ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পবিত্র শহর নাজাফগামী দর্শনার্থীর সংখ্যা কমেছে

অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ॥ মাশুল গুনছে ইরাকও

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ১৯ আগস্ট ২০১৮

  অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ॥ মাশুল গুনছে ইরাকও

ইরাকের পবিত্র শহর নাজাফ। এই শহরে ইরাকীরা পার্শ্ববর্তী ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। ইরানীরা অর্থসঙ্কটের কারণে তীর্থযাত্রায় যেতে না পারায় এ শহরের হোটেলগুলোতে সিট বুকিং বাতিল করা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এএফপি। নাজাফ শহরের এক প্রান্তে হযরত মুহাম্মাদের (স) দৌহিত্র ও শিয়া মুসলমানদের মধ্যে শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি ইমাম আলীর মাজারের অবস্থান। মোজাইক করা দেয়াল ও স্বর্ণগম্বুজ শোভিত মাজারটির উদ্দেশ্যে তীর্থযাত্রায় আসেন প্রতি বছর প্রায় ১৫ লাখ শিয়া মুসলমান। ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখানে আসেন পার্শ্ববর্তী ইরান থেকে। কারণ, ইরানের বেশির ভাগ লোক শিয়া সম্প্রদায়ের। শহরে হোটেল মালিক ইউনিয়নের সভাপতি সায়েব আবু গোনিম বলেছেন, এখানে ৮৫ শতাংশের বেশি লোক ইরানী। বাগদাদ থেকে ১শ’ ৫০ কিলোমিটার (৯৫ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত এ শহরে ইরানীদের সুবিধার জন্য তথ্য ও সতর্কতা ফার্সি ভাষায় অনূদিত। নাজাফের সর্বত্র শোনা যায় ইরানের জাতীয় ভাষা। কালো বোরকা আবৃত নারী ও পুরুষ এ তীর্থযাত্রীরা ইরানী ভাষায় কথা বলেন। অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক দুর্ভোগ ও যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের কারণে ইরানী রিয়েলের মূল্য পড়ে গেছে মারাত্মকভাবে। এপ্রিলের পর মার্কিন ডলারের বিপরীতে রিয়েলের মূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ইরানী ফারজাদ রেজা আলী কোনভাবে অর্থের সংস্থান করে এসেছেন নাজাফে। রেজা আলী বলেন, মুদ্রা সঙ্কটের এক প্রত্যক্ষ ফল হচ্ছে তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা হ্রাস। ইরানের বিরুদ্ধে প্রথম পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা আরোপ অর্থনৈতিক লেনদেন ও কাঁচা পণ্য আমদানির ওপর আঘাত করে। নবেম্বরে পরবর্তী পদক্ষেপ ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও গুরুত্বপূর্ণ হাইড্রোকার্বন শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। মোকদারবন্দেহ মেহরবান বলেন, একটি ইরাকী ভিসার জন্য প্রয়োজন ৪০ ডলার। তিনি অবশ্য কালো বাজারের আশ্রয় নিয়ে এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, মুদ্রাবাজার এখন ওঠা-নামা করছে এবং সরকার তা নিরসনে সহায়তা করছে না। তাই নাজাফে ইরানী তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এ হ্রাসে ইরাকের পর্যটন খাতকে নাটকীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ওয়ার্ল্ড ট্র্যাভেল ও ট্যুরিজম কাউন্সিলের মতে, ইরানী পর্যটকরা ইরাকের জিডিপির তিন শতাংশ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এ তিন শতাংশ প্রায় ৫শ’ কোটি মার্কিন ডলারের সমান। ইরাকে পর্যটন শিল্প প্রায় ধর্মমুখী এবং নাজাফও প্রায় কারবালা কেন্দ্রিক। কারবালা হচ্ছে দেশের আরেকটি শিয়া অধ্যুষিত শহর। নাজাফ এ মাসে কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে শহরটি তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্যভাবে ইরানীদের আগমন তেমন দেখা যাচ্ছে না। পরিবহন সংযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত অপ্রতুল হয়ে পড়েছে। নাজাফ বিমান বন্দরে দুদেশের মধ্যে দৈনিক যেখানে ৩৫টি ফ্লাইটের ব্যবস্থা ছিল সেখানে বর্তমানে তা নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২টি ফ্লাইটে। কর্মকর্তারা বলেন, ফ্লাইটগুলোতে বেশিরভাগ যাত্রী যারা ইরানের উদ্দেশে নাজাফ ত্যাগ করেন তারা ইরাকী তীর্থযাত্রী এবং এরা ইরান যান সেখানে পবিত্র স্থানগুলো পরিদর্শনের জন্য। আবু গোনিম বলেন, নাজাফে হোটেলগুলোতে অসংখ্য সংরক্ষণ বাতিল করা হয়েছে এবং শহরটিতে তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা খুবই অস্থিতিশীল হয়ে দাঁড়িয়েছে যদিও তিনি শহরের ২শ’ ৮৫টি হোটেলের যথাযথ তথ্য দিতে পারেননি। হোটেল ব্যবস্থাপকরা দরকষাকষির মধ্য দিয়ে ভূগর্ভস্থ কক্ষের ভাড়ায় কক্ষ ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন। নাজাফের আল বালাদ আল আমিন হোটেলের মালিক ইউসেফ আবু আল তাবুক বলেন, ভাড়া অত্যন্ত হ্রাস পেয়েছে এবং তা কখনও কখনও ৫০ শতাংশের কমে এসে দাঁড়িয়েছে। ৮৫ বছর বয়স্ক আল-তাবুক বলেন, নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পূরণের জন্য এ ছাড় ও অন্যান্য বিশেষ প্রস্তাব যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, ইরানী তীর্থযাত্রী ছাড়া এ বাজার নির্বিঘেœ পড়ে যাবে।
×