ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রেতা কম

চট্টগ্রামে হাটে প্রচুর গরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৯ আগস্ট ২০১৮

  চট্টগ্রামে  হাটে প্রচুর গরু

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আর মাত্র ৩দিন বাকি কোরবানি ঈদের। কিন্তু এখনও পশুর হাট জমতে শুরু করেনি চট্টগ্রামে। তবে কুষ্টিয়াসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে এমনকি এবার কুমিল্লা থেকেও গরু ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে আসতে শুরু করেছে। তবে উত্তরবঙ্গ থেকে ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ দুটি পশুর হাটকে কেন্দ্র করে যোগান দিয়ে থাকে। এই পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ট্রাক গরু এসেছে এই বাজারে। চসিকের অনুমোদনহীন হাটও বিভিন্ন এলাকায় শেষ তিন দিনে বসার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, পশুর হাটের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের টহল টিমও কাজ করছে। জাল টাকার নোট শনাক্ত করতে বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ বা শাখায় স্ক্যানিং মেশিন সংরক্ষণ করা হয়েছে হয়রানি ও প্রতারণা বন্ধে। কারণ, পশুর হাটকে কেন্দ্র করে জাল টাকার কারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে পুলিশের ধারণা। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে ও গোয়েন্দা বিভাগ জাল টাকার কারবারিদের পাকড়াও করতে সাদা পোশাকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সাগরিকা ও বিবিরহাট হচ্ছে স্থায়ী গরুর বাজার। প্রতিবছর ইজারার মাধ্যমে এ দুটি বাজার নির্ধারিত হয় বৈশাখ-চৈত্র হিসেব অনুযায়ী। বাকি ৮টি বাজার মৌসুম ভিত্তিক। তবে এরমধ্যে কর্ণফুলী থানা এলাকায় শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন মইজ্জারটেক বাজারটি ইজারাবিহীন হলেও সারা বছরই এ বাজারে পশু কেনাবেচা হয়। সাগরিকা ও বিবিরহাটসহ প্রত্যেকটি বাজারেই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে পানি সরবরাহ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বাজারের বাইরে সড়কে যেন কোন ধরনের বাজার বসতে না পারে সে বিষয়ে বাজার পরিচালনা কমিটিকে নিষেধ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা বিধানে পর্যাপ্ত পুলিশ নিয়োগের অনুরোধ জানানো হয়েছে সিএমপি কমিশনার বরাবর। সে অনুযায়ী কমিশনার দফতর থেকে বাজার কমিটিকে আশ্বস্ত করা হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বিষয়ে। শনিবার সাগরিকা গরু বাজার প্রত্যক্ষ করে দেখা গেছে, দেশীয় গরুতে ভরপুর এ বাজার। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে গরু আসছে এ বাজারে। এখনও পর্যন্ত দেশীয় পশুতেই এ বাজারের পরিপূর্ণতা রয়েছে। তবে সীমান্তবর্তী বাজারের উপর নির্ভরশীল পশুর দর উঠানামা। একইভাবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছাগল ও ভেড়া এসব বাজারে আনা শুরু হয়েছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী এ ধরনের পশুর চাহিদা কম হওয়ায় মূল্য একটু বেশি গুনতে হয় ক্রেতাদের। এবার গরু আসছে- কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, খুলনা, পাবনা, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, কুমিল্লা ও লাকসাম থেকে। এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী আসগর জানিয়েছেন, গতবারের মতোই এখনও বাজার দর স্থবির রয়েছে। বিদেশী গরু আসা শুরু হলে দাম কমে যাবে। তবে চাহিদার তুলনায় যোগান এবার আরও বেশি থাকবে। এবার দেশী গরুই সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রাম ও ঢাকার বাজারে অবস্থান নেবে। এছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেশীয় গরু