ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের টানা দ্বিতীয় শিরোপার হাতছানি

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ১৮ আগস্ট ২০১৮

 বাংলাদেশের টানা দ্বিতীয় শিরোপার হাতছানি

জাহিদুল আলম জয় ॥ আরও একটি ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় গোটা জাতি। শোকের মাসে শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে সাফল্যের সোনারোদে ভাসিয়ে চলেছে দুরন্ত কিশোরীরা। শেষটা রাঙাতে পারলে এই কীর্তি সোনার হরফে লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়। এ লক্ষ্যেই সাফ অনুর্ধ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচে মাঠে নামছে বাংলাদেশের কিশোরীরা। ভুটানের রাজধানী থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে মারিয়া, তহুরা, আঁখিদের প্রতিপক্ষ ভারত। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের দুই জায়ান্টের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি শুরু হবে আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায়। ফাইনালের আগে একই ভেন্যুতে বিকেল ৪টায় তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে লড়বে নেপাল ও স্বাগতিক ভুটান। স্পষ্ট ফেবারিট হিসেবে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে নামছে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। গত বছর প্রথমবারের মতো এই আসর মাঠে গড়ানোর পর এখন পর্যন্ত খেলা সাতটি ম্যাচের প্রতিটিতেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশের কিশোরীরা। অবাক করা বিষয়, এই ম্যাচগুলোতে একটি গোলও হজম করতে হয়নি বাংলাদেশ গোলরক্ষক মাহমুদা আক্তারকে। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে শামসুন্নাহার, তহুরা, মারিয়ারা। এক টুর্নামেন্টে ভারতকে দু’বার হারানোর সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। গত বছরের ডিসেম্বরেই ঢাকার কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে গ্রুপপর্বে ৩-০ ও ফাইনালে ১-০ গোলে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলার দুরন্ত মেয়েরা। আট মাস আগের সেই তরতাজা স্মৃতি আজ ফাইনালে বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করছে। প্রথম আসরে যাদের হারিয়ে বিজয় কেতন উড়িয়েছিল বাংলার বাঘিনীরা, এবারও সেই একই প্রতিপক্ষ মুকুট ধরে রাখার মিশনে। পারফর্মেন্স ও পরিসংখ্যানের বিচারে এবার বাংলাদেশ দল আরও বেশি শক্তিশালী ও ব্যালেন্সড। এখন পর্যন্ত দুটি বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে ভারতকে চারবার হারানোর সুখস্মৃতি আছে। অন্যদিকে গত আসরের চেয়ে এবারের ভারতীয় দলকে কিছুটা দুর্বল দেখা গেছে। যে কারণে শিরোপা ধরে রাখতে হয়তো খুব বেশি বেগ পেতে হবে না বাংলাদেশের এই সোনালি প্রজন্মকে। দলের কোচ ও অধিনায়কের কথাতে সে সুরই মিলেছে। দু’জনের কেউই শিরোপা ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না। তাছাড়া ভারতীয় দলের কোচও বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখছেন। মুকুট ধরে রাখতে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। শিরোপা ছাড়া অন্য কোন ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফাইনালে আমরা আমাদের সামর্থ্যরে সবকুটু দিয়ে খেলব। যেন শিরোপা জিততে পারি। এই টুর্নামেন্ট খেলতে আসার আগে এটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। গ্রুপপর্ব ও সেমিফাইনালে আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলা খেলেছি। প্রত্যাশা মতো ফাইনালে এসেছি। এই টুর্নামেন্টের জন্য গত ৭ মাস নিয়মিত অনুশীলন করেছি। আশাকরি ট্রফি নিয়েই দেশে ফিরতে পারব।’ বাংলাদেশ দলের গোলপোস্ট অক্ষত রাখার দায়িত্ব গোলরক্ষক মাহমুদা আক্তারের কাঁধে। গতবারসহ এবারের আসর মিলিয়ে একটি গোলও হজম করতে হয়নি তাকে। ফাইনালেও এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রত্যয় মাহমুদার, ‘ভুটানের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে বড় ব্যবধানে জিতে ফাইনালে আসতে পেরে আমি খুবই খুশি। এখন আমাদের আরও ভাল খেলতে হবে। আমি আমার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করব যাতে ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে জয় পাই। গোলরক্ষক হিসেবে আমি আমাদের গোলপোস্ট অক্ষত রাখার চেষ্টা করব। যেমনটা আগের তিন ম্যাচে করেছি।’ এখন পর্যন্ত চারটি করে গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনজন। এর মধ্যেই দু’জনই বাংলাদেশের স্ট্রাইকারÑ শামসুন্নাহার জুনিয়র ও তহুরা খাতুন। ফাইনালেও তহুরা যত দ্রুত সম্ভব গোল করতে চায়, ‘আমরা ফাইনালে উঠেছি। এখন ভারতের বিপক্ষে আমাদের শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করব জেতার এবং চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। সাফ-২০১৮’র শিরোপা জেতাটা আমার স্বপ্ন। ফাইনালে আমি যত দ্রুত সম্ভব গোল করতে চাই। যেমনটা আগের তিন ম্যাচে বাংলাদেশ দলের হয়ে আমি করেছি।’ জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবনা নেই অধিনায়ক মারিয়া মান্দার। এ্যাটাকিং এই মিডফিল্ডার দুর্দান্ত খেলার পাশাপাশি চোখ ধাঁধানো তিনটি গোলও করেছে। ফাইনাল নিয়ে মারিয়ার মন্তব্য, ‘এটা আমাদের ফাইনাল ম্যাচ। আমরা প্রস্তুত। সবাই প্রতিজ্ঞা করেছি ফাইনালে নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলব। যেন ভারতের বিপক্ষে জয় পাই এবং শিরোপা জিততে পারি। ভারতকে শুরু থেকেই চাপে রেখে খেলার চেষ্টা করব এবং যত দ্রুত সম্ভব গোল আদায় করে নেব। যদিও ভারত ভাল দল এবং তাদের কয়েকজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ফাইনাল ম্যাচ জিতে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শিরোপা অক্ষুণœœ রেখে দেশে ফেরা।’ শুধু মারিয়া, মাহমুদা, তহুরা নয়, দলের প্রতিটি সদস্যই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ শিরোপা জিতে দেশে ফিরতে। ভারতীয় কোচ ফিরমিন ডিসুজাও এগিয়ে রাখছেন বাংলাদেশকে। ফাইনাল নিয়ে তার অভিমত, ‘বাংলাদেশ খুব ভাল ও গতিসম্পন্ন দল। আমরা আমাদের কৌশল নিয়ে খেলব। আশাকরি ম্যাচটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।’
×