ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

জন্মতিথিতে বহুমাত্রিক আয়োজনে সেলিম আল দীন স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১৮ আগস্ট ২০১৮

  জন্মতিথিতে বহুমাত্রিক আয়োজনে সেলিম আল দীন স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী বাংলা নাটকের অনন্য এক নাট্যকার সেলিম আল দীন। আজ শনিবার বাংলা নাট্যরীতির শেকড়সন্ধানী এই নাট্যকারের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী। শুক্রবার থেকেই তাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে জন্মদিন উদ্যাপনে বহুমাত্রিক আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয়। বরেণ্য এই নাট্যজনের জন্মতিথিতে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ঢাকা থিয়েটার। একইভাবে দুই দিনের ‘নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন জন্মোৎসব’-এর আয়োজন করেছে নাট্যদল স্বপ্নদল। শুক্রবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে সেলিম আল দীন স্মারক বক্তৃতার মাধ্যমে ঢাকা থিয়েটারের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ‘বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী নাট্যে গীতির প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক বক্তৃতায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউসুফ হাসান অর্ক। ঢাকা থিয়েটারের দলপ্রধান নাসির উদ্দীন ইউসুফের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন অভিনয়শিল্পী শিমুল ইউসুফ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজিদ, নাট্যকার সাধনা আহমেদ, জাহিদ রিপনসহ বিভিন্ন নাট্য সংগঠনের শিল্পীরা। মূল প্রবন্ধে ইউসুফ হাসান অর্ক বলেন, প্রাচীন গ্রিস থেকে শুরু করে রেঁনেসাস ইতালি ও ইউরোপসহ উনিশ-বিশ শতকের আমেরিকাতে পর্যন্ত গীতমূলক নানা থিয়েটার তথা মিউজিক্যাল থিয়েটারের দেখা পেয়েছি, যেগুলো গান-প্রধান। সেসব মিউজিক্যাল থিয়েটারের সঙ্গে এক সারিতে বিচার করলে মনে হয় বাংলা ঐতিহ্যবাহী নাট্যগুলো সেগুলো থেকে খানিকটা পৃথক ধরনের। কাজেই বাংলা ঐতিহ্যবাহী নাট্যগুলোর স্বকীয়তা বা স্বাতন্ত্র্য বিবেচনায় মিউজিক্যাল বা গীতল বললে এদের স্বকীয়তার প্রতি সুবিচার হয় না। তাই এই নাট্যগুলোর পরিবেশনাতে গীত প্রয়োগের বহুময়তাকে বাঙালির সাংস্কৃতিক প্রবণতা থেকে অনুধাবন করলেও একে বরং তার চেয়ে বেশি মাত্রায় ‘গীতসর্বস্ব’ হিসেবে বিবেচনা করতে হয়। বাংলাদেশের ঐতিহ্য নাট্যে ‘গীত’ নামক উপাদান কি কি ভাবে কার্যকর তার পুনর্বিবেচনা ও বিশ্লেষণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। স্পষ্ট করে বললে, নাট্যউদ্ভাস নির্মাণ, পরিবেশনা ও আঙ্গিকের পরিবাহন নানা পর্যায়ে ‘গীত’ কি কি রূপে ক্রিয়াশীল হয়ে এই নাট্য আঙ্গিকগুলোকে বিশেষায়িত করে তোলে তা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্যের স্বকীয়তার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য উদ্ঘাটন করা বক্ষ্যমাণ গবেষণাটির উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচ্য। সাধারণ অর্থে আমরা নাটকে সঙ্গীত বলতে যা বুঝে থাকি তা হলো এ্যারিস্টটল বর্ণিত ষড়ঙ্গ শিল্প ট্র্যাজেডির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সঙ্গীত। বাংলাদেশে লোকসঙ্গীত বা ধ্রুপদী সঙ্গীত-নৃত্য ইত্যাদি শিল্প গুরু-শিষ্য পরম্পরায় প্রবাহিত। সাধারণত গুরুগৃহে কিংবা কোন নির্দিষ্ট বিদ্যায়তনে শিষ্যকুল গুরুর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে গীত কিম্বা নৃত্য আত্মস্থ করেন। