ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি নির্বাচন থেকে সরার অজুহাত খুঁজতে পারে ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২০ আগস্ট ২০১৮

   বিএনপি নির্বাচন থেকে সরার অজুহাত খুঁজতে পারে ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে সড়কের অবস্থা এখন ‘অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে’ ভাল দাবি করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবার ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি গতবারের চেয়ে কম হবে। রবিবার ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। তবে কমলাপুরে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্রেন আসতে বিলম্ব হওয়ায় ছেড়ে যেতেও বিলম্ব হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়া থাকলে লঞ্চ চালাতে বারণ করেছেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। রবিবার সকাল থেকে রাত অবধি টার্মিনালমুখী ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। মহাখালী বাস টার্মিনালের মালিক ও শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, ময়মনসিংহের দু ঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে সময় লাগছে অন্তত ৬ ঘণ্টা। মহাখালী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা যেতে সময় লাগছে প্রায় চার ঘণ্টা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত আরও বেশি পরিমাণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ও স্কাউট-বিএনসিসি রেডক্রিসেন্ট সদস্যদের সহযোগিতা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। ২০১৪ সালের মতো ভয়ঙ্কর সহিংস পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে- কাদের ॥ গাবতলী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের কাদের বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে এ সময় সড়কের অবস্থা অনেক ভাল। এটা আমি বলতে পারি। ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে এবার যানজট নেই জানিয়ে সড়কমন্ত্রী বলেন, যানজট হবে না এটা আমি বলব না, মাঝে মাঝে গাড়ি বিকল হয়ে যায়। ঘাটে ফেরি বিলম্বিত হওয়ার কারণে অনেক সময় ঘাটে গাড়ির যানজট হয়। পশুবাহী গাড়িগুলো একটু ধীর গতির হয়, এ কারণে সড়কে অন্য গাড়িও একটু ধীরগতিতে যায়। তারপরও এবারের ঈদযাত্রা গতবারের চেয়ে স্বস্তির হবে- এমন আশা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, স্পর্শকাতর পয়েন্টে আমরা এবার র‌্যাব মোতায়েন করেছি, যাতে করে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে যানজট নিরসনে মেঘনার পরে রবিবার থেকে গোমতি নদীতেও ফেরি চালু হচ্ছে বলে জানান কাদের। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়কার মতো আবারও ভয়ঙ্কর সহিংস পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন না হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না- এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, দেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচন পরিচালনা করবে। সে জন্য যে যে ডিপার্টমেন্ট দরকার সেগুলো ইসির অধীনে থাকবে। সে সময় বর্তমান সরকারের বা যে সরকার ক্ষমতায় থাকবে তাদের হাতে কোন ক্ষমতা থাকবে না। তিনি বলেন, এখন বিএনপি তো কিছুই মানে না, আইন মানে না, আদালত মানে না, সংবিধান মানে না, বিচার মানে না। আমি এ কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা হেরে যাবে। সে কারণে তারা এখন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার অজুহাত খুঁজতে পারে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা দেশে ২০১৪ সালের মতো একটা ভয়ঙ্কর সহিংস পরিবেশ সৃষ্টির গ্রুপিং করছে। বিদেশে বসে তাদের এই খোয়াব বাংলাদেশের জনগণ পূরণ হতে দেবে না। বিএনপি সহিংসতার আশ্রয় নিলে জনগণ তা প্রতিহত করবে, করা হবে। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোন সংলাপ হতে পারে না, পরের নির্বাচন নিয়ে সংলাপ। মওদুদ আহমদকে বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে- বিএনপির এমন দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই অভিযোগের জবাব দিতে চাই না। তাঁর বাড়ির সামনে কোন ধরনের অবরোধ না। বিএনপির লোকও নাই আওয়ামী লীগের লোকও নাই। মওদুদ আহমদের এটাই হচ্ছে অভ্যাস। তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের নেপথ্যের কুশীলবদের মধ্যে উনি হচ্ছেন প্রধান ব্যক্তি। সেখানে আন্দোলনে তিনি ফেল করে রমজানের ঈদে বাড়ি গিয়ে একটা নাটক করেছেন। এটা অবরুদ্ধ হওয়ার একটা নাটক। কাউকে কেউ অবরুদ্ধ করেনি। এলাকায় তাঁর সেই অবস্থা নেই, অযথা তাঁর গুরুত্ব আমি কেন বাড়াব। