ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেপ্টেম্বরেই গ্রেনেড হামলা মামলার রায়

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২০ আগস্ট ২০১৮

সেপ্টেম্বরেই গ্রেনেড হামলা মামলার রায়

বিকাশ দত্ত ॥ একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় সেপ্টেম্বরেই ঘোষণা করা হবে। আইনমন্ত্রী ও মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অভিমত থেকে এমন আভাসই পাওয়া গেছে। মামলাটি এখন বিচারিক কার্যের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মামলায় এ পর্যন্ত ৪৪ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হয়েছে। আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে পঞ্চম দিনের মতো যুক্তিতর্ক পেশের পর আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ আগস্ট বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্কের জন্য পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক আদালতের রায় সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেয়া সম্ভব হবে। এ মামলার তদন্তে অনেক কিছু বেরিয়েছে, এর পেছনে ষড়যন্ত্রের কথাও আমরা জেনেছি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার যুক্তিতর্ক প্রায় শেষ পর্যায়ে, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে রায় হবে। এই রায় হলে বাংলাদেশ আরেকবার দায়মুক্ত হবে। এই সরকার সব হত্যা মামলার বিচার করবে। এমনকি বিএনপি চাইলে জিয়ার হত্যার বিচারও করে দেবেন আইনের শাসনে বিশ্বাসী বর্তমান সরকার। অন্যদিকে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, মামলাটি প্রায় শেষের দিকে । রাষ্ট্রপক্ষ ২২৫ সাক্ষী দিয়েছে। সাক্ষীরা আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণে সক্ষম হয়েছেন। আশা করি শীঘ্রই এ মামলার রায় হতে পারে। আসামিপক্ষ এ মামলায় আইনে প্রদত্ত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। তবে আসামিপক্ষ ন্যায়বিচারকে বিলম্বিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিচারপ্রার্থী মানুষ এবং দেশের জনগণ অধিক সময় অধীর আগ্রহে দিন কাটাচ্ছেন সেটা অচিরেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে পরিসমাপ্তি ঘটবে। রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল জনকণ্ঠকে বলেছেন, আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হবার মাধ্যমে বিচার কার্যের একটা পর্যায় শেষ হবে। এর পরে রাষ্ট্রপক্ষ যদি মনে করে আসামি পক্ষের যুক্তিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে আইনগত জবাব দেয়ার প্রয়োজন যা দরকার তা হলে দেবে। এর পর মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করা হবে। সুতরাং সর্বাত্মকভাবে আসামি পক্ষ যদি কালক্ষেপণ না করে তা হলে আইনমন্ত্রীর আশাবাদই সত্য হবে। মঙ্গলবার হবে গ্রেনেড হামলার ১৪ বছর । বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সালাম পিন্টুসহ ২৩ আসামি কারাগারে ও ৮ জন জামিনে রয়েছেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আসামিপক্ষ সাক্ষীদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি পক্ষের যুক্তিতর্কের জন্য আগামী ২৭, ২৮ ও ২৯ আগস্ট মামলার তারিখ ধার্য করা হয়েছে। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগস্টের ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে। মামলায় এ পর্যন্ত ৪৪ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হয়েছে। আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে পঞ্চম দিনের মতো যুক্তিতর্ক পেশ করেছেন তার আইনজীবী নজরুল ইসলাম। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন ‘ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিয়মতান্ত্রিকভাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি এমনও করতে পারতেন একটা স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে তিনদিনের মধ্যে বিচার করে সামারি ট্রায়াল করে অপরাধীদের ফাঁসি দিতে পারতেন। কিন্ত তিনি তা করেননি, দেশের আইন মেনেছেন এবং দেশের আইনী পদ্ধতি মেনেই তাদের বিচার চলছে। ২১ আগস্ট কিন্ত কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ২১ আগস্ট হচ্ছে বাংলাদেশকে ব্যর্থ করার জন্য যে ষড়যন্ত্র তারই ধারাবাহিকতা। ষড়যন্ত্রকারীরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে উপস্থিত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করেছিল। তারা মনে করেছিল যে, তারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে হত্যা করেছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি যে, বঙ্গবন্ধুর রক্ত তার আরও দুই কন্যার মধ্যে প্রবাহিত। তারা বাংলাদেশে আসতে পারলে আবার যে বাংলাদেশ সূর্যের মুখ দেখবে সেটা ষড়যন্ত্রকারীরা ভাবেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে তারা অনেকবার হত্যার চেষ্টা করেছে। তাকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হত্যা করার প্রচেষ্টা সেসব প্রচেষ্টারই অংশ ছিল। রবিবার দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় ফাঁসি কার্যকর এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দ্রুত বিচারের দাবিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী। আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জনগণের দল নয়। বিএনপি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে গঠিত একটি দল। বিএনপি ষড়যন্ত্র করতেই জানে। বিএনপি বিদেশের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টাও করে। আমি আগেও বলেছি আজও বলছি, বঙ্গবন্ধুর একজন চিহ্নিত খুনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। দেশটির সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা ওই খুনীকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনারত। যুক্তরাষ্ট্রের এখন যারা কর্ণধার তারা বঙ্গবন্ধুর খুনীকে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে অত্যন্ত সমবেদনশীল। তারা আইনীভাবে তাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমাদেরকে যথেষ্ট সহায়তা করছেন। কানাডা থেকে নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও আমরা অনেকটা এগিয়ে গেছি। যখনই বাংলাদেশ মাথা তুলে দাঁড়াতে চায়, যখনই বাংলাদেশের মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দেশের স্বার্থে আন্দোলন করে তখনই একটি কুচক্রী মহল তাদের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করতে থাকে। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরে দেশ গড়ার কাজে হাত দেন। যখন তিনি সুষ্ঠুভাবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশকে একটা পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই সেই ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি যারা বাংলাদেশকে বলে বেড়াচ্ছিল একটি তলাবিহীন ঝুড়ি তারা ষড়যন্ত্র শুরু করেন। তারা কিছু মুক্তিযোদ্ধা নামের রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাদের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রথমে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের তারা পুনর্বাসন করে। এমনকি খুনীদের রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব কূটনৈতিক মিশনে খুনীরা চাকরি পায়। এই খুনীদের ওপরে নির্ভর করে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন। তারপর চিহ্নিত রাজাকারদের তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন। মন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানকে তার লোকেরাই হত্যা করেছে। এরশাদ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রতিষ্ঠা করার জন্য আরেক ধাপ এগিয়ে গেছেন। তার নির্বাচনকে বৈধ করার জন্য বঙ্গবন্ধুর খুনী ফারুক রহমানকে তিনি সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছেন। খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যান। তিনি রাজাকার আব্দুর রহমান বিশ^াসকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন। তিনি মুজাহিদ ও নিজামীকে মন্ত্রী বানান। তারপর ১৯৯৬ সালে একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে ৪৫ দিনের জন্য তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। জনগণের আন্দোলনের মুখে সেই ক্ষমতা তাকে ছাড়তে হয়েছিল। সেই ৪৫ দিনের অপকৃতির ছাপও রেখে গেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল রশিদকে বিরোধীদলীয় নেতা বানিয়েছিলেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের চোখ খুলে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ উন্নয়ন চায় এবং সেই উন্নয়ন জননেত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমেই চায়। তিনি বিএনপি-জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বলেন, আপনাদের ষড়যন্ত্র ও আসল উদ্দেশ্য সমন্ধে বাংলাদেশের জনগণ ওয়াকিবহাল। সেজন্যই নির্বাচনে আপনাদের জনগণ ভোট দেবে না। আপনারা সেটা জেনেই নির্বাচনে আসতে চান না। আপনারা একেক দিন একেক অজুহাতের মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেন। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে নির্বাচন হবে এবং সেই নির্বাচন জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই হবে। কোন দল নির্বাচনে আসল, আর কোন দল নির্বাচনে আসল না সেটা সেই দলের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু কোন একটা দল নির্বাচনে আসবে না আর সেজন্য নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে বাংলার জনগণ তা হতে দেবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আআমস আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
×