ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জামিন পেলেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২০ আগস্ট ২০১৮

 জামিন পেলেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে পুলিশের ওপর হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগে দায়ের করা পৃথক মামলায় গ্রেফতার ৪০ জনকে জামিন দিয়েছেন সিএমএম আদালত। জামিন পাওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই বিভিন্ন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রবিবার ঢাকা সিএমএম আদালত আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন। এদিকে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় জাবালে নূর পরিবহনের চালক মোঃ জোবায়েরের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘাত, ভাংচুর, উসকানি ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে এ পর্যন্ত ৫১টি মামলায় ৯৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৫২ শিক্ষার্থী। রবিবার জামিন হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড্ডা থানার ১২ জন, ভাটারা থানার ৬ জন, কোতোয়ালি থানার ৩ জন, রমনা থানার ৩ জন, উত্তরা পশ্চিম থানার ৩ জন, নিউমার্কেট থানার ৩ জন, পল্টন থানার ১ জন এবং ধানমন্ডি থানার ৯ জন। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো এবং মহানগর হাকিম একেএম মঈনউদ্দিন সিদ্দিকীসহ কয়েকজন হাকিম আসামিদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। জামিন পাওয়া আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ইফতেখার আহম্মেদ, নূর মোহাম্মদ, জাহিদুল হক, হাসান, মুশফিকুর রহমান, রাশেদুল ইসলাম, রেজা রিফাত আখলাক, এএইচএম খালিদ রেজা ওরফে তš§য়, তরিকুল ইসলাম, রেদোয়ান আহম্মেদ, সাখাওয়াত হোসেন নিঝুম, আজিজুল করিম অন্তর, মাসহাদ মর্তুজা বিন আহাদ, মেহেদী হাসান, শিহাব শাহরিয়ার, মেহেদী হাসান, সোহাদ খান, মাসরিকুল ইসলাম, তমাল সামাদ, মাহমুদুর রহমান, ওমর সিয়াম, মাহাবুবুর রহমান, ইকবাল হোসেন, নাইমুর রহমান, মিনহাজুল ইসলাম, মাহমুদ খান রবিন, তোফায়েল, আশিক, মেহেদী, জাহিদুল, দুলাল, সাইফুল ইসলাম ওয়াদুদ, নুর আলম মিঠু, আজিজুর রহমান, আমিন হোসেন, আমানুল, খায়রুল ও দাইয়ান নসির। আসামিদের পক্ষে জামিন শুনানি করেন, আইনজীবী এ্যাডভোকেট কবীর হোসাইন, আকতার হোসেন সোহেল, মাইদুল ইসলাম পলক প্রমুখ আইনজীবী। আসামিদের মধ্যে অধিকাংশই বেসরকারী ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থসাউথ, সাউথইস্ট, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ওই সকল শিক্ষার্থী গত ৬ আগস্ট থেকে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। গ্রেফতারের পর অধিকাংশ আসামির বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। শুনানিতে শিক্ষার্থীদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এসব ছাত্রের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ নেই। মামলার এজাহারেও তাদের নাম নেই। সন্দেহজনকভাবে তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার সবাই ছাত্র। গত ২৯ জুলাই রাজধানীতে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকা। ওই আন্দোলনের এক পর্যায়ে এতে জড়িয়ে পড়ে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় গড়ে ওঠা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনে সহিংস ঘটনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন থানায় মোট ৫১টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় মোট ৯৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে ৫২ শিক্ষার্থী। আদালত সূত্র বলছে, গ্রেফতার বাকি শিক্ষার্থীর কারও কারও জামিন শুনানি আজ সোমবার হতে পারে। এদিকে জামিন পাওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা আদালতের আদেশের পরই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাড্ডার মামলায় গ্রেফতার মেহেদী হাসানের জামিনের সংবাদ শুনে তার বাবা এম এ মাসুদ খান আদালতের বারান্দায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, আজ আমার আনন্দের দিন। ছেলে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে কত যে যন্ত্রণায় ছিলাম, সে কথা কাউকে বোঝাতে পারব না। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ছাত্র রেদোয়ান আহমেদের বাবা অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ ছেলের জামিন হওয়ায় বেজায় খুশি। তিনিও বলেন, ছেলের জামিন হওয়ায় খুব ভাল লাগছে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নূর মোহাম্মাদের বোন মাবিয়া বললেন, ভাইয়ার জামিন হওয়ায় আমার অনেক ভাল লাগছে। আমরা একসঙ্গে ঈদ করতে পারব। জাহিদুল হক ও নূর মোহাম্মাদের আইনজীবী আখতার হোসেন বলেন, ছাত্রদের জামিন করাতে পেরে তিনি নিজেও খুব আনন্দিত। জাবালে নূর বাসের চালকের জামিন নামঞ্জুর ॥ রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় জাবালে নূর বাসের চালক মোঃ জোবায়েরের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। রবিবার ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল হক শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেন। এর আগে গত ১৩ আগস্ট এ আসামি সাত দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে আসামি চালক সোহাগ আলী, হেলপার এনায়েত হোসেন ও রিপনকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলাটিতে জাবালে নূর বাসের মালিক মোঃ শাহদাত হোসেন ও চালক মাসুম বিল্লাহ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। তারাও কারাগারে রয়েছেন। মামলায় বলা হয়, গত ২৯ জুলাই জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের অজ্ঞাত চালক, আরও অজ্ঞাতনামা জাবালে নূর পরিবহনের কয়েকটি বাস বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে হোটেল রেডিসনের বিপরীত পাশে জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের পাশে বাসে ওঠার অপেক্ষায় থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ১৪ থেকে ১৫ শিক্ষার্থীর ওপর গাড়িটি উঠিয়ে গুরুতর আহত করে চালক পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে গুরুতর আহতদের মধ্যে উক্ত কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল করিম রাজীব মারা যায়। তদন্তে জানা যায়, উক্ত বাসের অজ্ঞাতনামা চালক জাবালে নূর পরিবহনের বাসসহ আরও কয়েকটি অজ্ঞাতনামা বাসের চালকরা হেলপারদের প্রত্যেকের উপস্থিতি ও উস্কানিতে প্রতিযোগিতামূলকভাবে বেপরোয়া ও দ্রুতগতিতে বাস চালিয়ে শিক্ষার্থীর ওপর উঠিয়ে দেয়। প্রতিযোগিতায় লিপ্ত বাসগুলোর মধ্যে চার জন চালক ও হেলপারদের র‌্যাবের সহায়তায় গ্রেফতার করা হয়। নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ থেকে জানান, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদের মধ্যে ৯ ছাত্র কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। রবিবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে তারা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। মুক্তি পাওয়া ছাত্ররা হলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স তৃতীয় বর্ষের রেজা রিফাত আখলাক, আইইউবি এর ইলেক্ট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স ৫ম সেমিস্টারের ফরিদ হোসেন, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের মেহেদী হাসান, ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী অনুষদের তৃতীয় বর্ষের মুশফিকুর রহমান, সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের সীমান্ত সরকার, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ৫ম সেমিস্টারের ইকতেদার হোসেন, আহসান উল্লাহ বিশ্বাবিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিজ ও প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ইফতেখার আহমেদ, বনানী প্রেসিডেন্সিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেট্রিক ও ইলেক্ট্রনিক্স বিভাগের ছাত্র মোঃ হাসান, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র সামাদ মোর্তুজা বিন আসাদ। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার মোহাম্মদ জাহেদুল আলম জানান, বেশকিছু ছাত্রের জমিন হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু ৯ ছাত্রের জামিনের কাগজ আমাদের হাতে পৌঁছেছে। যাচাই বাছাই শেষে রবিবার সন্ধ্যার দিকে ৯ জনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।
×