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, মওদুদ আহমদের সেই গুরুত্ব নেই, এলাকায় প্রতিনিধিদের দিয়ে খবর নিন। উনি গেছেন একটা ইস্যু তৈরি করার জন্য। কোন দিনও ঈদের আগে বাড়ি যাননি। এবার গেছেন, রোজার ঈদেও গেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য হলো অবরোধের একটা নাটক তৈরি করা, সে-ই নাটক তৈরি করা। তাঁর বাড়ির সামনে কোন পুলিশ নেই। এটা মিথ্যাচারের একটা নাটক। এবারের ঈদে বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে সড়কের অবস্থা অনেক ভাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এ সময় সড়কের অবস্থা অনেক ভাল। এটা আমি বলতে পারি। কমলাপুরে ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয় ॥ ঈদ যাত্রায় কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। ঈদ যাত্রার তৃতীয় দিন সকাল ৬টায় কমলাপুর থেকে দিনের প্রথম আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেস রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি এক ঘণ্টা পর সকাল ৭টায় ছেড়ে যায়। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে যায় সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে। রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় স্টেশনে আসার কথা থাকলেও সেটি বেলা ১১টায়ও কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাতে পারেনি। দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি পৌনে ১১টায় কমলাপুরে আসে। এ রকম আরও বেশ ককেয়কটি ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় লক্ষ্য করা গেছে। কমলাপুরে ট্রেনে উঠতে হুড়োহুড়ি ॥ লালমনিরহাট ঈদ স্পেশাল ট্রেন ছাড়ার কথা সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে। বেলা ১১টা পর্যন্ত ট্রেনটি স্টেশনেই আসেনি। তবে এই ট্রেনটি বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দিয়েছে রেলওয়ে। গত ১০ আগস্ট যারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর অগ্রিম টিকেট পেয়েছিলেন তারাই ট্রেনযোগে ঢাকা ছাড়ছেন। ট্রেনের এমন বিলম্বের বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘বিভিন্ন স্টেশনে আমাদের প্রতিটি ট্রেনের জন্য নির্ধারিত সময় ২-৩ মিনিট। কিন্তু যাত্রীর চাপের কারণে সেখানে ৫-৭ মিনিট করে দেরি করতে হচ্ছে। এভাবে প্রতিটি স্টেশনেই দেরি হয়। যে কারণে ট্রেনগুলো কমলাপুরে আসতে দেরি হচ্ছে। এ জন্য ছাড়তেও দেরি হচ্ছে। আমরা সব সময় চেষ্টা করছি যাতে কোন ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় না হয়। কমলাপুর স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রবিবার মোট ৬৮টি ট্রেন ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে ৩১টি আন্তঃনগর, ৪টি ঈদ স্পেশাল, বাকি ট্রেনগুলো লোকাল ও মেইল সার্ভিস। বৈরী আবহাওয়ায় লঞ্চ চালাতে মানা ॥ অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে লঞ্চে না উঠতে এবং লঞ্চের ছাদে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে যাত্রীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। খারাপ আবহাওয়ায় লঞ্চ না চালাতে এবং ঈদের সময় লঞ্চে বেশি ভাড়া না নিতে লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। রবিবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পরিদর্শনের সময় এ আহ্বান জানান তিনি। শাজাহান খান বলেন, নৌপথে যাত্রীদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের লক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যাত্রীদের যাতায়াত আনন্দময় হবে। যাত্রী, নৌযান মালিক, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টদের সচেতনার ফলে বিগত চার বছরে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। এ সময় বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক, নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। নৌমন্ত্রী বলেন, ঢাকা সদরঘাটে হকারমুক্ত সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। এখানে মলমপার্টি বা অজ্ঞান পার্টির কোন ধরনের উৎপাত নেই। এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে সরকারের আন্তরিকতার কারণে। ঈদের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি থাকে। যাত্রীদের সেবা দেয়ার লক্ষ্যে নৌযানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই।’ ঢাকা সদরঘাট টার্মিনালে লঞ্চে যাতায়াতের সুবিধায় ২০টি পন্টুন রয়েছে। সদরঘাটের এক নম্বর টার্মিনাল ভবনের পূর্বদিকে লালকুঠি ও শ্যামবাজার পর্যন্ত পন্টুন এলাকা বাড়ানো হয়েছে এবং পার্কিং ইয়ার্ড করা হয়েছে। পরে নৌমন্ত্রী টার্মিনাল ভবন ২-এ নবনির্মিত মসজিদ ও ঢাকা নদী বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার কার্যালয় উদ্বোধন করেন। এ দিকে দুপুরে কমলাপুরে রেলস্টেশন পরিদর্শন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মাহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এ সময় তিনি যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
×