ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্মরণকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে কলমানি মার্কেটের সুদহার

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৯ আগস্ট ২০১৮

 স্মরণকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে কলমানি মার্কেটের সুদহার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আর মাত্র কয়েক দিন পর কোরবানির ঈদ। ধর্মীয় এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও কোরবানির পশু কেনাসহ নানা কারণে ব্যাংকে নগদ টাকার চাপ বেড়েছে। বাড়তি চাপ সামলাতে ব্যাংকগুলোকে যেতে হচ্ছে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে (কলমানি মার্কেট)। তবে পরিমাণের দিক থেকে কলমানির চাহিদা বাড়লেও সুদহার এতটাই কমেছে যে, তা স্মরণকালের সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৪ আগস্টের (মঙ্গলবার) তথ্যে দেখা গেছে, কলমানিতে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে লেনদেন হয়েছে। তবে সুদের হার না বাড়লেও লেনদেন বেড়েছে এই বাজারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘ বিনিয়োগ স্থবিরতায় অধিকাংশ ব্যাংকের কাছেই উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। এ কারণে ঈদের আগে নগদ টাকার চাহিদা বাড়লেও কলমানিতে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ৬ থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত কলমানি মার্কেটে প্রতিদিনই লেনদেন বেড়েছে। এ সময়ে কলমানি মার্কেটে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বল্পমেয়াদী ঋণ হিসাবে মোট লেনদেন হয়েছে ৫৭ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক-টু-ব্যাংকের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল সাড়ে ৪ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৫ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ব্যাংক-টু-ব্যাংকের গড় কলমানির গড় সুদহার ছিল ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গড় সুদহার ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত এক দশকে এত কম সুদহারে লেনদেন হয়নি কলমানি মার্কেটে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের অক্টোবরে গড়ে ২ দশমিক ৮০ শতাংশ সুদে লেনদেন হয়। ২০০৩ সালের পর থেকে কখনওই কলমানির সুদহার এত কম দেখা যায়নি। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণের (সিআরআর) হার কমানোর ফলে বাজারে নগদ টাকার সরবরাহ বাড়ায় কলমানি সুদহার বাড়েনি বলে জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬ আগস্ট কলমানিতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৯৫০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তার আগের দিন ছিল সাত হাজার ৯০২ কোটি টাকা। যা ১৪ আগস্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদ-উল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু কেনাসহ বাড়তি কেনাকাটায় নগট টাকা তুলতে ব্যাংকগুলোতে ভিড় করে। এ কারণে ঈদের সময় লেনদেন বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট নেই। এ কারণে লেনদেন বাড়লেও কলমানি মার্কেটে সুদহার স্থিতিশীল রয়েছে।’ নগদ টাকার সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে, তাই ঈদের আগে কোন সঙ্কট সৃষ্টি হবে না বলে তিনি জানান। অথচ ২০১০ সালে কোরবানির ঈদের আগে কলমানি মার্কেটের সুদের হার প্রায় ২০০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। তখন বেসরকারি একটি ব্যাংক ১৯০ শতাংশ হার সুদে অন্য একটি ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের নগদ টাকা ধার নিয়েছিল। এরপর অবশ্য আর কখনও কলমানির সুদের হার খুব একটা বাড়তে দেখা যায়নি। ২০১২ সালে ঈদের আগে ১৫ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে ৯ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল কলমানি মার্কেটের সুদহার। এরপর থেকে কলমানির সুদহার ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে।
×