ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের বিভেদ কাজে লাগিয়ে জিততে চায় বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২০ আগস্ট ২০১৮

 আওয়ামী লীগের বিভেদ কাজে লাগিয়ে জিততে চায় বিএনপি

রামিজ আহসান, মেহেরপুর ॥ জমে উঠেছে মেহেরপুরে নির্বাচনী রাজনীতি। জেলার দুটি আসনেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। ছোট ছোট শোডাউন, গণসংযোগ, উঠোন বৈঠক, শুভেচ্ছা বিনিময়, গ্রুপিং-লবিংয়ের মাধ্যমে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। ভোটারদের মধ্যে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণের কমতি নেই। কে কোন্ দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন, কে মনোনয়ন পেলে ভাল হয় তা নিয়েও চলছে এন্তার আলোচনা। বরাবরই প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছে। এইচ এম এরশাদের শাসনামলে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও এ আসনে বর্তমানে জাপার সাংগঠনিক অবস্থা খুবই করুণ। অন্যান্য দলের অস্তিত্বও রয়েছে খাতা-কলমে। বর্তমানে জেলার দুটি আসনই রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে। যদিও মেহেরপুর-২ আসনে বর্তমান সাংসদ বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ কারণে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আসন দুটি ধরে রাখতে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি চাচ্ছে আসন দুটো পুনরুদ্ধার। নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা বিরোধ থাকলেও বিএনপি অনেকটাই ঘর গুছিয়ে নিয়েছে। তবে দুটি দলেরই রয়েছে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অভিমত, যে কেউই মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে কে মনোনয়ন পাবেন তা নির্ধারণ করবে দলের হাইকমান্ড। মেহেরপুর-১ (মুজিবনগর-মেহেরপুর সদর) ॥ এ আসনে বিগত নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জহুরা তাজউদ্দীনকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির আহাম্মদ আলী। কিন্তু আহাম্মদ আলীর মৃত্যুতে ১৯৯৯ সালের উপনির্বাচনে আসনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রফেসর আবদুল মান্নান। ২০০১ সালের নির্বাচনে আ’লীগ প্রার্থী প্রফেসর আবদুল মান্নানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত সংসদ সদস্য আহাম্মদ আলীর পুত্র ছাত্রমৈত্রী থেকে বিএনপিতে যোগ দেয়া মাসুদ অরুণ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি পুনরায় দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল আবেদীন বিএনপি প্রার্থী মাসুদ অরুণকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান ফরহাদ হোসেন দোদুল। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী এ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলামকে হারিয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি এ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মনোনয়ন নিয়ে এ আসনে দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। তবে গত ২৫ এপ্রিল মেহেরপুর পৌরসভা নির্বাচনে আসনটির সকল নেতাই নৌকার প্রার্থী জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফিজুর রহমান রিটনকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামেন এবং রিটন মেয়র নির্বাচিত হন। তবে মাঠের নেতারা বলাবলি করছেন, দলীয় কোন্দল ভুলে নয়, বরং কেন্দ্রীয় নেতাদের সুদৃষ্টি পেতেই তাঁরা সবাই মাঠে নেমেছিলেন। তবে মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন দোদুল নির্বাচিত হওয়ার পর এ আসনের বেশ পরিবর্তন আসে। সন্ত্রাসী ও অপরাধমূলক কর্মকা-, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধ কমে আসে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এ আসনে আওয়ামী লীগ এখন স্পষ্টত দু’ভাবে বিভক্ত। দলটির এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক জেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীন। অপর পক্ষে জেলা আ’লীগের বর্তমান সভাপতি ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন দোদুল। আগামী নির্বাচনে এ দু’জনই প্রার্থী হতে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন পেতে আরও মাঠে রয়েছেন সাবেক এমপি ও জেলা আ’লীগের সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান, জেলা আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী, কেন্দ্রীয় আ’লীগের উপকমিটির প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সদস্য এম এস ইমন, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমান পৌর আ’লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম, জেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট ইবরাহীম শাহীন ও জেলা আ’লীগের সদস্য আব্দুস সালাম। এদিকে বিএনপিতে বড় ধরনের কোন কোন্দল না থাকলেও মনোনয়ন দৌড়ে দু’জনের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুণ এবং জেলা বিএনপির সদস্য ও পেশাজীবী সংগঠন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেন। এছাড়াও সাবেক জেলা বিএনপির এক নম্বর সদস্য ও মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি কর্নেল (অব.) সামস, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আনছারুল হক, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ইলিয়াস হোসেন, সহসভাপতি হাফিজুর রহমান হাফি, সহসভাপতি আলমগীর খান ছাতু মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। ২০ দলের শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে এ আসন থেকে নির্বাচনের অনুমতি দেয়া হলে জেলা জামায়াতের আমীর মওলানা তাজউদ্দীন খানকে প্রার্থী করার চেষ্টা করা হবে বলে জানা গেছে। মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে জেলা সভাপতি আব্দুল হামিদ মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তবে জাতীয় পার্টির কান্ডারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আমিরুল ইসলাম পালু। সম্প্রতি তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। জাতীয় পার্টির তেমন কোন কর্মকান্ড চোখে পড়ে না। দলের মধ্যে বিভেদ ও দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলার সভাপতি ফরহাদ হোসেন দোদুল বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। তাই ছোটখাট ভুলত্রুটি বা ভুল বোঝাবুঝি থাকতেই পারে। তবে দলে কোন গ্রুপিং আছে বলে আমি মনে করি না। আর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এ এলাকায় কোন সন্ত্রাসী কর্মকা-, মস্তানি, চাঁদাবাজি নেই। মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক সংগঠিত। রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, নদী খনন ও শিক্ষাসহ নাগরিক অধিকারের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। তাই আমি আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী আবারও তাঁকে মনোনয়ন দেবেন এবং নৌকা বিজয়ী হবে। সাবেক এমপি প্রফেসর আব্দুল মান্নান বলেন, তাঁর সময়ে মানুষ খুব ভাল ছিল। জেলার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। জেলার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাঁকে আবার এমপি হিসেবে দেখতে চায়। তাই মনোয়ন চাইবেন। আশা করছেন প্রধানমন্ত্রী তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে তাঁকেই মনোনয়ন দেবেন। সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেবেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সকলে তাঁর সঙ্গে রয়েছে। তাঁকে মনোনয়ন দিলে নৌকা বিজয়ী হবেই। তবে নৌকা প্রতীক প্রধানমন্ত্রী যাকেই দেবেন, জেলা আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী তাঁর পক্ষেই কাজ করবে। এ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী বলেন, তিনি জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন দলকে সুসংগঠিত করেছেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীনও জেলার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী তাঁর ওপর আস্থা রাখবেন বলে তিনি আশাবাদী। এমএস ইমন বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন তরুণদের নেতৃত্ব দেখতে চাচ্ছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও তাদের সুখ-দুঃখে তিনি সব সময় সঙ্গে রয়েছেন। তাই এবার নির্বাচনে আ’লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন তিনি। এ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম বলেন, সেই ছাত্রাবস্থায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হবার পর থেকে এ পর্যন্ত দলীয় সকল কর্মসূচী সফলভাবে পালন করে আসছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। পরবর্তী এমপি হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁকেই দেখতে চাচ্ছে। এ্যাডভোকেট ইবরাহীম শাহীন বলেন, বহুদিন থেকে দল করছি। নানা কর্মসূচী পালন করে আসছি। মনোনয়ন চাইব। তবে প্রধানমন্ত্রী নৌকা প্রতীক দিয়ে যার ওপর আস্থা রাখবেন তাঁর অবস্থান সেখানেই থাকবে। আব্দুস সালাম বলেন, ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি করছেন। তাই দলীয় মনোনয়ন চাইব। এদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ বলেন, দলীয় সকল কর্মসূচী পালন, নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ, জেলা বিএনপি পরিচালনা, নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে, দুর্দিনে সব সময় তাদের পাশে থেকে সকল দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। মামলা খেয়ে জেলও খাটতে হয়েছে। বর্তমানে দলে কোন বিভেদ নেই। সকলে ঐক্যবদ্ধ। বেগম খালেদা জিয়া তাঁকেই ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেবেন এবং আগামী নির্বাচনে বিএনপি অবশ্যই বিজয়ী হবে। জাকির হোসেন বলেন, বর্তমানে জনগণ আবার বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। তিনি বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। পেশাজীবী সংগঠন শিক্ষকদের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তাই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব। আমিরুল ইসলাম বলেন, সব সময় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখা, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা, বিপদে-আপদে সহযোগিতা করাই তাঁর কাজ। তিনি দলীয় সকল কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছেন। দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন তিনি। আশা করছেন নেত্রী তাঁর প্রতি আস্থা রাখবেন। ১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ বলেন, জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে জোটের পক্ষে তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তবে কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেই সিদ্ধান্তই পালন করব। এ আসনের সাধারণ ভোটাররা মনে করেন, আওয়ামী লীগ নেতারা দলীয় কোন্দল ভুলে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করলে এ আসনে আবারও আওয়ামী লীগের বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সংশয় রয়েছে, শেষ পর্যন্ত সবাই এক হয়ে থাকতে পারবেন কিনা। বিএনপিতে দলীয় কোন্দল না থাকায় দলটির প্রার্থী রয়েছেন শক্ত অবস্থানে। আগামী নির্বাচনে যে দল ভেদাভেদ দূর করে একক প্রার্থী নিয়ে মাঠে নামবেন সে দলের প্রার্থীই ভোটের বিচারে এগিয়ে থাকবেন। আর উভয় দলই যদি একক প্রার্থী নিয়ে ভেদাভেদ ভুলে কাজ করে তাহলে লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। মেহেরপুর-২ (গাংনী) ॥ এ আসনেও ক্ষমতাসীন দলে রয়েছে কোন্দল-দ্বন্দ্ব-বিভেদ। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে জেলার সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেকের হাতে। কিন্তু মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন আওয়ামী লীগেরই সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন বর্তমান সাংসদ মকবুল হোসেন। এ নিয়ে বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত নির্বাচনের পর থেকে আজ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসন হয়নি, সমঝোতায় আসতে পারেননি দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। মাঝে মাঝে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে থাকে। দু’ভাগে বিভক্ত দলটিতে একপক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক। এ দু’জন আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন প্রত্যাশী। স্থানীয় সমর্থক ও ভোটারদের মতে, নির্বাচন সামনে রেখে এ আসনের