একটি ডাকে জেগেছিল সাত কোটি প্রাণ রণাঙ্গনে। যুদ্ধজয়ে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। বিশ্ব মানচিত্রে ঠাঁই নিয়েছিল নতুন দেশ। পত পত করে উড়েছিল নতুন দেশের নতুন পতাকা। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন, সেই ভাষণে তিনি ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতার। হয়ে উঠেছিলেন জাতির পিতা। এই বাংলার কথা বলতে গিয়ে বিশ্বটাকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। সংগ্রামী এক জীবন ছিল তাঁর। জেল, জুলুম, হুলিয়া আর কারাগার ছিল নিত্যসঙ্গী। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর দুঃশাসন, শোষণ ত্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন। তিলে তিলে তৈরি করেছেন তাঁর প্রিয় জনগণকে স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায়। যার বজ্রকণ্ঠের নিনাদে কেঁপে উঠেছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী। বাঙালী জাতির অন্তরে তিনি সহস্র বছরের পরাধীনতা শেষে স্বাধীনতার বীজমন্ত্র তুলে দিয়েছিলেন। তাঁর সেই বজ্রকণ্ঠ আজও বাঙালীর হৃদয়ে উচ্চারিত হয় প্রতিক্ষণেই। প্রতিটি সঙ্কটময় মুহূর্তে তিনি এখনও প্রেরণা যুগিয়ে চলছেন। যুগ যুগ ধরে বাঙালী জাতি তাকে ধারণ করে অন্তরে। তিনি এগিয়ে আসেন বাঙালীর প্রাণে এক মহত্ত্বের আবরণে। বিশ্বের চোখে ছিলেন যিনি ‘বাঙলার কণ্ঠস্বর।’ আওয়ামী লীগ নামক দলটি গঠন, লালন, পরিচর্যা করেছেন নিবিষ্টভাবে। শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি সাহসের বরাভয় কাঁধে এগিয়ে গেছেন আপোসহীন এক সংগ্রামে। সেই সংগ্রামের, লড়াইয়ের ইতিহাস আজকের প্রজন্ম তেমন অবহিত নয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামও উচ্চারণ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি তাঁর অনেক ভাষণ, বিবৃতি মুছে ফেলা হয়েছে। কিন্তু বাঙালীর মন থেকে মুছে ফেলা যায়নি। তাঁর জীবনেতিহাসও সঠিকভাবে রচিত হয়নি। তবে তিনি নিজে রচনা করে গেছেন কারাগারের রোজনামচা, অসমাপ্ত আত্মজীবনী; যা থেকে খ-িত বঙ্গবন্ধুকে পাওয়া যায়। পূর্ণাঙ্গ জীবনী লেখার কাজটি এখনও হয়নি।
আজকের প্রজন্ম জাতির পিতা সম্পর্কিত যেটুকু ইতিহাস জানে, তা অগ্রজদের কাছ থেকে শুনে এবং নানাবিধ বই পাঠের মাধ্যমে। এভাবেই তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধু পৌঁছেছেন। তবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে আরও জানতে হবে এদেশের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুকে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অবিচ্ছেদ্য। পরস্পর পরিপূরক। তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা তো গড়বে এসব তরুণই। ডিজিটাল এই যুগে এখন আর কষ্ট করে বইয়ের পাতায় মুখ ডুবিয়ে থাকতে হবে না। হাতের মুঠোতেই রয়েছে এখন ইতিহাস জানার সুযোগ। আর তাই তো বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর ঐতিহাসিক জীবনকে মানুষের সামনে তুলে এনেছে বিভিন্ন এ্যাপস। সাতই মার্চের ভাষণটি এখন স্মার্ট ফোনেই শুনছে তরুণ প্রজন্ম। দেশ-বিদেশের কোটি কোটি তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও দর্শন সহজে পৌঁছে দিতে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামে মোবাইল এ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষা। এতে সংযুক্ত রয়েছে রঙিন ভিডিওচিত্র। বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়া ভাষাটির অডিও ভিডিও সংস্করণ মিলছে এ্যাপসে। ভাষণটি ১২টি ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশিত ‘পয়েন্ট অব পলিটিক্স’ গ্রন্থটিও ই-বুকে পড়া যাবে। এতে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, ভাষণ, সাক্ষাতকার, চিঠিপত্র, বঙ্গবন্ধু ফটো গ্যালারি, বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পাওয়া যাবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইউটিউবে রয়েছে নানা ভিডিও। মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার পাতায় রয়েছে আরও বৃত্তান্ত। পাওয়া যাবে বাঙালীর ইতিহাসও। বাঙালী জাতির উত্থান ও তার নেতা শেখ মুজিবকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার এই পদক্ষেপ এক বিরল অর্জন। জাতির পিতার আদর্শ সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার এই উদ্যোগটি অবশ্য প্রশংসনীয়।
শীর্ষ সংবাদ: