ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচুর আমদানি, বিক্রেতারা দাম হাঁকছেন বেশি

রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটে এখনও বেচাকেনা কম

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৯ আগস্ট ২০১৮

    রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটে এখনও বেচাকেনা কম

ওয়াজেদ হীরা ॥ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির পশু আসতে থাকায় সরগরম রাজধানীর হাটগুলো। ছোট, বড়, মাঝারি সাইজের নানা রঙের গরু উঠেছে রাজধানীর পশুরহাটে। ক্রেতাও বাজার ঘুরে দেখছেন। তবে বেচাকেনা জমজমাট নয়। এদিকে, বিক্রেতাও গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন বেশি। দাম না ছাড়ার কারণেও বেশি একটা বিক্রি হচ্ছে না। ক্রেতাও দাম কমার অপেক্ষায় কিনছেন না। রাজধানীর একাধিক পশুরহাট ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। শনিবার রাজধানীর পশুরহাট ঘুরে দেখা যায়, এখনও গরু আসছে। তবে বিক্রি তেমন শুরু হয়নি বললেই চলে। সিটি কর্পোরেশনের ঘোষণা অনুযায়ী মূল হাট শুরু হবে আজ রবিবার থেকে। তবে ক্রেতা হাটে আসছেন, ঘুরে ঘুরে দেখছেন, দরদাম করছেন। কিন্তু বেপারিদের দামের সঙ্গে পেরে উঠছেন না। সরেজমিনে শনিবার রাজধানী গাবতলীর স্থায়ী হাট ঘুরে দেখা যায়, শুক্রবার রাতে প্রচুর গরু নেমেছে হাটে। শনিবারও বিভিন্ন ট্রাকে গরু আসার দৃশ্য দেখা যায়। হামিদুল ইসলাম বেপারিসহ সঙ্গীরা মিলে ২৫টি গরু নিয়ে এসেছেন রাজধানীর এই হাটে। শনিবার ভোরে গরু নামিয়েছেন তিনি। আসতে কোন বাধা বা সমস্যা হয়নি উল্লেখ করে বলেন, গতবারের মতো আমরা এবার কোন বাধার মুখে পরিনি। আমরা গরুর বেপারি, স্থানীয়দের কাছ থেকে দেশী গরু কিনে অল্প লাভে বিক্রি করি। নিজেদেরও দু’একটা গরু থাকে। তিনি বলেন, এবার নিজের ৪টি গরুর সঙ্গে এলাকাবাসীর কাছ থেকে আরও ৩টি গরু কিনেছেন। আর তার সঙ্গীরাসহ ঢাকায় এসেছেন একটু ভাল মুনাফার আশায়। গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটে দেখা যায়, হাট নির্দিষ্ট জায়গা ছাপিয়ে আশপাশে বিস্তৃত হয়েছে। কোরবানির পশু রাখা হয়েছে অনেকখানি জায়গাজুড়ে। বেড়িবাঁধের পাশেও কিছু কিছু গরু দেখা যায়। যেখানে দেশী গরুর সংখ্যাই বেশি। জানা গেল টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, নওগাঁ, নাটোর ও রাজশাহী থেকে গরু নিয়ে এসেছেন বেপারিরা। গরু নিয়ে আসা ঝিনাইদহের খাদেমুল বলেন, আমি আমার পালের ৪টি গরুসহ এলাকার পরিচিতদের সঙ্গে নিয়ে এসেছি। একটি গরু বিক্রি করেছি। ক্রেতা এখন ঘুরে ঘুরে দেখছেন আর দাম জানতে চাইছেন। আজকালের মধ্যে বিক্রি জমজমাট থাকবে বলে তিনি মনে করছেন। একই বাজারে মাঝারি আকারের একটি গরুর দাম এক লাখ টাকার ওপরে চেয়েছেন এক বিক্রেতা। এ নিয়ে আগত ক্রেতা ইমতিয়াজ বলেন, দেখুন গরুটির কি দাম চাচ্ছে। এটা সর্বোচ্চ ৬৫ থেকে ৭০ হাজার হতে পারে। গতবারের চেয়ে কিছুটা দাম বেশি মনে হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে শেষের দিকে দাম কমতে পারে বলে আশাবাদী। বাজার ঘুরে দরদাম করতে দেখা যায় এক ব্যবসায়ী কামাল আহমেদকে। বনিবনা না হওয়ার কারণে সামনে এগিয়ে যান। হাঁটতে হাঁটতে বলেন, আমার মনে হয় বিক্রেতা দাম বেশি চাচ্ছেন। বাজারে কেনাকাটা পুরো শুরুও হয়নি। গরু এখনও আসছে। ঈদের দু’একদিন আগে হয়ত কমতে পারে। তিনি বলেন, অন্যান্য বাজারে একই রকম দাম। আমি আরও দুটি হাটে ঘুরেছি। দাম কম নয়। এদিকে, গাবতলী পশুরহাটে দায়িত্বরত একজন ব্যবস্থাপক বলেন, এবার হাটে কোরবানি উপলক্ষে নয়টি অস্থায়ী হাসিলঘর তৈরি করা হয়েছে। এর সঙ্গে আরও একটি স্থায়ী হাসিলঘর আছে। প্রতিরাতে ট্রাকের পর ট্রাক গরু নামছে। বেচাকেনা যা হচ্ছে খুবই সামান্য। কাল (রবিবার) কিছুটা বাড়তে পারে। সোমবার পুরো বেচাকেনা চলবে বলেও জানান। রাজধানীর অন্যান্য বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ইতোমধ্যে বাজারে গরু উঠেছে। আরও গরু আসছে। রাজধানীর অস্থায়ী হাটগুলোতেও ক্রেতা কেনা নয় বরং ঘুরে দেখেছেন বেশি। অন্যান্য হাটেও বেপারিরা গরুর দাম ছাড়ছেন না বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। ক্রেতাদের মতে, পশুর আকারের তুলনায় দাম অনেক বেশি চাচ্ছেন। তাই অপেক্ষা করতে হবে। বসিলা হাটে ক্রেতা সজীব বলেন, গত বছর যে গরু ৫০-৫৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে এবার সে গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৭৫-৮০ হাজার টাকা। অপেক্ষা না করে উপায় নেই ভাই। মোহাম্মদপুর বসিলা পুলিশ লাইন গরুর হাটে কোরবানির জন্য ছাগল কেনেন সরোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে এই ছাগলের দাম গতবারের দামের চেয়ে কিছুটা বেশি হয়েছে। গরুর দাম শুনে আর দাম বলতে পারিনি। তাই গরু পরে কিনব। বসিলা পুলিশ লাইন হাটে দেখা যায়, প্রচুর গরু আমদানি হয়েছে। তবে বিক্রি খুবই কম। বিক্রেতার কেউ কেউ অলস সময় পার করছেন। এই হাটে সিরাজগঞ্জ থেকে আনা একটি গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে তিন লাখ টাকা। বিক্রেতা রহিম বলেন, গরুটির দিকে দেখুন, এটি তো আর একদিনেই তিন লাখ টাকার গরু হয়নি। সারা বছর যে খরচ আর যতœ করে পালতে হয় এর হিসেব শুনলে বিশ^াস করবেন না। আমরা খুব বেশি লাভ চাই না, তবে অনেক সময় খরচের দিকে তাকালে আমরাও কম দামে দিতে পারি না। অন্যান্য হাটের মতো কমলাপুর পশুরহাটেও গরু এসেছে। তবে ক্রেতা একেবারেই কম। বিক্রেতারা গরুর যতœ নিচ্ছেন। রোদ থেকে বাঁচাতে ছাউনির ব্যবস্থা করেছেন। আশা করছে, আজকালের মধ্যে পুরো বিক্রি শুরু হবে। রাজধানীর মেরাদিয়া, আফতাবনগর, বাড্ডা সাঈদ নগর, উত্তরার হাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়Ñ হাটগুলোতেও গরু আসছে। দিনের চেয়ে রাতে বেশি গরু নামছে বলেও ইজারাদাররা জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় অধিকাংশ হাটেই বেচাকেনা নেই বললেই চলে।
×