ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এবার কোরবানি হবে ৩৩ হাজার কোটি টাকার পশু

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২০ আগস্ট ২০১৮

   এবার কোরবানি হবে ৩৩ হাজার কোটি টাকার পশু

এম শাহজাহান ॥ কোরবানি ঈদকে ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। এই ঈদের প্রধান আকর্ষণ পশু কেনাবেচা শুরু হয়েছে। জমে উঠেছে পশুর বাজার। এ বছর এক কোটি ১৬ লাখ গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। যার পুরোটাই দেশীয়ভাবে যোগান দেয়া হবে। সরকারী তথ্যমতে, এবার ৪০-৪৫ লাখ গরু-মহিষ এবং ৬০-৬৫ লাখ ছাগল-বকরি ও ভেড়া কোরবানি হবে-যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বিপুল সংখ্যক এই পশু কেনাবেচার সঙ্গে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন ঘটায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে এখন সুবাতাস বইছে। এছাড়া কোরবানি ঈদকে ঘিরে বিপুল অঙ্কের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সরকারী-বেসরকারী খাতের চাকরিজীবীরা মূল বেতনের সঙ্গে বোনাস পেয়েছেন। ঈদ উৎসবে নাড়ির টানে ঘরে ফিরছেন মানুষ। এতে পরিবহন খাতে অর্থনৈতিক কমর্কান্ড বেড়ে গেছে। ঈদের ছুটির অবকাশে পর্যটন এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন অনেকে। এছাড়া মসলাপাতি থেকে শুরু করে পোশাক, ইলেক্ট্রনিক্স, ফার্নিচার ও গাড়িসহ সব ধরনের পণ্য সামগ্রীর বিক্রি বেড়েছে। কামার-দা,বটি, ছুড়ি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চাটাই, খড় ও তুষের মতো পণ্যেরও বিক্রি বেড়ে গেছে। কোরবানির চামড়াও বড় সম্পদ। এবার সাভারের শিল্পনগরীর ১৫৪টি ট্যানারি চামড়া প্রক্রিয়াকরণের প্রস্তুতি নিয়েছে। কোরবানির সময় প্রায় ৫০ শতাংশ চামড়া আহরিত হয়ে থাকে। এখাতের বার্ষিক রফতানি আয় ৫ হাজার কোটি টাকা। লক্ষাধিক হাজী এবার সৌদি আরবে হজ করতে গেছেন। হজ এজেন্সিগুলোর সবচেয়ে ভাল ব্যবসা হয়েছে এ বছর। এছাড়া হাজীদের বহন করায় এয়ারলাইন্সগুলো ভাল ব্যবসা করার সুযোগ পেয়েছে। কোরবানির মাংস সংরক্ষণে ফ্রিজের দোকানগুলোতে বিক্রির ধুম পড়েছে। সব মিলিয়ে কোরবানি ঈদ ঘিরে জাতীয় অর্থনীতিতে এখন এক বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে। এদিকে, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে, এবারের ঈদে ১ কোটি ১৬ লাখ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ। আর ৭১ লাখ ছাগল ও ভেড়া। যার পুরোটাই যোগান দেয়া হচ্ছে দেশীয় বাজার থেকে। গত বছর কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল এক কোটি ৪ লাখ পশু। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী এবারের ঈদে গড়ে প্রতিটি গরু ৭০ হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর ছাগলের গড় মূল্য প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা। ওই হিসেবে এবার ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার গরু এবং প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ছাগল ও ভেড়া কোরবানি হবে। এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, উৎসব কেন্দ্রিক অর্থনীতি এখন অনেক বড়। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এবার দেশীয় গরু ও ছাগলে কোরবানি হচ্ছে। এর ফলে পুরো টাকাই দেশে থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ছোট বড় মিলে দেশে প্রায় ৮৫ হাজার খামার রয়েছে। এছাড়া গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কম বেশি গরু ও ছাগল পরিপালন করা হচ্ছে। এতে প্রাণিজ সম্পদ খাত দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। তিনি বলেন, এক সময় কৃষিই ছিল দেশের প্রধান অর্থনীতি। কৃষি থেকে এখন ব্যবসায়ীরা শিল্পের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। কিন্তু দেশের উন্নয়ন ধরে রাখা এবং দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে হবে। বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, মাছ, শাকসবজি এবং মাংস উৎপাদনেও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে যাচ্ছি। এর ফলে দেশের অর্থনীতি আরও বেগবান হচ্ছে। এদিকে, কোরবানির ঈদ এলেই কসাইদের কদর বাড়ে। যারা মাংস কাটাকাটি করে, তাদের হাতেও অর্থের সমাগম ঘটে। ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা কিছু অর্থ পেয়ে থাকেন। তা ছাড়া কোরবানির ঈদকে ঘিরে কামার-কুমার চাঙ্গা হয়। কোরবানি পশুর চামড়ার টাকা এতিম, মিসকিনদের দান করা হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে কোরবানির ঈদকে ঘিরে বিরাট অঙ্কের অর্থনীতির বিকাশ ঘটছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএসের) গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন বলেন, কোরবানি ঈদে চাঙ্গা দেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে পশু উৎপাদন বাড়ায় দেশের খামারিরা লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া গবাদি পশুর দামও ভাল। গবাদি পশুর উৎপাদন বাড়াতে সরকারী প্রণোদনা বাড়ানো প্রয়োজন। খামারিদের প্রণোদনা দিলে এই খাত আরও উৎসাহিত হবে। বাড়বে পশু উৎপাদন। মূলত গ্রামাঞ্চলেই গড়ে উঠেছে গরু-ছাগলের খামার। কোরবানির পশু বিক্রির টাকার সিংহভাগ তাই গ্রামেই যাবে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের মূল গন্তব্যও গ্রাম। নারীর টানে সবাই যাবে গ্রামে। স্থানীয় বাজারে কেনাকাটা করবে তারা। ফলে ঈদকে ঘিরে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়বে গ্রামে, প্রাণ পাবে গ্রামীণ অর্থনীতি। এছাড়া গরু বেচাকেনার সুবাদে ঈদকে ঘিরে পসরা সাজিয়ে বসেছেন অন্য ব্যবসায়ীরাও। পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ কাঁচাবাজারেও ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। কোরবানির পশুর মাংস যাতে বেশি দিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়, সে জন্য বেড়েছে ফ্রিজ কেনাকাটাও। ঈদকে ঘিরে ক্রেতা টানতে ফ্রিজ বিক্রিতে ছাড় দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। আর ঈদের নতুন পোশাক কেনাকাটা তো রয়েছেই।
×