ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাফ অনুর্ধ-১৫ চ্যাম্পিয়ন্সশিপের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত

আজও শিরোপা উৎসবের দিন মারিয়াদের?

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৮ আগস্ট ২০১৮

আজও শিরোপা উৎসবের দিন মারিয়াদের?

রুমেল খান ॥ ‘অমানিশা ভেবে পাই না কূল-/পাবো কী জিনিসটা?/নাকি পাবোই না?/যদি পাই, পেলে কবে?/কিভাবে, কেমন করে?/হিমেল হাওয়ায় রিক্ততার সুরে/চলছি সবাই কোন সে বনে?/ভ্রমরের গুঞ্জন, পাখির কলতান,/রিক্তপবনের দোলা নিকুঞ্জ পটতলে,/গোধূলির মেঘ-সীমানায়/কিরণমালী কি ছড়াবে কিরণ, শিল্পসত্ত্বা দিয়ে!’ ... উদ্ভাসিত নৈপুণ্যের আলো ছড়িয়ে, মেধার সর্বোচ্চ বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে আজ কী বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৫ জাতীয় নারী ফুটবল দল সাফল্যের মুকুটে যোগ করতে পারবে আরেকটি পালক? দ্রোণাচার্য গোলাম রব্বানী ছোটন কী পারবেন তার কোচিং ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সাফল্য কুড়িয়ে নিতে? অধিনায়ক মারিয়া মান্দা কী পারবে তৃতীয়বারের মতো সুদৃশ্য ট্রফিতে চুমু খেতে? তাহলেই যে সাফ অনুর্ধ-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা অক্ষুণœ রাখতে পারবে বাংলার বাঘিনীরা। এই সফলতার জন্য আজ হাইভোল্টেজ ফাইনালে ভারতকে হারাতে হবে বাংলাদেশের। সন্ধ্যা ৭টায় যে খেলাটি শুরু হবে ভুটানের থিম্পুর চাংলিথিমাং স্টেডিয়ামে। সিনিয়র পর্যায়ে না পারলেও বয়সভিত্তিক ফুটবলে গত তিন বছর ধরে শক্তিশালী ভারতকে নিয়মিতভাবেই (চারবার) হারের স্বাদ উপহার দিচ্ছে বেঙ্গল টাইগ্রেস দল। ২০১৫ এএফসি অনুর্ধ-১৪ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে দু’বার হারিয়েছিল বাংলাদেশ (গ্রুপপর্বে ৩-১ এবং ফাইনালে ৪-০ গোলে)। ২০১৭ সালে সাফ অনুর্ধ-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপেও তাই (৩-০ এবং ১-০)। এবারও তার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারলে জয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫-এ। এই আসরে গ্রুপপর্বে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ১৪-০, নেপালকে ৩-০ এবং সেমিতে ভুটানকে ৫-০ গোলে হারায়। পক্ষান্তরে ভারত গ্রুপপর্বে শ্রীলঙ্কাকে ১২-০, ১-০ গোলে ভুটানকে এবং সেমিতে নেপালকে ২-১ গোলে হারায়। এই আসরে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ২২ গোল করার পাশাপাশি একমাত্র দল হিসেবে এখনও কোন গোল হজম করেনি। ভারতের গোল ১৫টি, খেয়েছে ১ গোল। দুই ফাইনালিস্ট দলের তিন স্ট্রাইকারের মধ্যে চলছে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার লড়াই। চারটি করে গোল করেছে বাংলাদেশের তহুরা খাতুন ও শামসুন্নাহার জুনিয়র এবং ভারতের সিল্কি দেবী। ফাইনালের আগে জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমরা খেলেছি সেমির দ্বিতীয় ম্যাচটি। এর আগে সেমির প্রথম ম্যাচটিও মাঠে বসে দেখেছি। দেখলাম ভারতের খেলার ধরন। এর আগেও অবশ্য তাদের খেলা দেখেছি। ফাইনালে তারাই আমাদের প্রতিপক্ষ। শুধু বলব- আমাদের মেয়েরা যদি তাদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলে তাহলে জয় পেতে কোন অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।’ ছোটন আরও জানান, দলের সবাই ফিজিক্যালি-মেন্টালি ঠিক আছে। তবে মনিকা চাকমার পায়ে সামান্য ব্যথা। এ প্রসঙ্গে তার আশাবাদ, ‘ও কিছু না। আশাকরি সে ফাইনালে খেলতে পারবে।’ শুক্রবার দলকে সকালে শুধু একবেলা হাল্কা অনুশীলন (রিকভারি ট্রেনিং) করিয়েছেন ছোটন। ফাইনালের আগে দল যেন পুরোপুরি চাঙ্গা ও সতেজ থাকে, সেজন্য হার্ড ট্রেনিং করাননি। সেমিতে তহুরাকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেয়ার কারণ? ‘কোন ইনজুরিজনিত কারণ নয়। দলের জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় এবং ফাইনালের আগে যেন চোটমুক্ত থাকতে পারে সে জন্যই ওকে উঠিয়ে নেয়া।’ ছোটন খুব খুশি যে তার দলের ১০ খেলোয়াড় গোল করায়, ‘এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি গোল আমরাই করেছি এবং একমাত্র দল হিসেবে কোন গোল খাইনি। এ পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করেÑ আমরা গোল করার জন্য নির্দিষ্ট কারুর ওপর নির্ভরশীল নই এবং ডিফেন্স ঠিকমতোই খেলছে। তবে এই আত্মতৃপ্তি নিয়ে ফাইনালে খেললে সেটা হিতে বিপরীত হতে পারে।’ গত ডিসেম্বরে ঢাকায় যে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেই ভারতীয় দলে এবার অনেক নতুন খেলোয়াড় এসেছে। আগের নারী কোচ মায়মল রকিও আর নেই। তবে এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না ছোটন, ‘আমরা শুধু নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলেই চলবে।’ বয়সভিত্তিক ফুটবলে পঞ্চমবারের মতো ভারতকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ অনুর্ধ-১৫ আসরের শিরোপাটা নিজেদের করে নিতে পারে কি না গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যারা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
×