ও মিশালি গরুর আমদানি এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। এ বিষয়ে সাগরিকা গরু বাজার কমিটির সেক্রেটারি কাজী আমিনুল ইসলাম ইয়াজদানি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ার গরু এখনও পর্যন্ত বাজারে সবচেয়ে বেশি। তবে আজকালের মধ্যে বাজার ভালভাবে চালু হবে। ঈদ বাজার বলে যে প্রচার রয়েছে তা আজ রবিবার থেকে শুরু হবে। এক বা দুদিন হাতে রেখেই কোরবানিদাতারা পশু কিনেন। . ঠাকুরগাঁও নিজস্ব সংবাদদাতা ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, জেলার হাটগুলো কোরবানির পশুতে ভরে গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে জমে উঠেছে কেনাবেচা। ক্রেতা-বিক্রেতা, হাট ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, এখন পর্যন্ত গরুর দাম তুলনামূলক কম ও সহনীয়। জেলার বিভিন্ন গরুর হাট ঘুরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে। শুক্রবার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ীহাট, বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার শিবগঞ্জ, মাদারগঞ্জ হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন আকারের গরু ও ছাগলের বাজার জমে উঠেছে। আশপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিক্রেতারা নসিমন, ভটভটি ও ট্রাক ভরে নিয়ে আসছেন পশুগুলো। মধ্যম আকারের ষাঁড়ের দাম হাঁকা হচ্ছে ৪৫ থেকে ৬৫ হাজার টাকা, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা কম। শুক্রবার লাহিড়ী হাটে সদর উপজেলার ফারাবাড়ি থেকে একটি ষাঁড় নিয়ে এসেছেন আহাম্মেদ আলী। তিনি ষাঁড়টির দাম চেয়েছেন সোয়া লাখ টাকা। এ হাটে ওঠা এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দামের গরু এটি। মাদারগঞ্জ, শিবগঞ্জ হাটে কথা হয় গরুর ব্যাপারী খোরশেদ আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, বড় আকৃতির একটিসহ মোট চারটি গরু এনেছেন। বড় গরুটির দাম লাখ টাকা প্রত্যাশা করছেন। কিন্তু সেটা দেখতে ভিড় করলেও কেউ কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আর মাঝারি গরুর দাম যেখানে ৭০ হাজার টাকা, সেখানে ক্রেতারা দাম বলছেন ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত। তার মতে, দাম অনেক কম বলছেন ক্রেতারা। এ সময় পাশেই আরেকজন ব্যাপারী বলেন, গতবার যে গরুর দাম উঠেছিল ৬৫ হাজার টাকা, এবার সেই গরুর দাম ৬০ হাজার টাকার ওপরে উঠছে না। ব্যাপারীদের কেউ কেউ লোকসানের আশঙ্কার কথা বলেছেন। শুক্রবার লাহিড়ীহাটে কথা হয় আব্দুল আলী নামে এক ব্যাপারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, গতহাটে একটি গরুর দাম ৫২ হাজার টাকা হয়েছিল বলে ফিরিয়ে নিয়ে যাই। কিন্তু এ হাটে সেই গরুই বিক্রি করলাম ৫০ হাজার পাঁচ শ’ টাকা। অথচ এই কয়দিন ওই গরুর পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। বিক্রেতাদের এই অবস্থা হলেও ক্রেতারা এখন পর্যন্ত গরু কিনে খুশি। একজন ক্রেতা ৫৫ হাজার পাঁচ শ’ টাকায় একটি গরু কিনলেন। আরেকজন কিনলেন ৩৭ হাজার টাকায়। হাসিল দেয়ার সময় দু’জনই খুশি বলে জানালেন। মধ্যম আকারের গরুর চাহিদা বেশি দেখা গেল। গরু হাটের মতো পাশের ছাগলের হাটেও ক্রেতাদের ভিড় জমতে শুরু করেছে। একটি মধ্যম আকারের ছাগল ১০ থেকে ১৮ হাজার টাকা দাম উঠলেও সবচেয়ে দামী ছাগলের দাম উঠেছে ৩৪ হাজার টাকা। ছাগলটি সদর উপজেলার আখানগর থেকে নিয়ে এসেছেন হোসেন আলী। মাদারগঞ্জ, শিবগঞ্জ হাটের হাসিল সংগ্রহকারীদের একজন আব্দুল বাতেন বলেন, এবার দাম একটু কম মনে হচ্ছে। হাটের ব্যাপারী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, এখন পর্যন্ত কিছুটা দাম কম চলছে। তবে দিন তিনেক পর তাঁরা ভাল দাম পাবেন বলে আশা করেন।
×