ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভিন্ন নামে সক্রিয় হওয়ার তৎপরতা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪১ এনজিওর কার্যক্রম নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ১৮ আগস্ট ২০১৮

  রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪১ এনজিওর কার্যক্রম নিষিদ্ধ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪১টি এনজিওর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় খুশি হয়েছেন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা। একটু দেরিতে হলেও সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করায় জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সাধুবাদ জানিয়েছেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোকে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিছু সংখ্যক এনজিওর কার্যক্রম সন্দেহজনক বলে কিছুদিন ধরে চলে আসছিল বিভিন্ন কানাঘুষা। ওসব এনজিও কর্মীরা তাদের চাকরি দীর্ঘায়িত করা এবং রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের দোহাই তুলে বিদেশী অর্থ এনে সিংহভাগ আত্মসাত করতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছে। সহজে প্রত্যাবাসন না হওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের মধ্যে ছড়িয়েছে বিভিন্ন উস্কানি। এমনকি এনজিও কর্মীরা আড়ালে থেকে বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দিয়েছে ডিজিটাল ফেস্টুন ও ব্যানার। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীদের প্রেরিত রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রশাসন ইতোপূর্বে বহু ফেস্টুন-ব্যানার জব্দ এবং একাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে। এ ছাড়াও দেশের প্রচলিত আইন উপেক্ষা করে কতিপয় এনজিও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করতে উখিয়া টেকনাফে নির্বিচারে অসংখ্য পাহাড়-টিলা কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করেছে। সচেতন মহল অভিযোগ করে বলেন, মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি দেখাতে ওই এনজিও কর্মীরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে ক্যাম্প অভ্যন্তরে সরকারের সিদ্ধান্তবিরোধী নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। যাতে রোহিঙ্গারা সহসা স্বদেশে ফিরে না যায়, এ জন্য রোহিঙ্গাদের মধ্যে ইন্ধন যুগিয়েছে ওই এনজিও কর্মীরা। বিভিন্ন এনজিওর উস্কানি পেয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এক শ্রেণীর উচ্ছৃঙ্খল যুবক সন্ত্রাসী কায়দায় নিরীহ রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে রেখেছে। স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে কেউ ফিরে যাবার আগ্রহ দেখানোর পর ওসব রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা। কতিপয় এনজিওর ইন্ধনে রোহিঙ্গা শিবিরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা জঙ্গীরা। বিশেষ করে এনজিওর নাম দিয়ে রোহিঙ্গাদের সেবা করার নামে পুরনো রোহিঙ্গা জঙ্গীরা ক্যাম্প অভ্যন্তরে অবাধ যাতায়াত করার সুযোগ পেয়ে তাদের নিয়োজিত সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ আশ্রিত রোহিঙ্গারা। এ দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আপত্তিসহ এনজিওব্যুরোর নিষেধাজ্ঞার খবর পেয়ে কিছু কিছু এনজিও দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিষিদ্ধ একাধিক এনজিও ভিন্ন নামে হলেও সক্রিয় হওয়ার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের স্রোতের পর থেকে প্রতিদিন কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে বিভিন্ন এনজিওর হাজারো গাড়ি চলাচলের কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে স্থানীয়রা। কর্মজীবী ব্যক্তিরা বলেন, টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে পৌঁছাতে যেখানে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগার কথা, সেখানে পাঁচ ঘণ্টায়ও গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো যায় না। রোহিঙ্গা শিবিরে দায়িত্বরত সন্দেহভাজন ওসব এনজিওর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় এবার কিছুটা হলেও স্থানীয়রা হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারবে বলে জানিয়েছেন তারা। সূত্র জানায়, উখিয়া টেকনাফ এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দেশীবিদেশী ১০৫টি এনজিও কাজ করছে। এ ছাড়াও নাম সর্বস্ব কিছু এনজিও কর্মীদের রোহিঙ্গা সেবার নামে ক্যাম্প অভ্যন্তরে ঘুরাঘুরি করতে দেখা যায়। এদের অনেকে এনজিওব্যুরোর নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে রোহিঙ্গাদের সেবার নামে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করে চলেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এনজিও ব্যুরো এবং জেলা প্রশাসনের তালিকায় পাল্স বাংলাদেশ নামে কোন এনজিওর নাম নেই। অথচ রহস্যজনক কারণে ওই এনজিওটি কোটি কোটি টাকা ছাড় করিয়ে নিচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে। সূত্র আরও জানায়, এ ধরনের বেসরকারী বহু সংস্থা-ফাউন্ডেশন এনজিওব্যুরোর রেজিস্ট্রেশন না নিয়ে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে। নিষিদ্ধ ঘোষিত এনজিওগুলোর মধ্যে রয়েছে- অগ্রযাত্রা, পাল্স, শাহবাগ জামেয়া মাদানিয়া কাসিমুল উলুম অরফানেজ, ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট ফর সোশ্যাল এ্যান্ড হিউম্যান এ্যাফেয়ার্স, লিডার্স, এতিম ট্রাস্ট ফাউন্ডেশন, নেটওয়ার্ক ফর ইউনিভার্সাল সার্ভিসেস এ্যান্ড রুরাল এ্যাডভান্সমেন্ট, মুক্তি, আল্লামা আবুল খায়ের ফাউন্ডেশন, ঘরনী, এসডবিউএবি, ন্যাকম, এফডিএসআর, হিউম্যান এইড এ্যান্ড রিলিফ অর্গানাইজেশন, ফ্রেন্ডশিপ, এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ, আল মারকাজুল ইসলাম, ক্যাপ আনামুর, টেকনিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্স ইনকর্পোরেশন, গরীব, স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ, ঢাকা আহ্মিশন, গ্রামীণ কল্যাণ, ইউনাইটেড সোশ্যাল এ্যাডভান্সমেন্ট, ব্যুরো-বাংলাদেশ, এসএআর, আসিয়াব, এসিএলএবি, জমজম বাংলাদেশ, আমান, ওব্যাট হেলপার্স, হেল্প কক্সবাজার, লোকাল এ্যাডুকেশন এ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, এ্যাসোসিয়েশন অব জোনাল এপ্রোচ ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিশ ও হোপ ফাউন্ডেশন।
×