ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মৌলবাদের ভয়াল রূপ মেলে ধরা নাটক সার্কাস সার্কাস

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৯ আগস্ট ২০১৮

  মৌলবাদের ভয়াল রূপ মেলে ধরা নাটক সার্কাস সার্কাস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মৌলবাদের আক্রোশের শিকার এক সার্কাস দল। সেই সার্কাস দলের গল্প নিয়ে আবর্তিত হয়েছে নাটকের কাহিনী। গল্পের সূত্র ধরে উঠে এসেছে একাত্তরের উত্তপ্ত সময়। পাকবাহিনীর হিংস্রতার শিকার হয়ে নিহত হয় দলটির প্রতিষ্ঠাতা লক্ষণ দাস। পুড়িয়ে দেয়া হয় সার্কাসের সরঞ্জামাদি। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন করে শুরু করা দলটি পুনরায় আক্রান্ত হয় মৌলবাদের রোষানলে। উগ্রপন্থার সেই বীভৎসতা তুলে ধরা নাটক ‘সার্কাস সার্কাস’। রচনার পাশাপাশি নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন আজাদ আবুল কালাম। নাট্যদল প্রাচ্যনাটের জনপ্রিয় প্রযোজনাটি শনিবার মঞ্চস্থ হলো শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায়। লক্ষণ দাসের কারণে একসময় দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘দি গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস’। তার মৃত্যুর পর দলের দায়িত্ব নেয় অনুজ সাধন দাস। মুক্তিযুদ্ধে যে দলটি নিঃস্ব হয়েছিল সেটিকে আবার একটু একটু করে সংগঠিত করে বিভিন্ন অঞ্চলে সার্কাস প্রদর্শনের ধারাবাহিকতায় একটি আমন্ত্রণে দলবল নিয়ে আসে নবগ্রামে। দলের সমস্যার অন্ত নেই, খেলোয়াড়রা সবাই পারদর্শী নয়। দলের সদস্যদের মাঝে রয়েছে ব্যক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়েন। এমন পরিস্থিতিতে সামাজিকতার দোহাই দিয়ে সার্কাস প্রদর্শনে বাধা দেয় কিছু মৌলবাদী সংগঠন। বিপাকে পড়ে দলনেতা সাধন দাস। তাকে মুখোমুখি হতে হয় দুই পক্ষের। একদিকে দলের কোন্দল এবং অপরদিকে মৌলবাদের চোখ রাঙানি। এর মাঝে নিখোঁজ হয় দলের এক নারী সদস্য। এমন জটিল পরিস্থিতিতে মৌলবাদী শক্তি হামলা চালায় সার্কাস দলে। আগুন ধরিয়ে দেয় প্যান্ডেলে। একে একে মৃত্যুর কোলে ধলে পড়ে দলের খেলোয়াড়। আগুনে পুড়ে প্রাণ হারায় জীব-জানোয়ার, ভস্মীভূত হয় দি গ্রেট বেঙ্গল সার্কাসের সবকিছু। সেই ধোঁয়ার কু-লীর মাঝেও কেউ একজন খুঁজে ফেরে দলের সদস্য সন্তান সম্ভাবা বাঘটিকে। এভাবেই করুণ পরিণতির মাধ্যমে শেষ হয় নাটকের কাহিনী। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আজাদ আবুল কালাম, আসলামুজ্জামান পলাশ, তপন মজুমদার, শাহেদ আলী, হীরা চৌধুরী শাহীনা সুমি, সাইফুল ইসলাম জার্নাল, গোপী দেবনাথ, সাখাওয়াত হোসেন রিজভী, জাহাঙ্গীর আলম, এ বি এস জেম, শতাব্দী ওয়াদুদ, তৌফিকুল ইসলাম ইমন, রাহুল আনন্দ, ঋতু সাত্তার, সানজিদা প্রীতি, পারভিন সুলতানা কলি, ফরহাদ, রফিকুল ইসলাম, সজীব প্রমুখ। সেলিম আল দীন জন্মোৎসবের মঞ্চস্থ ‘হরগজ’ ॥ সেলিম আল দীনের জন্মবার্ষিকী স্মরণে শিল্পকলা একাডেমিতে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল আয়োজিত দুদিনব্যাপী উৎসবের শেষ দিন ছিল শনিবার। এদিন সন্ধ্যায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় স্বপ্নদল প্রযোজনা ‘হরগজ’। সেলিম আল দীনের কালজয়ী সৃষ্টি হরগজ অবলম্বনে প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে মানিকগঞ্জ জেলার হরগজ নামক স্থানে ঘটে যাওয়া প্রলয়ঙ্কারী টর্নেডোর অভিজ্ঞতায় ১৯৯২ সালে সেলিম আল দীন নাটকটি রচনা করনে। প্রায়-আণবিক বিস্ফোরণতুল্য সে ঝড়ের পরে প্রথম-উদ্ধারকারী দলের সেখানে গমন এবং আকৃতির জগৎ থেকে তাদের হঠাৎ নিরাকৃতির জগতে উপস্থিত হওয়ার প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি নিয়েই নাটকটি আবর্তিত। এত নাট্যকার ত্রাণদলের প্রধান চরিত্রের মাধ্যমে এক নব্যকালের যিশুখ্রিস্টকে সৃষ্টি করেছেন যে ত্রাণকর্তারূপে আবির্ভূত হয়ে শেষে নিজেই আর্তে পরিণত হয়। প্রকৃতপক্ষে হরগজকে ভেঙ্গে যাওয়া সমগ্র বিশ্বের রূপক ধরে এ নাট্যের মাধ্যমে নাট্যকার সবাইকে যেন অধিকতর মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান। উৎসবের প্রথম দিন শুক্রবার স্বপ্নদল মঞ্চস্থ করে ‘ত্রিংশ শতাব্দী’। দুটি প্রযোজনাই ঐতিহ্যের ধারায় সেলিম আল দীন উদ্ভাবিত আধুনিক বাঙলা নাট্যরীতিতে নির্মিত হয়েছে। স্বপ্নদলের এবারের উৎসেরব স্লোগান ছিল ‘সেলিম আল দীন সতত অনিবার্য রয়, বাঙলা নাট্যের শিল্পসুধা বিশ্ব করবে জয়’। জাবিতে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ৬৯তম জন্মজয়ন্তী পালিত ॥ জাবি সংবাদদাতা জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা, রবীন্দ্রত্তোরকালের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার নাট্যাচার্য ড. সেলিম আল দীনের ৬৯তম জন্মজয়ন্তী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার বেলা এগারোটায় সেলিম আল দীনের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ নূরুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মনজুরুল হক, কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক, নাট্যব্যক্তিত্ব ও সেলিম আল দীনের নাট্যসঙ্গী নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, বিভাগীয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং শিল্পজন সেলিম আল দীনের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এর আগে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে সেলিম আল দীনের সমাধিতে এসে শেষ হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পর উপ-উপাচার্য বলেন, নাটকের উৎকর্ষ সাধনে সেলিম আল দীন অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি গ্রাম থিয়েটার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নাটককে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, ঢাকা থিয়েটার, স্বপ্নদল, দ্যাশ বাঙলা নাট্যদল, সেলিম আল দীন ফাউন্ডেশন, বুনন থিয়েটার, তালুকনগর থিয়েটার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, সেলিম আল দীন পরিবারসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সেলিম আল দীনের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। সেলিম আল দীনের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
×