ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এইচএসসি পরীক্ষার ফলেও ধরা পড়ছে অসংখ্য ভুল

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১৯ আগস্ট ২০১৮

এইচএসসি পরীক্ষার ফলেও ধরা পড়ছে অসংখ্য ভুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মতো এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণেও সকল বোর্ডেই অসংখ্য ভুল ধরা পড়েছে। পুনঃনিরীক্ষণে পরিবর্তন হয়েছে অনেক পরীক্ষার্থীর ফল। কেবল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেই জিপিএ পরিবর্তন হয়েছে এক হাজার ৯৫৫ পরীক্ষার্থীর। প্রথম ফলে ফেল করার পর খাতা চ্যালেঞ্জ করে পাস করেছে ৫৪০ জন। অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডেও অসংখ্য পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। ফল চ্যালেঞ্জ করে ফেল থেকে পাস ছাড়াও নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনের পর শনিবার পৃথক পৃথকভাবে শিক্ষা বোর্ডগুলো নিজেদের ফল জানানো শুরু করেছে। যেখানে ফলের ব্যাপক পরিবর্তনের চিত্রই ধরা পড়েছে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে আলাদা আলাদাভাবে টেলিফোনে যোগাযোগ করে ফল পরিবর্তনের তথ্য পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও স্ব স্ব বোর্ডে গিয়ে নিজেদের ফল জানতে পারছেন। কিন্তু কেন ফলে বিশাল এই সংখ্যক পরিবর্তন? এই প্রশ্নের উত্তরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সকলেই বলছেন, দ্রুত ফল প্রকাশের কারণে তাড়াহুড়াই এই অবস্থার কারণ। মাধ্যমিক পরীক্ষার মতো এখানেও মূলত তিন ধরনের ভুল ধরা পড়ছে। এক, কিছু খাতায় নম্বরের যোগফল ঠিক ছিল না। দুই, কিছু উত্তরের নম্বর যোগ করা হয়নি। আর তিন, ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাটেও বেশ কিছু ভুল পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এইচএসসিতে এআর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেই নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬৪ জন। ফেল থেকে পাস করেছে ৫৪০ জন, জিপিএ পরিবর্তন হয়েছে এক হাজার ৯৫৫ জনের। এই বোর্ডে এবারের এসএসসিতেও নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২৯৫ জন। ফেল থেকে পাস করেছিল ১৯২ জন। পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ফলে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা ৫৪ শিক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ মাহবুব হাসান। গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে ৪০৯ শিক্ষার্থীর। এর মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৫৪ শিক্ষার্থী, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ শিক্ষার্থী এবং গ্রেড বেড়েছে ৩৩১ শিক্ষার্থীর। এ বোর্ডে এবার এসএসসিতে ৫২৯ শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছিল। গ্রেড পরিবর্তন হয়েছিল ৪৫০ শিক্ষার্থীর, ফেল থেকে পাস করে ৫১ শিক্ষার্থী এবং ফেল থেকে ফেল করলেও গ্রেড পরিবর্তিত হয়েছিল ২৮ শিক্ষার্থীর। গ্রেড পরিবর্তন হওয়া ৪৫০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন এবং গ্রেড বেড়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৮ শিক্ষার্থী। এদিকে এইচএসসিতে যশোর শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ বেড়েছে ৯৪ পরীক্ষার্থীর। ফেল থেকে পাস করেছে ৩৮ পরীক্ষার্থী। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪ পরীক্ষার্থী। এ বোর্ডে এসএসসিতে ২০৫ টি আবেদনের গ্রেড পরিবর্তন হয়েছিল। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮৭ জন। এছাড়া আগে ফেল করা ৭১ জন পাস করেছিল। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসিতে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯ পরীক্ষার্থী। ফেল থেকে পাস করেছে ১৩ পরীক্ষার্থী। জিপিএ বেড়েছে ১২২ পরীক্ষার্থীর। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এবার এসএসসিতে ৩১৬ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছিল, ফেল থেকে পাস করে ৬৩জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৯জন। এইচএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষকের ফল প্রকাশ করেছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড। পুনঃনিরীক্ষণের জন্য তিন হাজার ৭৮৩ শিক্ষার্থী ১৪ হাজার ৬৬২টি আবেদন করে। এর মধ্যে পুনঃনিরীক্ষণে ১৮ শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তিত ফলের মধ্যে দুজন ফেল থেকে পাস করেছেন ও দু’জন শিক্ষার্থী নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে এবং বাকিদের জিপিএ বেড়েছে জানিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অধ্যাপক মোঃ আনোয়ারুল আজিম। আলিম পরীক্ষার পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। যেখানে ফেল থেকে পাস করেছে ১৯ পরীক্ষার্থী। জিপিএ পরিবর্তন হয়েছে ৭২ পরীক্ষার্থীর, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ শিক্ষার্থী। অনেক পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে রাজশাহী, কুমিল্লা, সিলেট ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডেও। এদিকে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা জানিয়েছেন, পুনঃনিরীক্ষণে সাধারণত মোট ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেয়া হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শীটে ওঠানো হয়েছে কিনা এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শীটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কিনা। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেয়া হয়েছে। দ্রুত ফল প্রকাশের কারণে তাড়াহুড়াই অসংখ্য পরীক্ষার্থীর ফলে ভুল হচ্ছে বলে বলছেন কর্মকর্তারা।
×