা লক্ষ্য করবেন যে, লিপস্টিক ব্যবহার করার পর তা বাড়ে কি না? একটা ভাল অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে মাস্কারা আইস্যাডো বা আইলাইনার কেনা ব্যবহার করে? মনে রাখবেন এর থেকেও এলার্জির সৃষ্টি হতে পারে। যাদের ত্বক একটু কালো কিংবা রৌদ্র গেলে কালছে দেখা যায় আমরা তাদেরকে সানস্ক্রীন লোশন বা ক্রিম ব্যবহারের পরামর্শ দেই। দেখা গেছে তার থেকেও মুখে এলার্জির সৃষ্টি হতে পারে। মুখের ব্রণ বা অন্যকোন সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে হয়ত কোন মলম জাতীয় ওষুধ মুখে ব্যবহার করতে বলেন। মনে রাখবেন ডাক্তারের দেয়া সেই মলমটিও যদি আপনার মুখে এলার্জির সৃষ্টি করে তাতে আশ্চর্য হবার কিছুই নেই। বগলে যাদের দুর্গন্ধ হয় তারা দুর্গন্ধ নিবারক স্প্রে বা পদার্থ ব্যবহার করেন। তাতে থাকে ফ্লোরাইড বা জিংক সল্ট যাও কিনা আপনার ত্বকে এলার্জি বা প্রদাহ সৃষ্টির কারণ হতে পারে। কোথাও বেড়াতে গেলে নতুন জামা কাপড় পরার অভ্যাস আমাদের অনেকেরই। মনে রাখবেন কাপড়কে রঙিন করতে, শক্ত আর চকচকে করতে এক ধরনের পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যা ঘামে আর গরমে দ্রবীভূত হয়ে ত্বকে লাগলে ত্বকের গায়ে প্রদাহের বা এলার্জির সৃষ্টি হতে পারে। উপসংহারে শুধু একটি কথাই বলতে চাই। দিন যতই বাড়ছে ততই বাড়ছে প্রসাধনীর সংখ্যা। তাই বিভিন্ন প্রসাধনীর নির্বিচার ব্যবহার না করাই উচিত এবং বার বার প্রসাধনীর পরির্বতন যুক্তিসঙ্গত নয়। যার যেটায় এলার্জি হয় না সেটাই ধরে রাখা ভাল। তবে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে- একটি বিশেষ প্রসাধনী দীর্ঘদিন ব্যবহারের পরেও তার দেহে সেই প্রসাধনী থেকেও এলার্জির সৃষ্টি হতে পারে। ডাঃ দিদারুল আহসান চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলরাজী হাসপাতাল ১২, ফার্মগেট, ঢাকা ফোন : ৯১১৭৭৭৫, ৮১৩০১১৩
×