ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদ সমাবেশে ওবায়দুল কাদের

ফখরুলের দেশ স্বাধীন করার আহ্বান রাষ্ট্র দ্রোহিতার শামিল

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৮ আগস্ট ২০১৮

   ফখরুলের দেশ স্বাধীন করার আহ্বান রাষ্ট্র দ্রোহিতার শামিল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আবার দেশকে স্বাধীন করতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আহ্বানকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘আমি প্রশ্ন রাখতে চাই এটা কি রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল নয়? এর যদি বিচার করতে হয়, ফখরুলকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিচার করলে কি ভূল হবে? এ ধরনের কথা বলেও ফখরুল ইসলাম এখনও ‘স্টিল নাও’ আছেন। এখনও আপনি এ্যারেস্টেড হননি, প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাষ্ট্রদ্রোহী কথা বলে।’ শুক্রবার সন্ধ্যায় গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ১৭ আগস্ট সারাদেশে সিরিজি বোমা হামলার প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোন স্বাধীনতা? পাকিস্তানে ইমরান সরকার এসেছে, মহা খুশি, না? মহা খুশি আপনারা। ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব, অচিরেই টের পাবেন কত ধানে কত চাল।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গোপন বৈঠক চলছে, দেশে বিদেশে ব্যাংকককে বসে বৈঠক চলছে। গত সাত দিনে কারা ঘনঘন যাতায়াত করছে, সেই খবর আমরা জানি। ব্যাংকককে এখন ঘাঁটি করেছে। কারা কারা আসছেন, কারা যাচ্ছেন কী কী কথা হচ্ছে মনে করেছেন আমরা জানি না। আমি পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই ঢাকা অচল হবে না। বাংলাদেশ অচল করা যাবে না, বিএনপি অচল হয়ে যাবে। বিএনপি অচল হওয়ার সব উপাদান তারা যুক্ত করে ফেলেছে। ১/১১ নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১/১১’র কথা বলেন, আমরা নাকি সেই ওয়ান ইলেভেনের কথা বলছি। আলমগীর সাহেব, ১/১১ এর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার সব ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন। খোঁজ-খবর আমরা নিচ্ছি, তবে এই কথা বলে রাখি বাংলাদেশে আর ১/১১ এর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না। জনগণ আপনাদের সব ধরনের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিবে। এই ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’ বিএনপির মুখের বিষ উগ্র হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিদেশীদের কাছে কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন, বড়বড় কথা বলছেন। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে, শরৎ বাবুর উপন্যাসে পড়েছিলাম মানুষের শক্তি যখন কমে আসে তখন মানুষের মুখের বিষ উগ্র হয়। মানুষের শক্তি যখন কমে আসে তখন তার মনের জোর কমে যায় গলার জোর বেড়ে যায়। বিএনপির অবস্থা কি তাই নয়? শক্তি যখন কমে আসছে তাই বিএনপির গলার জোর বেড়ে গেছে। কথা বলতে বলতে লাগাম ছাড়া হয়ে গেছে, প্রধানমন্ত্রীকেও আক্রমণ করে কথা বলছে।’ বিএনপি যতদিন আছে দেশে অশান্তির আগুন জ্বালাবে বলে মন্তব্য করেছেন ওবায়দুল কাদের। সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘আবার বলে বুকের ওপর দানব সরকার, আমরা বলি বিএনপি নামক সাম্প্রদায়িক দানব পার্টি বাংলাদেশে যতদিন থাকবে এখানে অশান্তি দূর হবে না। দানব পার্টি যতদিন আছে দেশে অশান্তির আগুন জ্বালাবে।’ তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে এই দানবীয় পার্টির হাত থেকে বাংলাদেশের জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উদ্ধার করতে হবে। অশুভ শক্তিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপসারণ করতে হবে। বিএনপি ও তার সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সব ধরনের ষড়যন্ত্রকে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে আপনারা প্রস্তুত? প্রস্তুত হন।’ কয়েকটি মিডিয়াতে সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছে বলেও দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘কারা কারা পেছন থেকে ষড়যন্ত্রে বাতাস দিচ্ছে আমরা জানি। এই বাতাস দেয়া বন্ধ করুন। বিএনপি মাঠে না থাকলেও দু-একটা মিডিয়ার মধ্যে এই আন্দোলন আছে। টার্গেট হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা। শেষ পর্যন্ত ইনশাল্লাহ বাংলার জনগণ রুখে দাঁড়াবে।’ মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। বিএনপি ওয়ান ইলেভেনের মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টির চক্রান্ত করছে ॥ এ দিকে শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শন ও ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশে মোটামুটি স্বস্তিদায়ক নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটা শান্তিময় পরিবেশ বিরাজ করছে। কিন্তু ওয়ান ইলেভেনের ন্যায় আবারও দেশকে ভয়ঙ্কর ও অস্থিতিশীল করার জন্য বিএনপি ও তার দোসররা উঠে পড়ে লেগেছে, চক্রান্ত করছে। এই ষড়যন্ত্রে মিডিয়ার একটি অংশ জড়িত আছে। এক-এগারোর সময়েও মিডিয়ার একটি অংশ সেই চেষ্টায় ছিল। তবে এবার সব বাধা উপেক্ষা করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথা সময়ই অনুষ্ঠিত হবে।’ সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, দেশের ব্যাপক উন্নয়নের ফলে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ওপর জনগণ খুশি। তারা বুঝে গেছে জনগণ উন্নয়নের দিকে রায় দেবে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আবারও রায় দেবে। এটা মেনে নিতে না পেরে বিএনপি ও তাদের দোসররা হুমকি সৃষ্টি করছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার যেভাবে নির্বাচনে যেতে যাচ্ছে শেষ পর্যন্ত যদি সেই ফরমেট থাকে তবে তারা নির্বাচনে যাবে না। তাহলে নির্বাচনে কি হতে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে সরকারের কোন পদ্ধতি নেই। পদ্ধতিটা আমাদের সংবিধানে। সংবিধানেই নির্ধারণ করে দিয়েছে কিভাবে নির্বাচন হবে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনার জন্য অর্পিত দায়িত্ব থাকবে নির্বাচন কমিশনের ওপর। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করতে নির্বাচন কমিশন যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের জন্য ৯০ শতাংশ প্রস্তুতি শেষ করেছেন বলে ঘোষণা করেছেন। আর লেভেল প্লেয়িংটা কিভাবে হবে তাও কিন্তু নির্বাচন কমিশনেরও দায়িত্ব। সরকার কিছু করবে না।’ আগামী নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির কোন অংশগ্রহণ থাকবে কী না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যখন সুযোগ ছিল তখন তারা আসেনি। তখন (গত নির্বাচনে) তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদটি পর্যন্ত আমরা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। এখন তো তাদের সংসদে প্রতিনিধিত্বই নেই। সেখানে তাদের নেয়ার সুযোগই নেই।’ নির্বাচনকালীন সরকারে টেকনোক্রেট কোটায় বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা আছে কী না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী আছেন, পেশাজীবী আছেন। আরও অনেকেই আছেন। সেখানে একটি দল থেকে কেন নিতে হবে? আর সেই চিন্তা সরকারের নেই।’ তিনি নির্বাচনকালীন সরকারের দল নিরপেক্ষ সদস্যদের রাখার ইঙ্গিত দিয়ে আরও বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারে রাজনীতি করেন না এমন প্রতিনিধিরা থাকতে পারেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার বিশ্বাস এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে। সব মিলিয়ে গত ঈদের চেয়েও এবারে ঈদ স্বস্তিদায়ক হবে। ঈদযাত্রায় এবার যাত্রীদের অভিযোগ কম পাওয়া যাচ্ছে বলেও দাবি করেন মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২৩টি সেতু উদ্বোধন করেছেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল পথে অন্যান্য সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনী রেল ওভারপাসের কারণে গত ঈদের সময় কিছুটা সমস্যা হয়েছিল, এটাও এবার খুলে দেয়া হয়েছে। তাই ঈদযাত্রা এবার স্বস্তিদায়ক হবে, সহনীয় হবে ভোগান্তি।’ মন্ত্রী জানান, ‘যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি বেশি ভাড়া নিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসা করেছি কোন কাউন্টার, সে বলল সিরাজগঞ্জের স্টারলাইন। সঙ্গে সঙ্গে এটা বন্ধ করে দিয়েছি।
×