ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালে বাংলাদেশকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ভারত

মারিয়াদের হারিয়ে প্রতিশোধ নিল ভারত

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৯ আগস্ট ২০১৮

মারিয়াদের হারিয়ে প্রতিশোধ নিল ভারত

রুমেল খান ॥ সবচেয়ে বেশি গোল (২২) করে এবং সবচেয়ে কম গোল (১) খেয়েও সাফল্যের হাসি হাসতে পারলো না বাংলার বাঘিনীরা। শিরোপা জিততে যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল, সেই ভাগ্যটাই যে সঙ্গে ছিল না। ফলে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৫ জাতীয় নারী ফুটবল দল সাফল্যের মুকুটে যোগ করতে পারলো না আরেকটি পালক। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন পারলেন না তার কোচিং ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সাফল্যটি কুড়িয়ে নিতে। অধিনায়ক মারিয়া মান্দা পারলো না তৃতীয়বারের মতো সুদৃশ্য ট্রফিতে চুমু খেতে। সাফ অনুর্ধ-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা অক্ষুন্ন রাখতে পারলো না বাংলাদেশ। শনিবার হাইভোল্টেজ ফাইনালে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতের কাছে ১-০ গোলে হেরে তারা হলো রানার্সআপ। ভুটানের থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে গড়া হলো না বিজয়গাঁথা। বরং আগের আসরের হারের বদলা নিয়ে নিল ভারত। এর আগে একই ভেন্যুতে নেপালকে টাইব্রেকারে ৪-৩ (২-২) গোলে হারিয়ে তৃতীয় হয় স্বাগতিক ভুটান। আগের তিন ম্যাচে যেভাবে দাপটের সঙ্গে খেলেছিল বাংলাদেশ, ফাইনালের প্রথমার্ধে সেই রূপে খুঁজেই পাওয়া যায়নি তাদের। মনে হচ্ছিল স্নায়ুচাপে ভুগছিল পুরো দল। মাঝ মাঠ ছিল বিস্ময়করভাবে নিষ্প্রভ। মিডফিল্ডাররা বারবার বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এর প্রভাব পড়ে আক্রমণভাগে। ফরোয়ার্ডরা বলতে গেলে বলই পাচ্ছিল না। অনেকটা নিচে নেমে তাদের বল পেতে হচ্ছিল। ভারত এই অর্ধে বাংলাদেশের প্রতিটি খেলোয়াড়কে মার্কিং করে, প্রতিটি পজিশনই ধরে খেলে, মাঠ বড় করে খেলে এবং টানা আক্রমণ করে। তারপরও যে বাংলাদেশ দল আক্রমণে উঠছিল না তা নয়। কিন্তু তাদের প্রতিটি আক্রমণই ‘অঙ্কুরেই বিনাশ’ করে দিচ্ছিল ভারতীয় ডিফেন্ডাররা। ৪ মিনিটেই গোল পেতে পারতো ভারত। ফ্রি কিক পায় তারা। ফরোয়ার্ড আভিকা সিংয়ের বল পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে হেড করে আরেক ফরোয়ার্ড-অধিনায়ক সিল্কি দেবী। তার হেডের বল গোললাইনের ভেতরে বল প্রায় ঢুকেই যাচ্ছিল। কিন্তু গোলরক্ষক মাহমুদা আক্তার কোনমতে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বল পাঞ্চ করে কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করে। ৪৩ মিনিটে আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। ডানপ্রান্ত ধরে বল নিয়ে শামসুন্নাহার সিনিয়র পাস দেয় তহুরার উদ্দেশে। সেই বল ভারতের ফরোয়ার্ড লিন্ডা কম পেলেও বলটি সে ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেনি। বল চলে যায় বক্সের ভেতরে। সাজেদা খাতুন দূর থেকে দৌড়ে আসে। বক্সের ভেতরে একেবারেই অরক্ষিত ছিল সে। সামনে শুধু গোলরক্ষক। পোস্টে রাখতে পারলেই যেখানে গোল হয়ে যায়, সেখানে বিস্ময়করভাবে চলতি বলে সাজেদা যে শটটি নেয় তা পোস্টের অনেক ওপর দিয়ে চলে যায়। নিশ্চিত গোলবঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। ৬৬ মিনিটে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। কর্নার পায় ভারত। লিন্ডা কম বক্সের ভেতরে উঁচু করে বল ফেলে। সেই চলতি বলে ডান পায়ের ভলি করে মাহমুদা আক্তারকে পরাস্ত বল জালে জড়িয়ে দেয় ফরোয়ার্ড সুনীতা মান্দা (১-০)। মাহমুদা গোল হজম করলো ৬৯৬ মিনিট পর। আগের আসরের চার ম্যাচের ৩৬০ মিনিট এবং ফাইনালের আগ পর্যন্ত ৩৩৬ মিনিট গোলবার অক্ষত রেখেছিল সে। ৭৬ মিনিটে গোলবঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। মাঝ মাঠের আরেকটু সামনে বল পায় মনিকা চাকমা। বাঁ পায়ে দূরপাল্লার শট নেয়। ৪০ গজ দূর থেকে তার নেয়া জোরালো শটটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতের ক্রসবারে লেগে মাঠের বাইরে চলে যায়। হতাশায় পোড়ে বাংলাদেশ। ৮২ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে তহুরার বাঁ পায়ের শট ভারতের সাইডপোস্টে লাগলে আবারও গোলবঞ্চিত হয় লাল-সবুজরা। ইনজুরি সময়ে ৯৪ মিনিটে গোলের সবচেয়ে সহজ সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে শামসুন্নাহার সিনিয়র বল পেয়ে উঁচু করে বল ফেলে ডানপ্রান্তে বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়া বদলি ফরোয়ার্ড রোজিনা আক্তারের উদ্দেশে। রোজিনা ডান পায়ে উঁচু ক্রস ফেলে বক্সের মাঝে আরেক সতীর্থ তহুরাকে। পোস্ট ফাঁকা, বলে মাথা ছোঁয়ালেই গোল হয়ে যায়, কিন্তু বিস্ময়করভাবে বলে মাথা লাগাতেই পারলো না তহরা! এর মিনিটখানেক পরেই রেফারি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে শিরোপা জেতার উল্লাসে ফেটে পড়ে ভারত এবং শিরোপা খোয়ানোর বেদনায় ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশ। রানার্সআপ হলেও এই আসরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের খেলা মুগ্ধ করেছে সবাইকে যা মনে থাকবে অনেকদিন।
×