ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সব পর্যায়ের সরকারী হাসপাতালে বৈকালিক বহির্বিভাগ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ

বিকেলে ও রাতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের দেখা মেলে না, রোগীদের দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১৮ আগস্ট ২০১৮

 বিকেলে ও রাতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের দেখা মেলে না, রোগীদের দুর্ভোগ

নিখিল মানখিন ॥ সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা চিকিৎসকদের সান্ধ্যকালীন পরিদর্শন পান না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, বেলা তিনটার পর পরবর্তী সকাল দশটা পর্যন্ত সরকারী হাসপাতালে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মেলে না। বিকেলে ভর্তি হওয়া রোগীদের পরদিন চিকিৎসকদের সকালের পরিদর্শনের আগ পর্যন্ত চিকিৎসাহীন অবস্থায় থাকতে হয়। অনেক ডাকাডাকির পর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আগমন ঘটলেও রোগীর বিষয়ে প্রেসক্রিপশন প্রদানসহ তাৎক্ষণিক চিকিৎসার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না তারা। ফলে অবনতি ঘটলে অসহায় হয়ে পড়েন চিকিৎসাধীন রোগীরা। তবে সব পর্যায়ের সরকারী হাসপাতালে বৈকালিক বহির্বিভাগ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মেডিক্যাল কলেজ পর্যায়ের ১০টি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানে পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু হচ্ছে এ সেবা। এ প্রকল্পের সাফল্য পর্যালোচনা করে পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সব সরকারী হাসপাতালে এ কার্যক্রম চালু করা হবে। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গত জুলাই মাসে রাজধানীর শ্যামলীর পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বেলাল হোসেন (৩৫)। ১০ দিন থাকার পর হাসপাতাল ছাড়েন তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি বর্তমানে ফলোআপ করাচ্ছেন। ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় তার বাড়ি। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বেলা দু’টার পর আর চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায় না। রাতে সমস্যা বেড়ে গেলেও অনেক সময় রোগীর করার কিছুই থাকে না। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সিসিইউ ওয়ার্ডে ভর্তি হন মোঃ সবুর মিয়া (৪৫)। মধ্য বাড্ডার ২১/৭ হোল্ডিংয়ের বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। তার ছেলে মোঃ ইউসূফ (১৯) জনকণ্ঠকে জানান, গত ২ আগস্ট বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক দেখার পর তার পিতাকে ভর্তি করানো হয়। বেড খালি না থাকায় ওয়ার্ডের মেঝেতে জায়গা হয়। তার পিতার শারীরিক অবস্থা ভাল ছিল না। ভর্তি করিয়ে ওয়ার্ডে নেয়ার পর ওই দিন আর কোন চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। পরদিন সকাল সাড়ে ন’টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারা রোগীকে একটি বেসরকারী হাসপাতালে স্থানান্তর করেন বলে জানান মোঃ ইউসূফ। এমন আরেকটি ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গত ৮ আগস্ট সকাল সাড়ে আটটায় এই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১ নং ওয়ার্ডের (পুরুষ) ২৪ নং বেডে (অতিরিক্ত) ভর্তি হন মুকশেদ আলী সাইদ (৬৭)। তার ছেলে তুহিন আহমেদ সাইদ জনকণ্ঠকে জানান, ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানায় তাদের বাড়ি। তার পিতাকে ৮ আগস্ট সকালে ভর্তি করানোর পর দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক একবার দেখেছিলেন। রাত পর্যন্ত তারা আর কোন চিকিৎসকের দেখা পাননি। পরবর্তীতে বাঁচানোর প্রয়োজনে রোগীকে ৯ আগস্ট সকালে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তুহিন আহমেদ সাইদ। এভাবে দেশের অধিকাংশ সরকারী হাসপাতালেই বিকেলে ও রাতে চিকিৎসকের দেখা না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক সরকারী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে অনেক মানবিক চিন্তার চিকিৎসকও আছেন। অভিযোগ রয়েছে, কার্যদিবসে অনেক সরকারী মেডিক্যাল শিক্ষক বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কাজ করে থাকেন। দিনে নামমাত্র সময় দিয়ে থাকেন তারা। দেশের বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর সাইনবোর্ডে ছেঁয়ে গেছে সরকারী চিকিৎসকদের নাম। নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার পাশাপাশি সরকার হাসপাতালের রোগী নিজেদের চুক্তিবদ্ধ চিকিৎসালয়ে ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে অনেক সরকারী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক আদেশে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্য অধিদফতর ঢাকা বিভাগের নির্বাচিত সরকারী হাসপাতালে বৈকালিক বহির্বিভাগ সেবা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অধিদফতরের এক অফিস আদেশ থেকে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত বিভিন্ন পর্যায়ের ১০টি হাসপাতালে এই কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। এই ১০টি হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল, সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গাজীপুরের টঙ্গী ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে শুধু নিউরোসার্জারি, অর্থোপেডিক ও ইএনটি অন্তঃবিভাগে এ সেবা দেবে। অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব হাসপাতালে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা শুরু হবে। সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে মেডিসিন, সার্জারি, শিশু, গাইনি ও প্রসূতিসেবা প্রতিদিনই চালু রাখতে হবে।
×