ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রমাণপত্র জমা দেয়ার পরও তালিকায় নাম নেই

অসম নাগরিকপঞ্জি ॥ পিতা ভারতীয়, পুত্র নন

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১৮ আগস্ট ২০১৮

  অসম নাগরিকপঞ্জি ॥ পিতা  ভারতীয়, পুত্র নন

ভারতের অসম রাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশী চিহ্নিত করতে যে নাগরিকপঞ্জি প্রস্তুত করা হচ্ছে সেখানে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে না থাকায় বা কাগজপত্রে ভুল তথ্য থাকায় অনেকে নাগরিকত্ব হারাতে বসেছেন। এমন একজন ৩৩ বছরের রিয়াজুল ইসলাম। তার দাবি, ১৯৫১ সালের আগে থেকে তার পরিবার অসমে বসবাস করছে এমন প্রমাণপত্র জমা দেয়ার পরও নাগরিক তালিকায় তার ও তার মায়ের জায়গা হয়নি। যদিও বাবা এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের নাম তালিকায় আছে। রিয়াজুল ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ভারতীয় প্রমাণ করতে তার বা তার মায়ের হাতে আর কোন কাগজ নেই। অসমের ছোট্ট শহর ধুবরিতে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘যদি আমার বাবা ভারতীয় নাগরিক হয় তবে আমি কেন নই? তাদের এর চেয়ে বেশি আর কি প্রমাণ চাই?’ প্রতিবেশী বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্য অসমে অনেক বাংলাদেশী অবৈধভাবে বসবাস করছে বলে দাবি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির। দুইবছর আগে বিজেপি অসমের ক্ষমতায় আসার পর অবৈধ বাংলাদেশীদের চিহ্নিত করে তাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে অসম ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এএনআরসি) প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়। তালিকায় জায়গা পেতে হলে অসমের বাসিন্দাদের ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে রাজ্যে আবাস গেড়েছেন এমন প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়েছে। মোট তিন কোটি ২৯ লাখ আবেদনকারীর মধ্যে এ বছর জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রথম তালিকায় মাত্র এক কোটি ৮০ লাখ মানুষের নাম ছিল। গত ৩০ জুলাই প্রকাশিত সংশোধিত তালিকায় দুই কোটি ৮৯ লাখ মানুষের নাম ঠাঁই হলেও বাকি প্রায় ৪০ লাখ মানুষের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। তাদের কেন বাদ দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। যদিও যাদের নাম নেই তারা আবারও যথাযথ প্রমাণ নিয়ে আপীল করার সুযোগ পাবেন বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু বাদ পড়াদের বেশিরভাগের অবস্থাই রিয়াজুল বা তার মা’র মতো। তাদের হাতে নাগরিকত্ব প্রমাণ হতে পারে এমন বড়াতি আর কোন কাগজপত্র নেই। নাগরিকপঞ্জির নামে অসমের সংখ্যালঘু বাঙালী বিশেষত মুসলিমদের ‘উইচ হান্টিং’য়ের শিকার হতে হবে বলে আশঙ্কা অনেক পর্যবেক্ষকের। খসড়া এ তালিকা ঘিরে ভারতের উত্তর পূর্ব রাজ্যটিতে সংঘাত ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কাও করা হচ্ছে। সর্বশেষ তালিকা থেকে বাদ পড়া বেশিরভাগই বাংলা ভাষী মুসলিম। অসমের অধিকাংশ মানুষ হিন্দু এবং তাদের ভাষা অসমিয়া। তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন এমন কয়েকজনের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তালিকা থেকে বাদ পড়া বেশিরভাগই দরিদ্র ও অশিক্ষিত। তাদের কেউ কেউ আবেদনপত্রে নামের বানান বা বয়স ভুল লেখার কারণে বাদ পড়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে জন্মসনদ গ্রহণ বা সংগ্রহ করার প্রবণতা অনেক কম। তারা স্কুলে যায় না বা বিয়ের সনদ সংগ্রহ করে না। এমনকি নামের বানান, পদবি বা নিজের বয়স নিয়েও তারা সচেতন নন বিধায় এখন তারা নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারছেন না বলে জানান স্থানীয় আইনজীবী আমান ওয়াদুদ। তিনি নিজে এ রকম শতাধিক মামলা দেখছেন। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ মুসলিমের পদবি নিয়ে ঝামেলা আছে। যেহেতু তারা অশিক্ষিত এবং পূর্বপুরুষের পদবি নিয়ে সচেতন নন তাই তারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই আলি, আহমেদ আর হুসাইন পদবি ব্যবহার করে।’
×