ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইতিহাস গড়া হলো না বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৯ আগস্ট ২০১৮

 ইতিহাস গড়া  হলো না  বাংলাদেশের

জাহিদুল আলম জয় ॥ সুবর্ণ সুযোগ ছিল ইতিহাস গড়ার। কিন্তু গোলের দু’টি প্রচেষ্টা পোস্টে লেগে প্রতিহত হওয়ায় সেটা আর হলো না। বাংলাদেশের কিশোরীদের টানা দ্বিতীয়বার শিরোপা জয়ের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। শনিবার রাতে সাফ অনুর্ধ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের ফাইনালে ভারতের কাছে ০-১ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। ফলে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। আর প্রথম আসরের ফাইনালে হারের প্রতিশোধ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারতের কিশোরীরা। ভুটানের রাজধানী থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে ফাইনালে জয়সূচক গোলটি করেন ভারতীয় ফরোয়ার্ড সুনীতা মান্দা। এর আগে নেপালকে পেনাল্টি শূটআউটে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে স্বাগতিক ভুটান। ম্যাচের শুরু থেকেই বেশ চাপে পড়ে বাংলাদেশের মেয়েরা। বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে ভারতের কিশোরীরা। প্রথম ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশের চেয়ে গোছালো ফুটবল খেলে গত আসরের রানার্সআপরা। বলের দখলও বেশি ছিল তাদের। গ্রুপ ম্যাচ ও সেমিফাইনালে মারিয়া, তহুরা, আঁখিরা সহজেই প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু ফাইনালের প্রথমার্ধে তারা বেশ চাপে পড়ে। টুর্নামেন্টের আগের তিন ম্যাচে যেভাবে দাপটের সঙ্গে খেলেছিল বাংলার মেয়েরা প্রথমার্ধে সেই রূপে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। মনে হচ্ছিল স্নায়ুচাপে ভুগছিল পুরো দল। মাঝমাঠ ছিল বিস্ময়করভাবে নিষ্প্রভ। মারিয়া-মনিকা বারবার বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। ঠিকমতো পাস দিতে পারছিল না। এর প্রভাব পড়ে আক্রমণভাগের তহুরা-আনুচিং-সাজেদা-শামসুন্নাহারের ওপর। তারা বলতে গেলে বলই পাচ্ছিল না। অনেকটা নিচে নেমে তাদের বল আনতে হচ্ছিল। আগের ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ গোলরক্ষক মাহমুদা আক্তারকে কোন পরীক্ষাই দিতে হয়নি। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই গোলপোস্ট ছেড়ে ওপরে এসে সতীর্থদের সঙ্গে খেলেছে সে। কিন্তু ফাইনালে তাকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় ম্যাচের শুরু থেকেই। চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয় ভারতের। ডি বক্সের বাইরে থেকে ফরোয়ার্ড আভিকা সিংয়ের ফ্রিকিক বাংলাদেশের সাইডপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে সিল্কি দেবীর হেড জালে প্রবেশের মুহূর্তে কোনরকমে পাঞ্চ করে কর্নারের বিনিময়ে বাংলাদেশকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক মাহমুদা। এরপর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা বাংলাদেশ প্রথম গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে নবম মিনিটে। কিন্তু দুর্বল প্রচেষ্টা লুফে নেয় ভারতীয় গোলরক্ষক। এরপর ভারত উপর্যুপরি আক্রমণ করে খেলতে থাকে। কিন্তু সব আক্রমণ নস্যাৎ হয়ে যায় বাংলাদেশের রক্ষণদুর্গে এসে। ম্যাচের ২৯ মিনিটে গোলের ভাল সুযোগ পেলেও কাজেও লাগতে পারেনি বাংলার দুরন্ত কিশোরীরা। প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে ডিফেন্ডার আঁখির দূরপাল্লার শট ভারতের সাইডপোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়। এরপর ভারত কয়েকটি সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি। তবে প্রথমার্ধের শেষদিকে (৪৩ মিনিট) এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে বাংলার মেয়েরা। ডানপ্রান্ত দিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শামসুন্নাহার সিনিয়র পাস দেয় তহুরাকে। সেই বল ভারতের ফরোয়ার্ড লিন্ডা কম পেলেও ঠিকমত ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয়। বল চলে আসে ডি বক্সের ভেতর। সেখানে ছিলেন বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড সাজেদা খাতুন। সামনে ছিল শুধু ভারতীয় গোলরক্ষক। বল পোস্টে রাখতে পারলেই যেখানে গোল হয়ে যায় সেখানে স্নায়ুর চাপে ভোগা সাজেদার শট বারপোস্টের অনেক ওপর দিয়ে বাইরে যায়। গোলশূন্যভাবে শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা। বিরতির পর প্রথমার্ধের অগোছালো ভাব ছেড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে তহুরা, মারিয়া, মগিনিরা। তবে হতাশ হতে হয় তাদের। ম্যাচের ৬৬ মিনিটে গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। লিন্ডা কমের কর্নার কিক থেকে চলতি বলে ভলি করে ভারতকে এগিয়ে দেন ফরোয়ার্ড সুনীতা মান্দা (০-১)। এর ফলে টুর্নামেন্টের দুই আসর মিলিয়ে প্রথমবারের মতো গোল হজম করে বাংলাদেশ গোলরক্ষক মাহমুদা। সবমিলিয়ে ৬৯৬ মিনিট পর। আগের আসরের চার ম্যাচের ৩৬০ মিনিট এবং ফাইনালের আগ পর্যন্ত ৩৩৬ মিনিট গোলবার অক্ষত রেখেছিল সে। ৭৬ মিনিটে ম্যাচে সমতা ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট হয় বাংলাদেশের। এ সময় মাঝ মাঠে বল পায় মনিকা চাকমা। এরপর কিছুটা এগিয়ে বাঁ পায়ে দূরপাল্লার শট নেয় এই মিডফিল্ডার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মনিকার শট ভারতের ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরতে শেষদিকে ভারতের রক্ষণভাগে মুহুর্মুহু আক্রমণ শানাতে থাকে। ৮২ মিনিটে আরেকটি অসাধারণ সুযোগ আসে ম্যাচে ফেরার। কিন্তু এবারও ভাগ্যদেবী সহায় ছিল না। এবার ফরোয়ার্ড তহুরার দৃষ্টিনন্দন শট ভারতের সাইডপোস্টে লেগে ফিরে আসে। ম্যাচের শেষ মিনিটেও তহুরা সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে। ফাঁকা পোস্টে সে হেড করতে ব্যর্থ হলে হতাশ হতে হয় বাংলাদেশকে। বাকি সময় প্রাণান্ত চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি বাংলার কিশোরীরা। যে কারণে শিরোপা হারিয়ে রানার্সআপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
×