ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল ফোনের কলরেট বাড়ানোয় ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড়

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৯ আগস্ট ২০১৮

 মোবাইল ফোনের কলরেট বাড়ানোয় ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড়

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল ফোনের ‘কলরেট’ বাড়ানোর প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ফেসবুকে গ্রুপ করে বিটিআরসির বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হচ্ছে। ঘোষণা দেয়া হয়েছে, ঈদের পর কলরেট কমানোর আন্দোলনে ডাক দেবে। ইতোমধ্যে ফেসবুক গ্রুপে বলা হয়েছে, ‘বিটিআরসি অযাচিত কলরেট বৃদ্ধির প্রতিবাদে তিন দিন রিচার্জ বন্ধ রাখা, কলরেট ভ্যাটসহ ২৫ পয়সার মধ্যে চাই, তিন দিনের মধ্যে দাবি মানা না হলে সব মোবাইল গ্রাহককে তিন দিন সব মোবাইল বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। এতেও যদি সরকার প্রতিযোগিতামূলক কলরেট না করে তাহলে আন্দোলনে নামা হবে’। ফেসবুকে দিন দিন এই প্রতিবাদ বেড়েই চলেছে। এদিকে শনিবার মোবাইল ফোনের ‘অযৌক্তিক কলরেট’ বাতিলের দাবি জানিয়েছে, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক এ্যাসোসিয়েশন। তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে এ দাবি জানান। ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সাধারণ গ্রাহক ছোট অপারেটরদের কল্যাণে সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ কলরেট সরকার বেঁধে দিয়েছে। এখানে প্রতিযোগিতামূলক সেবা পাওয়া যাবে। আগে বড় অপারেটররা ইচ্ছে মতো সেবা দিয়েছে। যে কারণে কল ড্রপ বেশি হতো। এখন অপারেটরদের উচ্চ মানের সেবা দিতেই হবে। আমরা হিসাব করে দেখেছি গ্রাহকের টাকা বাড়েনি। কারণ গ্রাহকরা আগে চারটি কোম্পানির চারটি সিম কিনত। এখন একটা সিম ব্যবহার করেই তারা ইচ্ছে করলে বিভিন্ন অপারেটরের সুবিধা পেতে পারবেন। সেপ্টম্বরের মধ্যে আমরা মোবাইল নাম্বার পোর্টেবুলেটি (এমএনপি) সেবা বাজারে নিয়ে আসব। তখন যে কোন একটা অপারেটরের নম্বার থাকলেই ওই গ্রাহক যে কোন অপারেটরের কাছে যেতে পারবেন। মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে অফনেট-অননেট নামের কোন বিষয় নেই। একমাত্র আমাদের দেশেই এটা রয়েছে। আর এটা যখন করা হয় তখন অনেকটা গায়ের জোরেই করা হয়েছে। বাজারে একটি অপারেটর বট গাছের সমান হয়ে আছে। বাকিরা চারা গাছ। ফলে প্রতিযোগিতায় সমান করার জন্যই সরকার কলরেট এক করেছে। যাতে কোন অপারেটর মনোপলি ব্যবসা না করতে পারে। ব্যবসা যেন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে চলে। তখন গ্রাহকরা দেখবেন, গ্রাহকরা দেখবেন কার সার্ভিস ভাল তার কাছে চলে যাবেন। আমরা কলরেট বেঁধে দিয়ে মোবাইল শিল্পে স্বাস্থ্যসম্মত প্রতিযোগিতা নিয়ে আসতে চাইছি। যারা আজকে এ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে নানা সমালোচনা করছেন, তারা যে কোন অপারেটর দ্বারা প্রভাবিত না এ কথা বলা মুশকিল। যে হারে ফেসবুকে আলোচনা করা হচ্ছে-তাতে মনে হয় এটা একটা বড় অন্যায় হয়ে গেছে। সরকার একটা রেট বেঁধে দিয়েছে। সর্বনিম্ন ৪৫ পয়সা আর সর্বোচ্চ ২ টাকা। এটা আগেও ছিল। কিন্তু অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে কোন কোন অপারেটর ২৫ পয়সায় নামিয়ে নিয়েছিল। সেখানে কিন্তু ভ্যাট ও সার্ভিস চার্জ নেয়া হয়েছে। তখন আসলে ওই কলের দাম কত হচ্ছে। তখনও কিন্তু ২৫ পয়সার কল ৩০ থেকে ৩৫ পয়সায় গিয়ে পড়ছে। এই হিসাবটা কেউ করছে না। সবাই সরকারের সমালোচনা করে চলেছে। এর মধ্যে নিশ্চিত কোন উদ্দেশ্য রয়েছে। আমরা ব্যবসা বান্ধব একটা রেট বেঁধে দিয়েছি। এটা পরে হলেও করতে হতো। কারণ এমএনপি চালু হলে একটা