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্যের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অভিন্ন। স্মারক বক্তৃতা শেষে সন্ধ্যায় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় সেলিম আল দীন রচিত ঢাকা থিয়েটারের নাটক ধাবমান। প্রযোজনাটির নির্দেশনায় ছিলেন শিমুল ইউসুফ। আজ শনিবার সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেলিম আল দীনের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে ঢাকা থিয়েটার। এদিকে ‘সেলিম আল দীন সতত অনিবার্য রয়, বাঙলা নাট্যের শিল্পসুধা বিশ^ করবে জয়’ প্রতিপাদ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বপ্নদল আয়োজিত নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন জন্মোৎসবের সূচনা হয়। শিল্পকলার স্টুডিও থিয়েটারে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের জীবন-কর্ম-দর্শন নিয়ে আলোচনাসহ উৎসবের উদ্বোধন করেন নাট্যজন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. রফিকুজ্জামান এবং গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ। স্বাগত বক্তব্য দেন স্বপ্নদলের প্রধান সম্পাদক জাহিদ রিপন। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চস্থ হয় বাদল সরকারের রচনা অবলম্বনে জাহিদ রিপনের রূপান্তর ও নির্দেশনায় স্বপ্নদল প্রযোজনা ‘ত্রিংশ শতাব্দী’। আজ শনিবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা থেকে বাসযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা এবং ক্যাম্পাসের পুরাতন কলাভবন থেকে নাট্যাচার্যের সমাধি অভিমুখে স্মরণ-শোভাযাত্রা ও পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করবে স্বপ্নদল। এরপর সন্ধ্যায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারে মঞ্চস্থ হবে সেলিম আল দীন রচিত স্বপ্নদল প্রযোজনা ‘হরগজ’। ‘কেঁদে ফেরে শূন্য পাদুকা’ ॥ সড়ক দুর্ঘটনায় একের পর এক ঝরছে প্রাণ। মৃত্যু ঘটছে এক একটা স্বপ্নের। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ দুর্ঘটনার নামে এই হত্যাকা- চলে এলেও এর প্রতিকারে কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সচেতন করা যায়নি সাধারণ মানুষকেও। তাই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এবং মনুষ্য বিবেক জাগ্রত করতে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে উদীচী আয়োজন করে ‘কেঁদে ফেরে শূন্য পাদুকা’ শিরোনামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের জুতা প্রদর্শনী। এই জুতাগুলো এক সময়ে অফিসে গিয়েছে, স্কুলে গিয়েছে, মাঠে গিয়েছে। প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে, এই জুতাগুলো এখন কোথায় যাবে? বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনার শিকার ৪৬ জন মানুষের স্মৃতিসম্বলিত এসব জুতা প্রদর্শনের পাশাপাশি ছিল নিহতদের ছবি ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুর করুণ কাহিনীর বিবরণ। এর মধ্যে ছিল সিনেমাটোগ্রাফার ও সাংবাদিক মিশুক মুনীর-এর জুতাও। প্রদর্শনীতে উপস্থিত সাধারণ মানুষ অবিলম্বে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর দাবি জানান। বহু বর্ণে এক দ্রৌপদী ॥ ১৮ বছর আগে ঢাকার মহিলা সমিতি মঞ্চে নাট্যদল দেশ নাটকের নিত্যপুরাণ নাটকে দ্রৌপদী চরিত্রে হাজির হয়েছিলেন শিরিন খান মনি। ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চরিত্রটিতে আরও অভিনয় করেছেন নাজনীন হাসান চুমকি ও বন্যা মির্জা। বর্তমানে এ চরিত্র নিয়ে মঞ্চে এসেছেন সুষমা সরকার। এবার এই চার দ্রৌপদীকে মঞ্চে দেখা গেল একসঙ্গে। শুক্রবার ছুটির দিন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের দুটি প্রদর্শনী হয়। আর এ আয়োজনের শিরোনাম ছিল ‘বহু বর্ণে এক দ্রৌপদী’।
×