ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভিজিএফের চাল নিয়ে চালবাজি

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১৮ আগস্ট ২০১৮

 ভিজিএফের চাল নিয়ে চালবাজি

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জেলায় এবার ৪ লাখ ৪ হাজার ৩১৫ জন অসহায় দুস্থ মানুষের জন্য কার্ডপ্রতি ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে বর্তমান সরকার। এই চাল বিতরণে ছয় উপজেলায় ব্যাপক অনিয়ম আর কারসাজির অভিযোগ উঠেছে জেলা জুড়েই। অভিযোগ বেশ কিছু ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় চলছে চাল বিক্রি। মোট বরাদ্দের অর্ধেক কার্ডের চাল দুস্থ পরিবারের ভাগ্যে জুটবে কিনা এ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্যদের কার্ড বণ্টনে বঞ্চিত করা হয়েছে। এ নিয়ে নারী সদস্যদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল হতে রাত ৯টা পর্যন্ত ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ি ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে পাচারকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ উম্মে ফাতেমা ৮৮ বস্তায় চার দশমিক ৮ মেট্রিক চাল বস্তাসহ আটক করেছে। এর আগে ৯ আগস্ট রাতে ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী বাজারে ভিজিএফের ২৪৬ বস্তা চালসহ একটি ট্রাক্টর আটক করে স্থানীয় লোকজন। আটককৃত ওইসব চাল জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল ইউনিয়নের অসহায় দুস্থ মানুষের জন্য বরাদ্দ ছিল। এই চাল এখনও ডোমার থানায় পড়ে রয়েছে। এর ভবিষ্যত কি এ নিয়ে রহস্য থেকে গেছে। এদিকে জোড়াবাড়ি ইউনিয়নে অভিযানে ইউএনও পাচার করা ভিজিএফের চার দশমিক ৮ টন চালের মধ্যে উক্ত ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ আফজাল হোসেনের বাড়ির ঘর হতে ৬৫ বস্তা চাল উদ্ধার করে। এর মধ্যে ৫০ কেজি ওজনের ৪৬ বস্তা ও ৩০ কেজি ওজনের ১৯ বস্তা। এরপর মিরজাগঞ্জ স্টেশনপাড়া গ্রামে আলতাব হোসেনের গুদম ঘর হতে ৫০ কেজি ওজনের ৮ বস্তা ও ৩০ কেজি ওজনের ৬ বস্তা, ইউনিয়ন পরিষদ পাড়ার তরিকুল ইসলামের ভাড়া করা গুদাম হতে ৮০ কেজি ওজনের ৬ বস্তা ও ৫০ কেজি ওজনের ৩ বস্তা চাল উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে ভিজিএফের চাল বিতরণের অভিযোগে জোড়াবাড়ি ইউনিয়নের গুদাম ঘর সিল করে দেয়া হয়। অপর দিকে সৈয়দপুর উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নের চাল বিতরণে অনিয়ম করা হচ্ছে কৌশলে। ভিজিএফ কার্ড বিতরণের সময় চাল পেলে অর্ধেক (১০ কেজি) এ শর্তে কার্ড দেয়া হয়েছে অনেককে। বৃহস্পতিবার চাল বিতরণে ২০ কেজির পরিবর্তে অর্ধেক চাল দেয়ার অভিযোগে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বজলুর রশীদ সরেজমিনে গিয়ে তা হাতে নাতে ধরে ফেলেন। এরপর কম পাওয়া ওই কার্ডধারীদের তার প্রাপ্য ২০ কেজি করে চাল প্রদানে বাধ্য করায় জনপ্রতিনিধিদের। ডিমলা উপজেলার সদর ইউনিয়নে এই জেলার সকল ইউনিয়নকে ছাড়িয়ে সব থেকে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়। এলাকাবাসী জানায় ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নসমূহে কম বরাদ্দ দিয়ে ডিমলা সদর ইউনিয়নে ভিজিএফের কার্ড বরাদ্দ দেয়া হয় ১০ হাজার ৮০০। তিনি ইউপি সদস্য ও নারী সদস্যদের বঞ্চিত করে কার্ড বণ্টন করেন। বিশেষ করে নারী সদস্যদের করা হয় বেশি বঞ্চিত। একাধিক সূত্র মতে, ইউনিয়ন পরিষদের মিটিং করে রেজুলেস করে চেয়ারম্যানের নিজের অংশ ও ওয়ার্ড অনুযায়ী ৯টি ওয়ার্ডে ইউপি সদস্যদের মধ্যে কার্ড ভাগ করে দেয়। সূত্র মতে, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এক হাজার ২০০ কার্ড ও বাকি ওয়ার্ডগুলোতে গড়ে ৯০০ করে কার্ড দেন ইউপি চেয়ারম্যান। তবে সংরক্ষিত তিনটি ওয়ার্ডের নারী সদস্যদের ভাগে কোন কার্ড দেয়া হয়নি। কিন্তু ৯টি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যদের মোট ভাগের কার্ড হতে ২১টি করে কর্তন করে ১৮৯টি কার্ড নিয়ে তিন নারী সদস্যকে ৬৩টি করে কার্ড প্রদান করে! অথচ নিয়ম অনুযায়ী নারী সদস্যরা তাদের এক এক জনের তিনটি ওয়ার্ড অনুযায়ী পুরুষ সদস্যদের চেয়ে বেশি কার্ড পাওয়ার কথা। তারা ৬৩টি করে কার্ড পাওয়ায় জনরোষে পড়েছে।
×