নির্দিষ্ট কলরেট বেঁধে দিতেই হতো। তা না হলে এমএনপি করা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে, শনিবার মোবাইল ফোন গ্রাহক এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে শুধু অপারেটরদের স্বার্থ বিবেচনা করে কলরেট ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করেছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার আগে গ্রাহকদের মতামত নেয়া উচিত ছিল। এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে গ্রাহকদের অনেক ব্যয় বেড়েছে। তার দাবি কমিশন প্রয়োজনে গণশুনানি করতে পারত। তা না করে তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত গ্রাহককে মানতে বাধ্য করা একটি অগণতান্ত্রিক ও অনৈতিক সিদ্ধান্ত। গণমাধ্যমে বিটিআরসি কর্মকর্তাদের বক্তব্যে জানতে পারলাম, আগের ২৫ পয়সা কাগজে-কলমে হলেও রেট পড়ত ৩৫ পয়সার ওপরে। আমরা মনে করি, তাদের এ ধরনের বক্তব্য ভোক্তা অধিকার আইনের পরিপন্থী। এতে করে অপারেটরদের দুর্নীতিকে প্রকাশ্যে প্রশ্রয় দিয়েছে কমিশন। বর্তমান রেটে অপারেটর, আইসিএক্স, আইজিডব্লিউ, এনটিটিএন এবং ভ্যাট যোগ করলে কলরেট দাঁড়াবে প্রায় ৫২ পয়সা। আগের অফনেটের ফ্লোররেটের সমান। এই কলরেট বৃদ্ধির ফলে অপারেটররা সাময়িকভাবে লাভবান হলেও ভবিষ্যতে গ্রাহকেরা বিকল্প পথে কথা বলা শুরু করলে অপারেটররা ব্যবসায় বিনিয়োগ হারাতে পারে। এমএনপি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে দুর্বল অপারেটরদের বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বিটিআরসি নিয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার দাবি জানান তিনি। মানববন্ধনে সিপিবির সম্পাদকম-লীর সদস্য রুহিন হোসেন বলেন, শুধু অপারেটরদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে এই মূল্যবৃদ্ধি মেনে নেয়া যায় না। দ্রুত মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করে জনগণের কাছ থেকে নেয়া অতিরিক্ত অর্থ জনগণকে ফেরত দেয়ার দাবি জানান। এ সময় জোনায়েদ সাকি গ্রাহক এ্যাসোসিয়েশনের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, নতুন এই কলরেটের ফলে গ্রাহকের পকেট থেকে বছরে ছয় হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হবে। তাই মুঠোফোন গ্রাহক এ্যাসোসিয়েশনের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে সরকারকে দ্রুত নতুন কলরেট বাতিল করা আহ্বান জানান তিনি। মোবাইল খাতের ব্যক্তিরা বলছেন, নম্বর পরিবর্তন না করে অপারেটর পরিবর্তনের সুবিধা মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) চালুর আগে অননেট ও অফনেট কলের পার্থক্য দূর করা দরকার ছিল। এটা না করা হলে বাজার প্রতিযোগিতায় ছোট অপারেটররা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। নতুন কলরেট অনুযায়ী এখন মোবাইল ফোন অপারেটররা গ্রাহকদের জন্য নতুন মূল্য নির্ধারণ করবে। অপারেটরদের দাবি, নতুন কলরেটে গ্রাহকের ফোন করার খরচ কমবে। কারণ, এত দিন অননেট কলে সর্বনিম্ন মূল্য কাগজে-কলমে ২৫ পয়সা হলেও প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের কলে গড়ে গ্রাহকের খরচ হতো ৪০ পয়সা। আর অফনেট অর্থাৎ অন্য অপারেটরে কল করার খরচ পড়ে ৯০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪৫ পয়সা পর্যন্ত। একক কলরেট চালু হলে অননেট কলের খরচ ৫ পয়সা বাড়বে, কিন্তু অফনেট কলের খরচ কমবে ৪৫ থেকে ৫০ পয়সা। এতে গ্রাহকসংখ্যায় পিছিয়ে থাকা অপারেটরের গ্রাহকেরা বেশি সুবিধা পাবেন। বর্তমানে গ্রামীণফোন থেকে ৯০ শতাংশ কল হয় অননেটে, ১০ শতাংশ কল অফনেটে হয়। অন্যদিকে, সরকারের মালিকানাধীন অপারেটর টেলিটকের ১০ শতাংশ কল অননেটে ও ৯০ শতাংশ কল অফনেটে হচ্ছে। রবি ও বাংলালিংকের অননেট-অফনেট কলের পরিমাণ ৭০ ও ৩০ শতাংশ।
×