ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফুরসত নেই মাদুরপল্লীর গৃহবধূদের

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৮ আগস্ট ২০১৮

 ফুরসত নেই মাদুরপল্লীর গৃহবধূদের

দুই কন্যা আর এক পুত্র নিয়ে সংসার গীতা রানীর। স্বামী রতন কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। স্বামীর একার আয়ে অভাব দূর হয় না সংসারের। সারা বছরই চলে আর্থিক টানাপোড়েন। এ টানাপোড়েন থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে থাকেন গীতা রানী। এক সময় পেয়ে যান সে পথের সন্ধান। প্রতিবেশী এক ভাবির কাছ থেকে শিখে নেন মাদুর বুনন। মাদুর বুনেই বাড়তি আয়ের মাধ্যমে অভাবী সংসারে সচ্ছলতা আনেন গীতা রানী। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের ধনজইল গ্রামের গৃহবধূ গীতা রানী এভাবেই শোনালেন, তার সংসারে সচ্ছলতা আসার কাহিনী। শুধু গীতা রানীই নন, ওই গামের ধ্রুপদী, সেতু রানী, কল্যাণীসহ শতাধিক গৃহবধূ মাদুর বুনে সংসারে এনেছেন সচ্ছলতা। গীতা রানী জানান, আগে অভাবের কারণে সংসার ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে অনেক কষ্ট হতো। মাদুর বোনা শুরু করার পর স্বামীর আয়ের পাশাপাশি মাদুর বোনা আয়ে সচ্ছলভাবেই চলছে সংসার। সাংসারিক কাজকর্মের পাশাপাশি মাদুর বুনে বাড়তি আয় করায় সংসারে এসব গৃহবধূর গুরুত্ব ও মর্যাদা বেড়েছে। সম্প্রতি ধনজইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের উত্তর পাশে বসবাসকারী গৃহবধূরা মাদুর বুননে ব্যস্ত। এ গ্রামের শতাধিক গৃহবধূ মাদুর বুননের সঙ্গে জড়িত বলে জানালেন ওই গ্রামের বৃদ্ধ কুড়ানু দেবনাথ। এসব পরিবারের মধ্যে বেশিরভাগই হিন্দু পরিবার। কয়েকটি মুসলমান পরিবারও রয়েছে এখানে। তারাও মাদুর বোনার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে। এখানকার কারও কারও মূল পেশাই মাদুর তৈরি ও বিক্রি করা। আবার কেউ কেউ সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য মাদুর বুনছেন। মাদুর তৈরির সঙ্গে জড়িত রাধা রানী জানান, তাদের নিজের তেমন জমি নেই। মাদুর তৈরি ও বিক্রি করে তাদের সংসার চলে। আগে লাভ বেশি হতো। এখন মাদুর তৈরির পাতি ও দড়ির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ কম হচ্ছে। মাদুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মিঠু দেবনাথ জানান, আগে রানীনগর উপজেলার ত্রিমোহনীহাট থেকে পাতি এনে মাদুর বুনতে হতো। এখন স্থানীয়ভাবে স্বল্প পরিসরে পাতি চাষ শুরু হয়েছে। একটি মাদুর তৈরিতে পাতি বাবদ ৩০ টাকা ও দড়ি বাবদ ২০ টাকা খরচ হিসেবে একটি মাদুর তৈরিতে ৫০ টাকা খরচ হয়। বিক্রি হয় ১শ’ থেকে ১২০ টাকায়। এতে একটি মাদুর তৈরি করে ৫০ থেকে ৭০ টাকা লাভ পাওয়া যায়। একজন নারী কারিগর দিনে তিন থেকে চারটি মাদুর তৈরি করতে পারেন। এখানে এতটুকু ফুরসত নেই মাদুর পল্লীর গৃহবধূদের। বাড়তি আয়ের নেশায় বুনতে থাকেন একের পর এক মাদুর। -বিশ্বজিৎ মণি, নওগাঁ থেকে
×