ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লাখ লাখ হজযাত্রী মক্কা থেকে মিনায় ॥ হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৯ আগস্ট ২০১৮

   লাখ লাখ হজযাত্রী মক্কা থেকে মিনায় ॥ হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

আজাদ সুলায়মান ॥ প্রায় ২০ লাখ হজযাত্রীর মিনা গমনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। তারা সবাই আগামীকাল (সোমবার) আরাফাতে পৌঁছার আগ পর্যন্ত মিনার মাঠে অবস্থান করবেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ এসব হজযাত্রী পবিত্র নগরী মক্কায় অবস্থান করেন শনিবার বিকেল পর্যন্ত। সন্ধ্যায় ইহরাম বেঁধে লাব্বাইক ধ্বনিতে পথ-ঘাট মুখরিত করে দলে দলে রওনা হন মিনার দিকে। হজের করণীয় সম্পর্কে পবিত্র কাবা শরিফে গুরত্বপূর্ণ নসিহত পেশ করা হয়েছে শনিবার। এ খুতবায় হজের করণীয় যাবতীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তারপরই লাখ লাখ হজযাত্রী দল বেঁধে রওনা হন মিনার দিকে। বিকেল থেকেই নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় ২০ লাখ হজযাত্রীর সবাই পৌঁছে যান মিনার মাঠে। হেরেম শরীফ থেকে সাড়ে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিনার মাঠে অনেকেই রওনা হয়েছেন পায়ে হেঁটে। মিনার মাঠে তারা নিজ নিজ খিমায় অবস্থান করে ফরজ ও নফল ইবাদত করবেন। যারা মক্কা ব্যতীত মদিনা কিংবা অন্যান্য স্থান থেকে মিনার উদ্দেশে আসবেন-তারা তাদের মিকাত থেকে ইহরাম বেঁধেই রওনা হয়েছেন। মিনার মাঠ থেকে আগামীকাল সোমবার সবাই রওনা হবেন আরাফাত ময়দানে। তারপর মুজদালিফা হয়ে আবার আগামী ১৩ জিলহজ এ মিনার থেকেই হজের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে। হাদীস শরীফে রয়েছে-মিনার প্রান্তরে ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত অবস্থান করা সুন্নাত। সেখানে তারা এ সময়ে মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন। এখানকার মসজিদে খামায় হুজুর পাক হজরত মোহাম্মদ (সা) সাহাবাদের নিয়ে হজের আগে পরে মোট ৫ দিন অবস্থান করে ফরজ ও নফল এবাদত করতেন। রাতে মিনার মাঠ থেকে হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসেন তসলিম জানান,‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাবব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত এখন মিনার মাঠ। ২০ লাখ হজযাত্রীর পদচারণায় মিনার মাঠে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। শনিবার সন্ধ্যায় তারা পবিত্র মক্কা নগরী ছেড়ে পাড়ি জমান মিনার দিকে। মিনার লক্ষাধিক খিমায় (তাঁবু) তাদের সবাইকে একত্রে কাটাতে হবে পাঁচদিন। আগামীকাল (সোমবার) হজযাত্রীরা নিজ নিজ খিমায় ফজরের নামাজ আদায় শেষে- আরাফাতের উদ্দেশে যাত্রা করবেন । সাধারণত হজযাত্রীরা নিজস্ব মোয়াল্লেমের ব্যবস্থাপনায় পাঠানো বাসে মিনার মাঠ থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে থাকেন। ফজর থেকে তাদের যাত্রা শুরু হয়। চলে দুপুর পর্যন্ত। হজযাত্রীরা খোদার প্রেমে উন্মাদের মতো ছুটেন আরাফাতে। তাদের সঙ্গে থাকে শুধু একটি ব্যাগ-যাতে রাখা হয় অতিব জরুরী কিছু জিনিসপত্র। যেমন থালা-বাসন, পানির মগ, ওষুধ ও অজু-গোসলের জন্য গামছা জাতীয় কাপড়-চোপড়। মূলত আরাফাতের ময়দানে ৯ই জিলহজ (সোমবার) সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করাই হজের মূল কাজ। মিনায় দোয়া কবুলের