ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হবে না

যকৃতের চিকিৎসায় ক্যান্সারের ওষুধ ব্যবহারে সাফল্য

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১৮ আগস্ট ২০১৮

 যকৃতের চিকিৎসায় ক্যান্সারের ওষুধ ব্যবহারে সাফল্য

স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবদেহের যকৃতের রয়েছে নিজেকে সারিয়ে তোলার অসাধারণ ক্ষমতা। দরকারে সে নিজেকে মেরামত করে নেয়। কিন্তু আঘাত বা কোন ধরনের ওষুধ অপরিমিত মাত্রায় সেবনের কারণে অনেক সময় যকৃৎ হঠাৎ অকেজো বা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ক্যান্সারের ওষুধ যকৃতের এই পুনরুজ্জীবন ঘটাতে পারে। খবর বিবিসির। এডিনবার্গের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মানবদেহের লিভার বা যকৃৎ হঠাৎ অকেজো বা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেলে তা প্রতিস্থাপনের পরিবর্তে বরং ওষুধ দিয়ে সারিয়ে তোলা সম্ভব। তারা বলছেন, ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এমন একটি ওষুধ ইঁদুরের শরীরে ব্যবহার করে তারা সফল হয়েছেন। এটি দিয়ে যকৃতের নিজেকে সারিয়ে তোলার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। গবেষণাটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি পুরো সফল হলে যকৃৎ প্রতিস্থাপন না করে বরং ওষুধ দিয়ে বিকল্প যকৃৎ সারিয়ে তোলা যাবে। যার ফলে বিশাল খরচ, প্রতিস্থাপনের জন্য অঙ্গদানকারী অনুসন্ধান, লম্বা সময় ধরে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের তালিকায় ঝুলে থাকা এসব নানা জটিলতা থেকে একজন অসুস্থ ব্যক্তি মুক্তি পাবেন। প্রতিবছর ইংল্যান্ডে প্রায় দুই শ’ লোকের যকৎ অকেজো হয়ে হঠাৎ করে জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে ওঠে। গবেষকরা প্রথমে মানুষের যকৃতের ওপর কাজ করে বোঝার চেষ্টা করেছেন কেন হঠাৎ সেটি নিজেকে মেরামত করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তারা দেখলেন ভয়াবহ আঘাতে যকৃতে এক ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয় যাকে বলা যেতে পারে বার্ধক্যকে এগিয়ে আনা। মানবদেহের যখন বয়স হয়ে যায় তখন তার শরীরের কোষগুলো দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সেজন্য আর নতুন কোষ সৃষ্টি করতে পারে না। যার ফলে মানবদেহ নানা অঙ্গকে আর পুনরুজ্জীবিত বা সতেজ করতে পারে না। যে কারণে বুড়ো হয়ে যায় মানুষ। আঘাতের ফলে যকৃতের এই প্রক্রিয়া খুব দ্রুত বাড়ে এবং যকৃতের নিজেকে সারিয়ে তোলার ক্ষমতা আর কাজ করে না। যকৃত যেন হঠাৎ ভয়াবহ রকমের বুড়ো হয়ে যায়। এজন্য এক ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়া শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা এরপর ইঁদুরের ওপরে গবেষণা শুরু করেন। ল্যাবে ইঁদুরের শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ দেয়া হয় যা সাধারণত যকৃৎকে অকার্যকর করে দেয়। এরপর তারা এক ধরনের ক্যান্সারের ওষুধ ব্যবহার করে ইঁদুরের শরীরে ওই রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। গবেষকরা শীঘ্রই এই ওষুধ মানবদেহে পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করছেন। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণা সায়েন্স ট্রান্সলেশন মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে। এতে তারা দেখতে পেয়েছেন, এক ধরনের রাসায়নিক প্রক্রিয়া যকৃৎ অকেজো করে দেয়ার জন্য দায়ী। গবেষকরা পরে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা শুরু করেন। তারা এক ধরনের ক্যান্সারের ওষুধ ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেখতে পান সেটি রাসায়নিক প্রক্রিয়াটি বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। প্রাণীটিকে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ দেয়া হয় যাতে তার যকৃত অকেজো ও মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
×