বিভক্তি দূর করতে না পারলে ফলের বিপর্যয় আসতে পারে। তবে ঐক্যবদ্ধ হলে আগামী নির্বাচনেও এ আসনে নৌকার জয় সম্ভব হবে। ওই দুই নেতা ছাড়াও আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছেন গাংনী উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন, জেলা আ’লীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক মিজানুর রহমান রানা, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ও জেলা আ’লীগের সদস্য সেলিনা আক্তার বানু, মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসক প্রজন্মের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ডাঃ এস এম নাজমুল হক সাগর (বর্তমান সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি সেলিনা আক্তার বানুর ভাই), আ’লীগ নেতা মকলেচুর রহমান মুকুল, উপজেলা আ’লীগের সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র আহাম্মদ আলী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম। আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত বর্তমান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এবার চমক দেখাতে চান জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরোর সদস্য নুর আহম্মেদ বকুল। তিনি দাবি করেন, গেল ২৩ ফেব্রুয়ারি গাংনী হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত এক জনসভা থেকে দলের সভাপতি রাশেদ খান মেনন ১৪ দলের প্রার্থী হতে তাঁকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। এ ছাড়াও জেলা জাসদের সভাপতি ওমর আলী, জেলা জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সেলিম, উপদেষ্টা কিতাব আলী মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। এদিকে বিএনপিতে বড় ধরনের কোন কোন্দল না থাকলেও মনোনয়ন দৌড়ে দু’জনের নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন- জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন এবং জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন। এছাড়াও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান বাবলু ও গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোরাদ আলী দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তারা জানান, কেন্দ্র যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষেই নির্বাচনী মাঠে থেকে কাজ করবেন। ২০ দলের শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে এ আসন থেকে নির্বাচনের অনুমতি দেয়া হলে গাংনী উপজেলা নায়েবে আমির নাজমুল হুদাকে প্রার্থী করা হবে বলে জানা গেছে। দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভেদ সম্পর্কে গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, মধ্যস্থতার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে স্বার্থবাদীরা দলটিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করায় সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ দানা বেঁধে রয়েছে। মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক বলেন, দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতি করছি। নিজের স্বার্থ কখনও দেখিনি। জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে চাই। আগামী নির্বাচনে যিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন, তার পক্ষেই গাংনী আ’লীগের নেতাকর্মীরা কাজ করবেন। এবার গাংনীর মানুষ প্রধানমন্ত্রীর নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। বর্তমান সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন বলেন, তিনি দু’বার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। বর্তমানে স্থানীয় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে রয়েছে। গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, শুভেচ্ছা বিনিময়সহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই তিনি নির্বাচন করবেন এবং আবারও বিজয়ী হবেন। ২০০১ সালে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েও বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রতিহিংসাবশত দলের লোকজনই তাঁকে ভোট না দিয়ে বিএনপি প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সহায়তা করেছে। তাই তিনি পরাজিত হন। এদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, এমপিওভুক্তি, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ প্রতিশ্রুতি পূরণে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করে থাকেন সংসদ সদস্যরা। গাংনীর ক্ষেত্রে এ চিত্র একেবারেই ভিন্ন। গাংনী উপজেলার কোন উন্নয়ন নেই। এবার স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে আছেন। দলের জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছেন এবারও দলীয় মনোনয়ন তাঁকেই দেয়া হবে। বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন বলেন, তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে এলাকায় জনগণের জন্য ব্যাপক কাজ করেছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গাংনীবাসীর প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন। বিরোধী দল হিসেবে নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে কারাগারেও যেতে হয়েছে। গাংনীবাসী তাঁর সঙ্গে আছে। এবার তিনি বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন। অন্যদিকে এ আসনে ২০ দলের শরিক দল এলডিপির কেন্দ্রীয় নেতা বিএনপি থেকে দু’বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল গনি জোটের কাছ থেকে এ আসনটি জোরালোভাবে চাইবেন। তিনি জানান, বিএনপি থেকে নির্বাচন করে এমপি হয়ে ১০ বছর জনগণের সেবা করেছেন। এবার বিএনপির শরিক দল হিসেবে এলডিপিকে ৫টি আসন দিলেও তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে বিশ্বাস করেন। তাই তিনি জোটের প্রার্থী হতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, আ’লীগ নেতাকর্মীরা দলীয় কোন্দল ভুলে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করলে আসনটি পেতে পারে আওয়ামী লীগ। তবে সংশয় একটাই, শেষ পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী এক থাকবে কিনা? উভয় দলই যদি একক প্রার্থী নিয়ে ভেদাভেদ ভুলে কাজ করে তাহলে লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে।
×