ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৃক্ষপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধা তাহের মাসুদ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৮ আগস্ট ২০১৮

বৃক্ষপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধা তাহের মাসুদ

আলহাজ ডাঃ মুহাম্মদ আবু তাহের মাসুদ। তিনি ১৯৭১ সালের একজন মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে মুগ্ধ হয়ে দেশমাতৃকার টানে স্বাধিকার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন এই বীরসেনানি। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভান্ডার গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের কৃতী সন্তান তিনি। তাঁর পিতার নাম মরহুম মুহাম্মদ আবদুল ওহাব সওদাগর। স্থানীয় তালুকদার আশরাফ আলী সওদাগর বাড়িতে ১৯৫৪ সালের ২৪ নবেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা। পেশায় তিনি একজন চৌকস চিকিৎসক হলেও এখন অবসর সময় পার করছেন। ডা. আবু তাহের মাসুদের স্ত্রী একজন সফল নারী। ফটিকছড়ি উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং অন্তত আড়াই যুগ ধরে নানুপুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য। তাঁদের দাম্পত্য জীবন বেশ সুখী। তাঁদের দুই ছেলে, দুই মেয়ে। বড় ছেলে আরমান আল মাসুদ বাংলাদেশ পুলিশের সিনিয়র এএসপি হিসেবে কর্মরত আছেন। তাঁর বর্তমান কর্মস্থল জাতিসংঘ মিশনের আওতায় হাইতি। ছোট ছেলে মামুন আল মাসুদ বিসিএস, অনার্স-মাস্টার্স। তিনি একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। তাহের-রাজিয়া দম্পতির বড় মেয়ে মোনতাসির মাসুদ সুমি মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউ.এন.ও) হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট মেয়ে তামান্না তাসনিম মাসুদ রুমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন। নিজের সন্তানেরা যেমন উচ্চ শিক্ষিত, তেমনি তাঁদের পুত্রবধূ এবং জামাতাও উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বড় ছেলে পুলিশের সিনিয়র এএসপি আরমান আল মাসুদের স্ত্রী সিমন আফরোজ মনি মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠান ‘রবি’ এর প্রধান কার্যালয়ে আইটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে মামুন আল মাসুদের (বিসিএস, অনার্স-মাস্টার্স) স্ত্রী সাদিয়া শারমিন (অনার্স-মাস্টার্স) নিজেও একজন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। মেয়ে ইউএনও মোনতাসির মাসুদ সুমির স্বামী সরোয়ার সাজ্জাদ চৌধুরী (এমবিএ) দেশের প্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র কর্মকর্তা। মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের মাসুদের স্ত্রী রাজিয়া মাসুদ রত্নগর্ভা হিসেবে বিভাগীয় পর্যায়ে সম্প্রতি ‘শ্রেষ্ঠ রত্নগর্ভা’ পদক পেয়েছেন। পুরষ্কারটি বিতরণ করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান। বলতে গেলে, শুধু চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বাংলাদেশের একটি আলোকিত পরিবারের অভিভাবক হচ্ছেন ডা. আবু তাহের মাসুদ। এ আলোকিত পরিবারটির উদ্যোগে এবার নেয়া হয়েছে অভিনব কর্মসূচী। মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের মাসুদ ব্যক্তিগত অর্থে ফটিকছড়ি, হাটহাজারীর শতাধিক প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার চারা বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ১১ আগস্ট চারা বিতরণ কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন উক্ত বিদ্যালয়ের সভাপতি ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মুহাম্মদ মাঈনুদ্দীন। এ সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবু তাহের মাসুদের সহধর্মিণী রাজিয়া মাসুদ উপস্থিত ছিলেন। উক্ত বিদ্যালয়ে ফলজ, বনজ ও ঔষধীসহ নানা প্রজাতির প্রায় ২ হাজার চারা বিতরণ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের মাসুদ পরিচালিত চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের নাজিরহাট নতুন ব্রিজ সংলগ্ন ‘মাইজভান্ডারী নার্সারী’ থেকে এ চারাগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। এসব চারার মধ্যে রয়েছে, আম, লিচু, পেয়ারা, মালটা, লেবু, কাঁঠাল প্রভৃতি। এ চারাগুলো কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, সামাজিক সংগঠনে প্রদান করা হচ্ছে। বাজারমূল্যে ১০/১২ লাখ টাকার চারা বিতরণ করা হবে বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা তাহের মাসুদ। উপজেলার মাইজভান্ডার গ্রামের তালুকদার আশরাফ আলী সওদাগর বাড়ির ৪ তলা বিশিষ্ট নিজস্ব বাসভবনের ছাদে বৃক্ষপ্রেমী আবু তাহের মাসুদ গড়ে তুলেছেন ছাদ-বাগান। উক্ত বাগানে দেশী-বিদেশী নানা প্রজাতির ফল ও ফুল গাছের পাশাপাশি ঔষধী গাছের ব্যাপক সমাহার। এছাড়াও, বনবিট বিভাগের সঙ্গে যৌথভাবে উপজেলার খিরাম ইউনিয়নের খিরামে গড়ে তুলেছেন বিশাল একটি বাগান। উক্ত বাগানে বনজ, ঔষধী ও ফলজ বৃক্ষ রয়েছে। চারা বিতরণের বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ ডা. মুহাম্মদ আবু তাহের মাসুদ বলেন, স্বার্থহীনভাবে আমি চারাগুলো বিতরণ করছি। এসব চারা রোপণের পর সর্বোচ্চ ১ বছর পরিচার্য করলে ফল, ফুল, সর্বোপরি উপকারিতা ভোগ করা সম্ভব হবে। বৃক্ষ আমাদের ফল, ফুল, জ্বালানি, আসবাবপত্রের চাহিদাই কেবল পূরণ করে না, প্রাণবন্ত নিশ্বাস নেয়ার ক্ষেত্রে বৃক্ষের অবদান তুলনাহীন। এ দেশকে সবুজে রূপান্তরিত করতে হলে বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। আজকাল যে পরিমাণ বৃক্ষ নিধন হচ্ছে, সে তুলনায় বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে না। তাই আমার অনুরোধ, পরিত্যক্ত জায়গায় বৃক্ষরোপণ করুন। জায়গা না থাকলে বাড়ির ছাদে গড়ে তুলুন ‘ছাদ-বাগান’। -ইউনুস মিয়া, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম থেকে
×