ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর খুনী রাশেদ চৌধুরীকে শীঘ্রই দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৯ আগস্ট ২০১৮

  বঙ্গবন্ধুর খুনী রাশেদ চৌধুরীকে শীঘ্রই দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব ॥ আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশে অত্যন্ত বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের এই সম্পর্কের ওপর আস্থা রেখে বলতে পারি, যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনী রাশেদ চৌধুরীকে যথা শীঘ্রই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সংবিধান শীর্ষক এক সেমিনার প্রধান অতিথির বক্তৃৃতায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমি আগেও বলেছি আজও বলছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক রয়েছে। আপনারা দেখেছেন ২০০৭ সালে তারা বঙ্গবন্ধুর এক খুনীকে ফিরিয়ে দিয়েছে। এখনও সেখানে একজন চিহ্নিত খুনী রয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সরকার এই খুনীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোন পদক্ষেপ না নেয়ার সুযোগে সে অনেক আইনী লড়াইয়ের মধ্যে ছিল। তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনারত রয়েছে এবং আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা তাকে কিভাবে ফিরিয়ে দিতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত বন্ধুসুলভ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্কের ওপর আস্থা রেখেই সে দেশে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলেও তিনি মনে করেন। বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনী নূর চৌধুরী সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনী কানাডায় আছেন। কানাডার সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। কিন্তু সেখানে নতুন কিছু সমস্যা আছে। সমস্যাটা হচ্ছে, তারা ইতোমধ্যে একটি আইন করেছে। সে আইনটা হচ্ছে, তারা বিশ্বের মৃত্যুদ- সাজার বিরুদ্ধে। নিজেদের দেশে তারা মৃত্যুদ- সাজা বাতিল করেছে এবং বিশ্বের যে কোন দেশে যদি মৃত্যুদ- সাজা থাকে এবং অপরাধী সে দ- পেলে তাকে সে দেশে ফিরিয়ে দেয় না। সেক্ষেত্রে আমাদের আইনী লড়াই শুরু হয়েছে। আলোচনাও চলছে। এই প্রতিবন্ধকতা পার হতে পারলেই আমরা নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনতে পারব। আর বাকি যেসব খুনী আছে তাদের বিষয়ে এখানে কোন বক্তব্য দেব না। কারণ এটা অত্যন্ত গোপনীয়। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, সেক্ষেত্রে খুনীদের অবস্থান বলে দিলে তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলব না। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা প্রসঙ্গে আনিসুল হক বলেন, মামলা প্রায় শেষ পর্যায়ে। সাধারণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই মামলাটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমরা জানি, যারা আসামি তারা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক কাজ করেছেন। তারা এ মামলায় কালক্ষেপণের চেষ্টা করছেন। তবু আমরা তাদের কালক্ষেপণ সত্ত্বেও এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই মামলার আসামিদের বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দিচ্ছি। একটি সংবিধানে যা যা থাকা প্রয়োজন তা ১৯৭২ সালের সংবিধানে রেখে বঙ্গবন্ধু বাংলার জনগণকে সে সংবিধান উপহার দিয়ে গিয়েছেন। তাঁর অবদানের কারণেই আমরা এখানে এসে পৌঁছেছি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পরে আমাদের সংবিধান নিয়ে একটা ফুটবল খেলা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তারা মনে করেছিল এই সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে বাংলাদেশের পরিচয়কেই ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়া সম্ভব হবে। কিন্তু যেটা ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে গড়া, যেটা একটি মহামানবের হাতে গড়া, যেটা একজন মহামানবের দ্বারা বাস্তবায়ন হয়েছে সেটা এই কয়েকজন সামরিক উর্দি পরা লোকের চিন্তা-ভাবনায় শেষ হয় না। আল-রাজাকার, আল- বদরদের কারণে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায় না বলে তিনি মন্তব্য করেন। আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ২১ বছর সে অপরাধের কোন বিচার হয়নি। কিন্তু এই সংবিধান এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সুযোগ্য কন্যা ফিরে আসার পরে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন এবং ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ যেহেতু নয় মাসে রক্ত দিয়ে এই বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। বিভিন্ন অপশক্তি চেষ্টা করবে কিন্তু কোন অপশক্তি এই বাংলাদেশের উন্নতি রোধ করতে পারবে না। তাই আজকের এই দিনে আমরা শপথ নেই বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন শেখ হাসিনার সঙ্গে থেকে আমরা সেই সোনার বাংলা গড়ে তুলব। উপস্থিত অতিথিদের আহ্বান জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অনেক সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই আসুন, বাংলাদেশ যখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার দিকে এগিয়ে যাই এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্নকে সত্যি করি। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ আব্দুল মান্নান ইলিয়াস বক্তৃতা করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ মশিউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনাকারীদের বিচার হয়নি ॥ আরেক অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আদালতে বিচার কার্যক্রম শেষ হলেও এখনও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের বিচার হয়নি। শনিবার ধানমন্ডি ৩২ এর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটি আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনায় তারা এমন মন্তব্য করেন। আলোচনায় বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০ জন কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন। সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, একটি দেশের জাতির পিতাকে হত্যার পর আইন করে সেই হত্যার বিচারকার্যক্রম বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর খন্দকার মোস্তাক আহমেদ ইনডিমিনিটি বিলে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু তারপর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নিলেও এই আইন বাতিল করেননি। শুধু তাই নয়, জিয়াউর রহমানের পর এরশাদ এবং ১৯৯০ সালে বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরও এই কালো আইন বাতিল করেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই আইন বাতিল হয় এবং মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। মামলা নিয়ে বিচারকদের বিব্রতবোধের বিড়ম্বনার পাশাপাশি তথ্য ও দলিলাদি সংগ্রহ করতে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে সরাসরি হত্যাকারীদের আমরা বিচারের আওতায় আনতে পেরেছি। কিন্তু এখনও ধরাছোঁয়ার বাহিরে মূল পরিকল্পনাকারীরা। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা এখন বেশ স্পষ্ট। তাই আমি মনে করি আদালতে বিচার কার্যক্রম শেষ হলেও এখনও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের বিচার হয়নি। অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, আমার বয়স তখন মাত্র ৩ বছর ৯ মাস। মা-বাবার সঙ্গে কোন সুখ স্মৃতি আমার মনে নেই। শুধু মনে আছে মেঝেতে রক্তাক্ত পরে থাকা আমার বাবার লাশ এবং তারপর মেঝে জুরে ছড়িয়ে থাকা রক্তের কথা। তিনি বলেন, বাবা-মা ছাড়া আমাদের কেউ দীর্ঘ সময় আশ্রয় দিতে চায়নি। এই আত্মীয় বাসা থেকে ওই আত্মীয়ের বাসায় আমার ৫ বছরের বড় ভাই আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের বেশি কেউ আমাদের আশ্রয় দেয়নি। কিন্তু এটা বড় কষ্ট ছিল না। সবচেয়ে বড় কষ্ট ছিল- হত্যাকারীদের বিচার করতে না পারা। আর তার থেকেও বড় কষ্ট ছিল বঙ্গবন্ধু ও আমার বাবাকে নিয়ে চালানো প্রোপাগান্ডা।
×