ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৮ আগস্ট ২০১৮

ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ

নদী, হাওড়-বাঁওড়, খাল-বিলে মুক্ত জলাশয়ে মাছ চাষের পর এবার মনিরামপুরে মুক্ত জলাশয়ে ভাসমান খাঁচায় নতুন প্রযুক্তিতে মাছ চাষ হচ্ছে। মৎস্য অধিদফতরের অর্থায়নে এবং উপজেলা মৎস্য অফিসের বাস্তবায়নে ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় এই চাষ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কোমলপুর মালোপাড়া-সংলগ্ন ঝাঁপা বাঁওড়ে ১০টি ভাসমান খাঁচায় মনোসেক্স তেলাপিয়া চাষ করা হচ্ছে। উপজেলা মৎস্য অফিস এটিকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নিয়েছে। আর এই প্রক্রিয়ায় মাছ চাষকে লাভজনক হিসেবে দেখছেন চাষিরা। উপজেলা মৎস্য অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, ইউনিয়ন পর্যায়ে মাছ চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় মনিরামপুরের ঝাঁপা বাঁওড়ের ১৪২ জন মৎস্যচাষীর মধ্যে ২০ জনকে নিয়ে একটি দল গঠন করা হয়েছে। দলটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাঁওড়ে দশটি ভাসমান খাঁচা স্থাপন করে প্রাথমিক পর্যায়ে খাঁচাপ্রতি ১৫ কেজি করে ১৫০ কেজি মাছ ছাড়া হয়েছে। যেখানে প্রতি খাঁচায় মাছ রয়েছে ২৮০টি। ক্রমে খাঁচাপ্রতি এক হাজার মনোসেক্স তেলাপিয়ার পোনা অবমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এই চাষ শুরু হয়েছে। একইভাবে খাঁটুরা বাঁওড়ে আরও একটি প্রকল্প তৈরির কাজ চলমান রয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। খাঁচা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে লোহার পাইপ, প্লাস্টিকের ড্রাম, নেট ও বাঁশ। খাঁচা তৈরি, পোনা অবমুক্তিকরণ এবং খাবার সরবরাহসহ প্রকল্পপ্রতি দুই লাখ টাকা খরচ দেবে সরকার। এর অতিরিক্ত খরচ হলে তা বহন করবেন বাঁওড়ের সুবিধাভোগী চাষিরা। মাছের পোনা ছাড়া থেকে শুরু করে ৯০ দিন পরে মাছ ধরা হবে। প্রতিটি খাঁচায় ৪০০ কেজি করে একটি প্রকল্প থেকে মোঁ চার হাজার কেজি মাছ উৎপন্ন হবে বলে ধারণা মৎস্য অফিসের। যা বিক্রি করে পুরো টাকা পাবেন সংশ্লিষ্ট চাষিরা। সম্প্রতি ঝাঁপা বাঁওড়ে গিয়ে দেখা গেছে, জয়ন্ত বিশ্বাস নামে এক চাষি ভাসমান খাঁচায় চাষ করা মাছের পরিচর্যা করছেন। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে। জয়ন্ত বিশ্বাস ওই প্রকল্পের একজন সদস্য। তিনি বলেন, ‘বাঁওড়ের সোনার বাংলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ২০ জন সদস্য নিয়ে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষের এই প্রকল্পটি শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে দশটি খাঁচায় ১৫০ কেজি মাছ ছাড়া হয়েছে। স্যাররা সব খরচ দিয়ে এই প্রকল্প তৈরি করেছেন। প্রকল্পে ২০ জনের নাম থাকলেও মাছের খাবার দেওয়াসহ খাঁচাগুলো দেখভালের দায়িত্ব আমার ওপর।’ জয়ন্ত বলেন, ‘এভাবে পরিচর্যা করা হবে ৯০ দিন। তখন প্রতিটি মাছের ওজন হবে ৪০০-৫০০ গ্রাম। আর এখান থেকে যা লাভ হবে, তার পুরোটাই পাবে বাঁওড়ের সব জেলে।’ মনিরামপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎকুমার দেব বলেন, ‘ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করতে হলে সাধারণত সারা বছর পানি থাকে এমন নদ-নদী, হাওড়-বাঁওড়ের উন্মুক্ত জলাশয় প্রয়োজন হয়। গত জুনে এই প্রকল্পের অর্থায়ন করা হয়েছে। আমরা ঝাঁপা ও খাঁটুরা বাঁওড়ের প্রকল্প দুটিকে পাইলট হিসেবে দেখছি। ক্রমান্বয়ে পদ্ধতিটি উপজেলার খাজুরা, খেদাপাড়া, হরিহরনগরসহ বিভিন্ন মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।’ -সাজেদ রহমান, যশোর থেকে
×