ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাহিদা মিটছে দেশী গরুতে, দাম চড়া

শেষ সময়ে পশু বিকিকিনির ধুম

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২১ আগস্ট ২০১৮

 শেষ সময়ে পশু বিকিকিনির ধুম

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের পশুর বাজারে এখন চলছে শেষ সময়ের বিকিকিনি। বাজারগুলোতে গবাদি পশুর যোগান যথেষ্ট। তবে ক্রেতার চাপ থাকায় দামও চড়া। নগরীর অনুমোদিত পশুরহাট ছাড়াও অলিগলিতেও পশু বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই বাজার পর্যন্ত যাওয়ার ঝামেলা এড়াতে নিকটস্থ সুবিধাজনক স্থান থেকে গরু-ছাগল কিনে নিচ্ছেন। ঈদকে কেন্দ্র করে মৌসুমী ব্যবসায়ীর সংখ্যাও কম নয়। আজ শেষদিনে বিকিকিনি আরও বৃদ্ধি পাবে। একেবারে শেষ সময়ে এসে মূল্য পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় উৎকণ্ঠাও রয়েছে কোরবানিদাতাদের মধ্যে। এদিকে, সোমবার ছিল ঈদের পূর্বে সর্বশেষ কর্মদিবস। লাখ লাখ মানুষ বাড়িমুখী হওয়ায় রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল এবং জংশনগুলো অত্যাধিক ভিড়। চট্টগ্রাম নগরীর সাগরিকা বাজার, বিবিরহাটসহ ১০টি অনুমোদিত হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা চলছে। প্রতিটি হাটই গবাদি পশুতে ভরপুর। সোমবার দুপুরের পর থেকে ক্রেতাদের ভিড়ে ঠাসাঠাসি বাজারগুলোতে। শেষ কর্মদিবসের পর কোরবানি দাতা পরিবারগুলোর সদস্যরা বাজারমুখী। সবচেয়ে বেশি ভিড় সাগরিকা বাজার এবং বিবিরহাটে। এই দুই বৃহৎ বাজার ঘিরে কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সরগরম অবস্থা। এতে করে তীব্র যানজটেরও সৃষ্টি হয়। তবে ঈদের আনন্দের কারণে সে দুর্ভোগ মানুষ স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে। কোরবানির পশুর হাটে এবার ভারতীয় গরুর সংখ্যা তুলনামূলক কম। গতবছর এবং এর আগে যে পরিমাণ সাদা গরু দেখা গিয়েছিল এবার তেমনটি নয়। দেশী গরুতেই ভরেছে কোরবানি পশুর হাট। তবে এই পশুগুলোর সাইজ তুলনামূলকভাবে ছোট। দেশী গরুতেই এবার কোরবানির পশুর চাহিদা মিটছে। ভারতের গরু কম আসায় মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি। সাইজ ভেদে একেকটি গরুর মূল্য গতবছরের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি। খামারিরা এবার তাদের পালিত পশুর মূল্য পেয়ে খুশি। তবে অনেকের অভিযোগ, বেপারিরা যে মূল্যে তাদের থেকে পশু ক্রয় করে নিয়ে গেছে বাজারমূল্য তারচেয়ে অনেক বেশি চড়া। অনুমোদিত পশুরহাট ছাড়াও পুরো নগরজুড়ে অলিগলি এবং ছোটখাটো খালি জায়গায় পশুরহাট বসেছে। অনেকেই এই মৌসুমে বাজার কিংবা দূর দূরান্তের খামার থেকে গরু কিনে এনে নিজ এলাকায় বিক্রি করছেন। ক্রেতারাও একেবারে কাছাকাছি পেয়ে বাজারে যাওয়ার ঝামেলা এড়াতে এসব পশু কিনে নিচ্ছেন। প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়েই এ ব্যবসা চলছে। . নীলফামারী স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, নীলফামারী জেলায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। বিভিন্ন হাটবাজারে ভারতীয় গরুর আমদানি না থাকায় কদর বেড়েছে দেশী গরুর। শহরমুখী কোরবানি পশুর হাটে দাম একটু বেশি হওয়ায় মানুষজন ছুটছে গ্রামমুখী হাটগুলোতে। গ্রামের হাটে দাম বেশ কম পাওয়া যাচ্ছে। জেলা প্রাণিস¤পদ বিভাগের সূত্র মতে, জেলায় ছোটবড় মিলে গরু, ছাগল, ভেড়ার খামার রয়েছে ২৩ হাজার ৬৬০টি। এর মধ্যে গরুর ১৭ হাজার ৬০০টি, ছাগল পাঁচ হাজার ৪৩০ ও ভেড়া ৬৩০ টি। জেলা প্রাণিস¤পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোনাক্কা আলী বলেন, এবারে যে পরিমাণ সুস্থ পশু মজুত আছে তাতে কোরবানির পশু সঙ্কটের কোন আশঙ্ক নেই। তিনি জানান, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে জেলায় ৬১ হাজার ৬৯৯টি গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৪৭ হাজার ৯৯৫ ও ছাগল, ভেড়া ১৩ হাজার ৭০৪ টি। ২০১৭ সালে গরু, ছাগল, ভেড়া মিলে ৬১ হাজার ৬৬৭ টি পশু কোরবানি হয়েছিল। এদিকে জেলার উৎপাদিত গরু ছাড়াও বাইরের জেলা হতেও গরু আসছে নীলফামারীতে। ৫৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল কাজী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাজারে ভারতীয় গরু গত বারের তুলনায় নগণ্য, অর্থাৎ নেই বললেই চলে। আমরা ঈদ উপলক্ষে সীমান্ত এলাকা কঠোর নজরদারিতে রেখেছি। আশা করি ভারতীয় গরু ছাড়াই দেশীয় গরু দিয়ে কোরবানি স¤পন্ন হবে। রবিবার ক্রেতারা জানায়, নীলফামারী জেলা শহরের কোরবানির হাটে যে এঁড়ে গরু ৫০ হাজার ও যে খাসি ১৫ হাজার টাকা সেই রকম গরু টেঙ্গনমারী হাটে ৪০ হাজার ও খাসি ১০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। গরু ও খাসি মিলে পরিবহনে খরচ ৪০০ টাকা। আবার টেঙ্গনমারী হাটে ৩০ হাজার টাকার অনেক ভাল গরুও মিলে যাচ্ছে। ফলে শহরের ক্রেতারা ভিড় করছে গ্রামমুখী হাটে। হাটে পর্যাপ্ত দেশী গরুর আমদানি থাকায় ক্রেতারা তাদের পছন্দের গরু-ছাগল কিনে ফেলেছেন। কিন্তু ঈদের দিনে কোরবানির গরুর মাংস কিংবা হাড় কাটতে গাছের গুঁড়ির বিকল্প নেই। মানুষ তাই পশুর হাটগুলোতে এখন গরুর পাশাপাশি হন্যে হয়ে খুঁজছে গাছের গুঁড়ি। . বেলকুচি সংবাদদাতা বেলকুচি সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, সিরাজগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলের পশুরহাটগুলো জমে ওঠা চলছে জমজমাট বেচাবিক্রির আজ শেষ দিন। এ বছর প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মোটাতাজা করা গরুসহ প্রচুর দেশী গরু আমদানি হচ্ছে। ভারতীয় গরুর আমদানি না থাকায় দেশী গরুর দাম ও চাহিদা বেড়েছে। ফলে গো-খামারি ও চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। এদিকে সীমান্ত পথে নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে গরু-মহিষ আমদানির খবরে চাষীদের মধ্যে কিছুটা হতাশাও কাজ করছে। তবে এবার কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে খামারি ও চাষীরা লাভবান হবে বলে অনেকেই আশা প্রকাশ করেছেন। সরেজমিন জানা যায়, চৌহালী উপজেলার জোতপাড়া, খাষপুখুরিয়া ও চরসলিামাবাদ, এনায়েতপুরের কোরবানির পশুরহাটে দেশী জাতের প্রচুর গরু আমদানি হচ্ছে। তবে পশুরহাটগুলোতে ভারতীয় গরু-মহিষের আমদানি নেই। এ সুযোগে অতি মুনাফালোভী এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ও বেপারিরা স্থানীয় পশুরহাটগুলো থেকে গরু কিনে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে গরুর দাম বাড়িয়ে দিতে পারে বলে অনেকেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ অঞ্চলের গোখামারি ও পশু পালনকারীরা কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় দেড় লক্ষাধিক গরু সরবরাহ করে থাকেন। গরুর বেপারিরা চরাঞ্চলের খামারি ও চাষীদের বাড়ি থেকে গরু কিনছেন। হাটে দেশী গরুর প্রচুর আমদানি হচ্ছে, পাশাপাশি নেই বললেই চলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের গরু-মহিষের আমদানি। ফলে দেশী গরুর চাহিদা বেড়েছে। দাম বেশি হওয়ায় মাঝারি সাইজের গরু কেনার প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি। দেশী ক্রস সিরাজগঞ্জ ব্রিড, অস্ট্রেলিয়ান-ফ্রিজিয়ান ব্রিড, ইন্ডিয়ান হরিয়ান ব্রিড, পাকিস্তানী সাহিয়াল ব্রিড জাতের গরু প্রচুর আমদানি হচ্ছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে খুব কম। এই জাতের প্রতিটি গরু বিক্রি হয় এক লাখ থেকে তিন লাখ টাকা দামে। তবে ঢাকা, চিটাগাং ও সিলেটের ব্যবসায়ীরা এলে দেশী হাইব্রিড ক্রস জাতের গরু বেশি বিক্রি হবে। চৌহালীর জোতপাড়া, এনায়েতপুর হাটসহ জেলার অধিকাংশ পশুরহাটে সড়ক ও নৌ-পথে যোগাযোগের সুন্দর ব্যবস্থা থাকার কারণে দেশের গরুর ব্যবসায়ীদের কাছে হাটটির গুরুত্ব অনেক বেশি। শুধু এলাকার গরু ব্যবসায়ীরাই নয় বগুড়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা, সিলেট ও চিটাগাংসহ বিভিন জেলার বেপারিরা এই হাটে গরু কিনতে আসেন। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার, রবিবার, ও বুধবার এখানে পশুরহাট বসে। চৌহালী উপজেলাধীন এনায়েতপুর থানা সদরের পশুর হাটে শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পশুরহাটে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। দূর-দূরান্ত থেকে গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা শত শত ট্রাক, নসিমন, করিমন ও নৌকায় করে হাজার হাজার গরু নিয়ে আসছেন। ছোট, বড় ও মাঝারি সব ধরনের গরু আমদানি হয়েছে। হাটে ভারতীয় গরু-মহিষের আমদানি নেই। হাটে কিছু নেপালী ও ভুটানের গরু-মহিষ আমদানি হয়েছে। তবে পরিমাণে খুবই কম। ফলে দেশী গরুর চাহিদা অনেক বেড়েছে। দাম বেশি হওয়ায় দেশী ছোট ও মাঝারি গরুর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। গত তিন বছর লোকসানের পর এ বছর গরুর ভাল দাম পেয়ে সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের খামারি ও চাষীরা খুশি হয়েছেন বলে তারা জানিয়েছেন। এনায়েতপুরের গরু ব্যবসায়ী শুকুর আলী বেপারি, আব্দুল কাদের মিয়া ও নুর মোহাম্মদ সরকার জানান, ঢাকার গাবতলী হাটসহ অন্যান্য পশুর হাটে গরু আমদানি হচ্ছে। তবে ঢাকায় এখনও বেচা-কেনা তেমন জমে ওঠেনি। তারা এ বছর খামারিদের কাছ থেকে হাইব্রিড জাতের শতাধিক বড় গরু কিনে ঢাকার গাবতলীসহ অন্যান্য পশুর হাটে পাঠিয়েছেন। এদিকে বিদেশী গরুর আমদানি কমে যাওয়ায় পশুরহাটগুলোতে দেশী গরুর দাম ও চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। বেচাÑ কেনার অবস্থা এ রকম চলতে থাকলে এ বছর বেপারি ও খামারিদের আশাতীত লাভ হবে। এবার গরু ভাল খামারিরা ভাল দাম পাওয়ার আশা করছেন। তবে গোখাদ্য, চিকিৎসা খরচ ও ওষুধের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অত্যধিক বেড়ে গেছে। যদি গরু ব্যবসায়ী ও বেপারিরা কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি না করে, তবে দেশী গরুতেই কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এদিকে পশুরহাটগুলোর ইজারাদারের প্রতিনিধিদের কাছে গবাদিপশুর ক্রেতা ও বিক্রেতারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা অনেকেই জানান, হাট ইজারাদারের প্রতিনিধিরা নিজেদের ইচ্ছামতো অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছেন। নিয়ম অনুয়ায়ী হাটে টোল আদায়ের চার্ট টানানো হয়নি বলেও জানান তারা।
×