ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের পর এক সপ্তাহ সীমান্তমুখী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৯ আগস্ট ২০১৮

    ঈদের পর এক সপ্তাহ সীমান্তমুখী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকবে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ চামড়া পাচার রোধে সীমান্তের দিকে ঈদের পর চামড়াবাহী সব ধরনের যানবাহন চলাচল টানা এক সপ্তাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে চামড়া পাচার ঠেকাতে সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্তে বসানো হচ্ছে বিশেষ চেকপোস্ট। চেকপোস্টগুলোতে চামড়াবাহী প্রতিটি যানবাহনের নম্বর, চালকের মোবাইল নম্বর ও ছবি তুলে রাখাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে রাখা হবে। চামড়াবাহী যানবাহনকে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর দিকে পাঠানো হবে। যেসব যানবাহন যেতে অনাগ্রহ দেখাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২০২১ সাল নাগাদ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা আয় করার টার্গেট পূরণে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ টাস্কফোর্স পুরো বিষয়টি মনিটরিং করছে। চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য মোতাবেক, সারাদেশে ছোট বড় ৩শ’ চামড়া প্রস্তুতকারী কারখানা রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় ২৬৫টি। বাকিগুলো ঢাকার বাইরে। উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর বেশিরভাগ কারখানাই সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে চলে গেছে। প্রতিবছর ঈদ-উল-আজহায় সারাদেশে এক কোটি প্রাণী কোরবানি হয়। অধিকাংশ চামড়াই এক সময় ঢাকায় আসত। এখন সাভারে ট্যানারি শিল্প গড়ে ওঠায় চামড়া সেখাবে যাবে। বেশকিছু চামড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় থাকা চামড়া প্রস্তুতকারী কারখানায় যায়। অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান মোতাবেক, বাংলাদেশ থেকে রফতানিকারক পণ্যের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে তৈরি পোশাক। দ্বিতীয় অবস্থানে হিমায়িত মাছ। আর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে ৫০ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার ও ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে সাড়ে ৬২ কোটি মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আর ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে বৈদেশিক আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় একশ’ কোটি ডলার। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ২০২১ সাল এ লক্ষ্য মাত্রা ৪০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চামড়া পাচাররোধে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নিয়মিত সড়ক মহাসড়কে, রেলস্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালেও চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হবে। বেআইনীভাবে চামড়া বেচাকেনা ও পাচারকারীদের শাস্তি দিতে মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। হাইওয়ে পুলিশ প্রধান উপ মহাপরিদর্শক আতিকুল ইসলাম জানান, চামড়া পাচারের চেষ্টা সারাবছর জুড়েই হয়। এজন্য সারাবছরই চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। এবার চেকপোস্টে দায়িত্বরতদের চামড়াবাহী যানবাহনকে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে পাঠানোর কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর চামড়াবাহী যানবাহনগুলোকে সীমান্তের দিকে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যারা এমন নির্দেশ অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঈদের পর টানা এক সপ্তাহ সারাদেশে চামড়া পাচাররোধে বিশেষ অভিযান ও নিরাপত্তা এবং চেকপোস্ট ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ সাফিনুল ইসলাম ইতোমধ্যেই সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিজিবিকে চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বিশেষ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি ও নজরদারি বাড়ানোর কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, চামড়া পাচার রোধে সারাদেশে বিশেষ অভিযান চালাবে র‌্যাব। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, চামড়া পাচার রোধে রাজধানীর চারদিকে ১৪টি জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। এসব চেকপোস্ট বসছে পোস্তা, লালবাগ, হাজারীবাগ, সোয়ারীঘাট, সদরঘাট, আশুলিয়া বেড়িবাঁধ, আমিনবাজার, গাবতলী, সাভার, সাভারের বলিয়ারপুর, আব্দুল্লাহপুর, যাত্রাবাড়ীসহ আশপাশের এলাকায়। সাভারের বলিায়ারপুরের চেকপোস্টটি পরিচালনা করবে ঢাকা জেলা পুলিশ। গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা, মানিকগঞ্জ, মাওয়া ফেরিঘাট, কাঁচপুর ব্রিজসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সুলতানা কামাল ব্রিজ এলাকায়ও চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। এছাড়া রেলস্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালেও চেকপোস্ট বসানো হবে।
×