ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এবার সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর ১৫৪ ট্যানারিতে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, মজুদ ও প্রক্রিয়াজাত করা হবে

কোরবানি সামনে রেখে চাঙ্গা চামড়া শিল্প খাত

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ১৮ আগস্ট ২০১৮

 কোরবানি সামনে রেখে চাঙ্গা চামড়া শিল্প খাত

এম শাহজাহান ॥ পরিবেশগত নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকার পরও এগিয়ে যাচ্ছে চামড়া শিল্প খাত। কোরবানি সামনে রেখে এ শিল্প খাতের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠছে। কাঁচা চামড়া সংগ্রহে ট্যানারিগুলোর যত প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন সব আয়োজন চলছে এখন পুরোদমে। সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর ১৫৪টি ট্যানারিতে এবার কাঁচা চামড়া সংগ্রহ, মজুদ ও প্রক্রিয়াজাত করা হবে। চামড়া কিনতে এ বছর এক হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। তবে চামড়া শিল্পনগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারে (সিইটিপি) নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। চারটির মধ্যে দুটি মডিউল চালু করা হয়েছে। রাস্তাঘাট সংস্কার ও অবকাঠামোগত কাজ এখনও চলমান রয়েছে। চামড়া বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে ধলেশ্বরী নদী। জানা গেছে, চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য রফতানি করে বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হচ্ছে। দ্বিতীয় প্রধান রফতানি খাত হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে চামড়া শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে বিনিয়োগ হয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও এ শিল্প খাত নিয়ে উৎসাহিত হয়ে উঠছেন। তবে মাঠ পর্যায়ে চামড়ার সঠিক দাম নিশ্চিত না হওয়ায় এ শিল্প খাতটি নিয়ে কিছু নেতিবচাক মন্তব্য রয়েছে দেশ ও দেশের বাইরে। বিদেশী ক্রেতারা চামড়ার সঠিক দাম পেতে কারখানা কম্পপ্লায়েন্সের তাগিদ দিচ্ছেন। কোরবানির সময় চামড়া নিয়ে যাতে কোন বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য আগাম দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে দাম কমানোর ফলে চামড়ার মূল্য নিয়ে সন্তুষ্ট নয় মাঠ পর্যায়ের বিক্রেতারা। এমনকি কোরবানি চামড়ার সুবিধাভোগীদেরও এ নিয়ে যথেষ্ট অসন্তোষ রয়েছে। জানা গেছে, চামড়া শিল্পনগরে চামড়ার উচ্ছিষ্ট, ঝিল্লি, চামড়ার টুকরা ইত্যাদি কঠিন বর্জ্য ফেলার জন্য ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণ করতে পারেনি বিসিক। গত বছর উৎপাদন শুরুর পর ট্যানারিগুলো ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য প্রায় পাঁচ একর জমিতে তৈরি করা বিশাল একটি পুকুরে বর্জ্য ফেলা শুরু করে। সেখানে গত বছর বিশাল একটি ভাগাড় তৈরি হয়েছে। এই ভাগাড়ের দেয়াল ভেঙ্গে অনেকবার বর্জ্য নদীতে গিয়ে পড়েছে। এছাড়া সিইটিপিতে রাসায়নিক যথাযথভাবে প্রয়োগ না করায় বর্জ্য পুরোপুরি পরিশোধিত হচ্ছে না। সেই পানি নদীতে ফেলা হচ্ছে। তৃতীয়ত, পাইপলাইন উপচে বর্জ্য বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের নালা দিয়ে আগের মতো নদীতে পড়ছে। এ প্রসঙ্গে সিইটিপি নির্মাণে পরামর্শক দলের প্রধান ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, চীনা ঠিকাদারি কোম্পানি প্রয়োজনীয় রাসায়নিক প্রয়োগ করছে না। এটা প্রয়োগ করলে প্রচুর পানি ডাম্পিং ইয়ার্ডের জায়গায় ফেলতে হবে। তখন আবার বাঁধ ভেঙ্গে বর্জ্য নদীতে যাবে। তিনি বলেন, ট্যানারির স্বার্থে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জরুরী হয়ে পড়ছে। কোরবানির সময় বেশিরভাগ চামড়া ট্যানারিগুলোতে প্রক্রিয়াকরণ শুরু হবে। এ কারণে জরুরী ভিত্তিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ঠিক করতে হবে। এদিকে, গত বছর কোরবানির সময় সাভারের ৬৮টি কারকাখায় ব্ল-ওয়েট চামড়া উৎপাদন করা হয়েছে। এবার ১৫৪টি ট্যানারিতে চামড়া উৎপাদনে কাজ করে যাচ্ছেন এ শিল্পের মালিকরা। চামড়া কিনতে হাজার কোটি টাকার ঋণ ॥ এ বছর কোরবানরি চামড়া কিনতে উদ্যোক্তাদের এক হাজার কোটি টাকার ঋণ দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। ইতোমধ্যে এই ঋণ বিতরণের কাজ শুরু করা হয়েছে। গত বছর চামড়া খাতে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেছিল ৭৩৫ কোটি টাকা। তবে এ বছর সোনালী ব্যাংক ১৫০ কোটি, জনতা ৩শ’ কোটি, অগ্রণী ৩৫০ কোটি ও রূপালী ব্যাংক ২শ’ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করবে। তবে যেসব ট্যানারি মালিক গত বছরের সব টাকা পরিশোধ করেছেন তাদের চাহিদা মতো ঋণ দেয়া হবে। এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ জানিয়েছেন, ট্যানারি মালিকদের আগের নেয়া ঋণ পরিশোধ করার পরই নতুন করে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তাই যে ট্যানারি যে পরিমাণ টাকা পরিশোধ করেছে তাকে ওই পরিমাণই ঋণ দেয়া হবে। সস্তায় কাঁচা চামড়া কেনার সুযোগ ॥ গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চামড়ার দাম কমানো হচ্ছে। এবার প্রতিবর্গফুটে ৫ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করায় সবচেয়ে সস্তায় চামড়া কেনার সুযোগ পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে চামড়া পাচারের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। তবে চামড়া যাতে পাচার না হয় সেজন্য সীমান্ত এলাকায় বিজিবির নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশের যেকোন স্থান থেকে ঢাকার সাভারে চামড়া আসতে পারবে তবে ট্রাকভর্তি চামড়া বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। চামড়ার দাম কমানোর ফলে সুবিধাভোগী বিশেষ করে গরির মানুষ কিছুটা বঞ্চিত হলেও ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের মুনাফা করতে যাচ্ছেন। বিশ্বের কোথাও এত কম দামে আর কাঁচা চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এতে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা হবে। গত বছর প্রতি বর্গফুটের দাম ছিল ঢাকায় ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এ ছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকায় সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। গতবার খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। দাম কমানো প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চামড়া খাত খারাপ পর্যায়ে আছে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে চামড়ার দাম কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।
×