অন্যতম স্থান মসজিদে খামায় অনেক বাংলাদেশী হজযাত্রীকেও শনিবার অবস্থান করতে দেখা গেছে। হজ পালনকারীদের অবস্থানের জন্য ইতোমধ্যে লক্ষাধিক তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। হজের কাজ সম্পাদনে ধর্মপ্রাণ মুসলমান নারী-পুরষ ৬ দিন ৬ রাতের মধ্যে ৫ দিন ৫ রাতই অবস্থান করতে হবে মিনারের তাঁবুগুলোতে। এসব তাঁবুতে অবস্থান করেই তারা হজের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন। প্রত্যেক তাঁবুর আলাদা আলাদা নম্বর দেয়া রয়েছে। হজপালনকারীদের জন্য তাদের নিজ নিজ তাঁবুর নম্বর মনে রাখা জরুরী। কারণ লক্ষাধিক তাঁবুর মধ্যে এ নম্বর দেখেই নিজ নিজ তাঁবু চিহ্নিত করতে হবে। ৯ জিলহজ ফজরের নামাজের পর মিনার থেকেই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা জাবালে রহমতের পাদদেশ ও মসজিদে নামিরা সংলগ্ন ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে উপস্থিত হবে মুসলিম উম্মাহ। দিনব্যাপী তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া ও মাগফেরাত কামনায় কান্নায় মুখরিত করে তুলে আরাফাত নগরী। মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও শান্তির লক্ষ্যে সেখানে বাদ জোহর ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করা হবে। হজে অংশগ্রহণকারী মুসলিম উম্মাহ সে খুতবা শুনবে। একসঙ্গে দোয়া ও মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবে তারা। সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবে মুসলিম উম্মাহ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পবিত্র হজকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি অতিরিক্ত লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে। সঙ্গে রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী, রুরি চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবিলায় মিনার মাঠে স্থাপন করা হয়েছে বিশেষ ফায়ার ইউনিট। এদিকে হজ পালন করতে গিয়ে শুক্রবার মক্কায় আবুল কাসেম নামে আরও এক বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে মক্কায় বাংলাদেশ হজ কার্যালয়ের কাউন্সিলর মাকসুদুর রহমান সাংবাদিকদেরকে জানান-আবুল কাসেমের (৬৫) বাড়ি কুমিল্লায়। চলতি বছর সৌদি আরবে হজ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত মক্কায় ৩৮ জন, মদিনায় ৬ জন ও জেদ্দায় ২ জনসহ মোট ৪৬ বাংলাদেশী হজযাত্রী ইন্তেকাল করেছেন। এর মধ্যে ৮ জন নারী ও ৩৮ জন পুরুষ। রাতে মিনার মাঠ থেকে সাংবাদিক মশিউর রহমান খান জানান-আগামীকাল (সোমবার) হজযাত্রীরা নিজ নিজ খিমায় ফজরের নামাজ আদায় শেষে-আরাফাতের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। সাধারণত হজযাত্রীরা নিজস্ব মোয়াল্লেমের ব্যবস্থাপনায় পাঠানো বাসে মিনার মাঠ থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরের আরাফাতের ময়দানে পৌঁছে থাকেন। ফজর থেকে তাদের যাত্রা শুরু হয়। চলে দুপুর পর্যন্ত। হজযাত্রীরা খোদার প্রেমে উন্মাদের মতো ছুটেন আরাফাতে। মূলত আরাফাতের ময়দানে ৯ জিলহজ (সোমবার) সূর্যোদয় থেকে সূর্যান্ত পর্যন্ত অবস্থান করাই হজের মূল কাজ। সহীহ্ হাদীসে রয়েছে-যিনি ৯ জিলহজ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অকুফে আরাফায় করলেন-তিনিই হাজী হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। আর হজে মকবুরের (কবুল হজ) ফজিলত হচ্ছে-নিশ্চিত জান্নাত লাভ।
×